Ajker Patrika

চট্টগ্রাম নগরীতে পুলিশের সামনে চাঁদা আদায়

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম নগরীতে পুলিশের সামনে চাঁদা আদায়

শনিবার, দুপুর ১২টা। চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানার কাপ্তাই রাস্তার মাথা মোড়ে। উত্তর চট্টগ্রামে যাত্রী আনা-নেওয়ায় ব্যস্ত শত শত সিএনজি অটোরিকশা। গাড়িগুলোতে যাত্রী উঠতে-নামলেই চালকদের কাছ থেকে দশ টাকা করে আদায় করছিলেন এক যুবক। মোড়টিতে আরও ৭/৮জন যুবক শক্ত লাঠি দিয়ে বিভিন্ন অটোরিকশার পেছনে সজোরে আঘাত করছিল। রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়িগুলোকে একটি লাইনে আনার চেষ্টায় ছিলেন তারা।

৫০ গজ দূরে একটি গাছতলায় দাঁড়িয়ে ছিলেন ট্রাফিক পুলিশের তিন সদস্য। তাঁরা কখনো পায়চারি করছিলেন, কখনো দাঁড়িয়ে থাকছেন। পাশেই একটি পরিবহন কাউন্টারের ভেতরে একটি চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসা ওই এলাকায় দায়িত্বরত একজন সার্জেন্ট। এক ঘণ্টা পরও তাঁদের একই জায়গায় থাকতে দেখা যায়। মনে হলো তাঁরা অন্য কারও ওপর দায়িত্ব দিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন।

নগরীর প্রবেশমুখ হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এ মোড়ের যানবাহন নিয়ন্ত্রণের এটা নিত্যদিনের চিত্র। ট্রাফিক পুলিশের বদলে চট্টগ্রাম অটোরিকশা অটোটেম্পো শ্রমিক ইউনিয়ন নামে একটি শ্রমিক সংগঠনের লোকজন এ মোড়টির নিয়ন্ত্রণ করছে। আর এসব করতে গিয়ে এ মোড়ে চলাচল করা শুধু তিন হাজার সিএনজি অটোরিকশা থেকে লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। 

জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) মোহাম্মদ আলী হোসাইন বলেন, ওই জায়গাটিতে বেশ কিছুদিন আগে আমরা অভিযান চালিয়েছিলাম। এ সময় কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছিলাম। এরপর এ ধরনের তৎপরতা বন্ধ ছিল। এখন আবার শুরু হয়েছে কিনা সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি বলেন, ‘সেখানে যানজট নিয়ন্ত্রণ বেসামরিক লোকজনের ওপর ছেড়ে দিয়েছে সেটা ঠিক না। যা–ই হোক, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে আমরা দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

জানতে চাইলে ফেডারেশনভুক্ত চট্টগ্রাম জেলা অটোরিকশা অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশীদ বলেন, আমাদের সমিতির অধীনে শতাধিক শাখা রয়েছে। তাঁদের বারণ করা হয়েছিল, এভাবে চাঁদা আদায় করতে। তাঁরা যদি কথা না শুনে কি করতে পারি?  ওই শাখায় যারা দায়িত্বে আছেন তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। আমরা তো সব জায়গায় গিয়ে মনিটরিং করতে পারি না।’

সংগঠনটির কাপ্তাই রাস্তার মাথা শাখার সভাপতি মো. আজাদ বলেন, ‘সংগঠন চালানোর জন্য সমিতির সদস্যভুক্ত গাড়িগুলো থেকে দশ টাকা করে এ চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। সমিতির সদস্যদের বাইরে কোনো টাকা নেওয়া হচ্ছে না। আর আমাদের গাড়িগুলো শৃঙ্খলায় রাখার জন্য সেখানে লোকজন রাখা হয়েছে।’

ঘটনাস্থলে চাঁদা দেওয়া অন্তত দশজন চালকের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা বলেছেন, এরা সমিতির কেউ নন। তাঁদের মতো এখানে আসা সবগুলো গাড়ি থেকে জোর করে টাকা আদায় করা হচ্ছে। টাকা না দিলে গাড়িগুলো আটকে রাখার পাশাপাশি চালকদের মারধর করা হয়। কোনো কোনো সময় ট্রাফিক পুলিশের কাছে নিয়ে গিয়ে গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। আবার মাসিক ৫০০ শ টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে শ্রমিক সংগঠনের এসব লোকজনদের।

শ্রমিক সংগঠনগুলোর তথ্য মতে, উত্তর চট্টগ্রামের কাপ্তাই সড়ক  থেকে নগরীর প্রবেশমুখ কাপ্তাই রাস্তার মাথা মোড় পর্যন্ত দৈনিক ৩ হাজার সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করে থাকে। এখান থেকে চাঁদার টাকা সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করছে মো. হোসেন নামে শ্রমিক সংগঠনটির শাখার সেক্রেটারি। অবশ্য তিনি এ অভিযোগ আজকের পত্রিকার কাছে এড়িয়ে যান। এ ছাড়া একই মোড় থেকে বোয়ালখালী পর্যন্ত দুই শতাধিক সিএনজি অটোরিকশা ও অটোটেম্পু চলাচল করছে।  

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত