Ajker Patrika

সচিব সাংবাদিক ছিঁচকে চোর সবই তিনি

প্রতিনিধি, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
সচিব সাংবাদিক ছিঁচকে চোর সবই তিনি

তিনি কখনও সচিব, কখনও বড় সাংবাদিক, কখনও সাংবাদিক নেতা, কখনো আবার পুলিশ কর্মকর্তা। ক্ষমতাবানদের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা। যে কোনো কাজ উদ্ধার করা তাঁর এক আঙ্গুলের কাজ। আর এভাবেই তিনি মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছেন অর্থ। ফোন করে হুমকিধামকি দিয়ে টাকাও দাবি করেন। তাঁর আবার ছিঁচকে চুরির অভ্যাসও আছে। 

তিনি হাবিবুর রহমান ভুইয়া (৩৫)। হাবিব নামেই পরিচিত। নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় এলাকার আবদুল আহাদ ভূঁইয়ার ছেলে। চার ভাই দুই বোনের মধ্যে হাবিব সবার ছোট। বাবা মারা গেছেন অনেক আগে। ঢাকার গুলিস্তান এলাকায় পত্রিকার হকারি করতেন হাবিব। কামাই রুজি কম, পা বাড়িয়েছেন অনৈতিক পথে। পত্রিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার সুযোগে প্রথমে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিতে শুরু করেন। টাকার ধান্দায় নানান ফন্দিফিকিরে নেমে পড়েন। হুমকি ধমকি দিয়ে ছোটখাট ইনকামে চলছিল না। তাই বেছে নিতে থাকেন প্রতারণার নিত্যনতুন কৌশল। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও যুগ্ম সচিব পরিচয় দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে বখরা দাবি করতে শুরু করেন। প্রয়োজনে বড় সাংবাদিক পরিচয় দেন। সরাইল, নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ বাংলাদেশের বহু এলাকায় তিনি প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়েছেন। 

হাবিবের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানায় একটি, আশুগঞ্জে তিনটি এবং সদর থানায় একটি প্রতারণার মামলা রয়েছে। এক সময় ঢাকার নারায়ণগঞ্জে থাকতেন হাবিব। ওই এলাকার থানার ওসিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গেও প্রতারণা করেছেন বলে জানা যায়। এছাড়া দেশের অন্যান্য জেলায় আরও ১২টি প্রতারণার জিডি রয়েছে বলে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়। 

সরাইল থানার মামলায় একদিনের রিমান্ড শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে হাবিবকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। সরাইল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুর রহমান বলেন, কিছুদিন আগে হাবিব আমাকে ফোন দিয়ে বলে, ‘আমি (হাবিব) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ ইউনিট-২ থেকে বলছি। 

সরাইল থানার ওসি মো. আসলাম হোসেন বলেন, হাবিবের প্রতারণার জাল সারা দেশেই বিস্তৃত। আমাকে ফোন দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. মো. বশিরুল আলম স্যারের পরিচয় দিয়েছে। আমি প্রথমে স্যার মনে করেই সম্মানের সঙ্গে কথা বলেছি। সে আমাকে বদলি করার হুমকিও দিয়েছে। তার নম্বরের সঙ্গে ফোন স্ক্রিনে বড় কর্তার নামও ওঠে। পরে নিশ্চিত হয়েছি, সব ভুয়া। এমন পরিচয় দিয়ে পুলিশের সঙ্গে প্রতারণা করা হাবিবের পেশা। 

সর্বশেষ সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের দুবাজাইল গ্রামের কিতাব আলীর কারাগারে আটক তিনজনকে জামিন করিয়ে দেওয়ার কথা বলে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন হাবিব। তবে গত ১০ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে জেলার সদর থানা পুলিশ। বর্তমানে তিনি জেল হাজতে। 

হেফাজতে ইসলামের সহিংস আন্দোলনের ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় আসামির তালিকা থেকে নাম কাটার কথা বলেও অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন হাবিব। ২৭ মার্চ সরাইল থানাধীন অরুয়াইল পুলিশ ক্যাম্পে হামলার ঘটনায়ও তাঁর বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থানীয় সাপ্তাহিক তিতাস বার্তার সম্পাদক এমএ মতিন সানুর কার্যালয়ের ড্রয়ার থেকে একটি দামি সেলফোন ও নগদ টাকা চুরির অভিযোগও আছে হাবিবের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে জেলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন সানু। আদালত হাবিবের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছেন। মামলাটি এখন রায়ের অপেক্ষায় আছে বলে জানান মামলার বাদী এমএ মতিন সানু। 

জানা যায়, পড়ালেখা তেমন জানা নেই হাবিবের। তবে স্পষ্ট উচ্চারণে গুছিয়ে কথা বলার দক্ষতা আছে তাঁর। আর এতে মানুষ সহজেই তাঁকে বিশ্বাস করে ফেলে। এমনকি অভিজ্ঞ পুলিশ কর্মকর্তাও ফোনের অন্যপাশ থেকে শোনা কণ্ঠে ভড়কে যেতে পারেন! আর এই গুণটিকেই প্রতারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন হাবিব। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত