Ajker Patrika

হতদরিদ্রদের টাকা মেরে সদস্যদের সম্মানীও আত্মসাৎ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান

দশমিনা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯: ৩৩
Thumbnail image

পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিবের বিরুদ্ধে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন সদস্যরা।

উপজেলার ৪ নম্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ লিটন ও সচিব মো. সহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ দাখিল করেন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য মোসা. সালমা বেগম, সদস্য মো. সেলিম মোল্লা, মো. হাবিব চৌকিদার, মো. হানিফ মৃধা, মো. অলিউল ইসলাম ও মো. কবির হোসেন।

অভিযোগের সূত্রে জানা যায়, ইউপি ট্রেড লাইসেন্স, ট্যাক্স, পরিষদের স্টল ভাড়াসহ রাজস্ব থেকে বাৎসরিক আয় ১ কোটি টাকা। ২৪ মাস পর্যন্ত ইউপি সদস্যদের সম্মানী ভাতা ৪ হাজার ৬০০ টাকা হারে ছয়জনের পাওনা ৬ লাখ ৬২ হাজার ৪০০। এর মধ্যে ইউপি সদস্যদের ১০ হাজার টাকা করে ৬০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। বাকি ৬ লাখ ২ হাজার ৪০০ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। জন্ম নিবন্ধন, মৃত্যু নিবন্ধন আবেদনে ও সার্টিফিকেটে সরকার নির্ধারিত ৫০ টাকা নেওয়ার বিধান থাকলেও ইউপি সচিব সহিদুল ইসলাম ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

বিডব্লিউবি (ভিজিডি) ২০২৩–২৪ সালে নামের তালিকায় ওয়ার্ডভুক্ত সুবিধাভোগীদের তালিকা ইউপি সদস্যদের দিয়ে বাছাই না করিয়ে চেয়ারম্যান ও সচিবের অনুসারীদের দিয়ে করানো হয়েছে। এতে একই পরিবারে একাধিক সদস্য ও ধনাঢ্য পরিবারের নামও এসেছে।

ইউনিয়নে জেলেদের তালিকায় ১ হাজার ৮৩৫ জনের বিপরীতে ৪০ কেজি করে চাল বরাদ্দ। সে হিসাবে চার মাসে ১৬০ কেজি চাল দেওয়ার কথা। কিন্তু বিতরণ করা হয়েছে ১২০ কেজি।

হতদরিদ্রদের কর্মসূচি প্রকল্পের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিভিন্ন রাস্তার কাজে চারটি প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৫০ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। ৩১৬ জন শ্রমিক দৈনিক ৪০০ টাকা হাজিরায় কাজ করার কথা থাকলেও চেয়ারম্যান ও সচিব জনৈক জাকিরের এস্ককাভেটর দিয়ে নামমাত্র কাজ করিয়ে প্রায় ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ৩১৬ জন জন ভুয়া লোক দিয়ে সিম সংগ্রহ করে সচিবের কাছে সংরক্ষণ করে কৌশলে টাকা উত্তোলন করা হয়।

গত ২১ জানুয়ারি সকাল ১০টায় পরিষদের সচিব সহিদুল ইসলাম ইউপি সদস্যদের জরুরি সভা ডাকেন। সভার শুরুতে পূর্বে সভার বিবরণ ও বর্তমান সভার বিষয় এবং বকেয়া সম্মানী ভাতা চাইলে চেয়ারম্যান ইউপি সদস্যদের বরখাস্ত করার হুমকি দেন।

অভিযোগের বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ লিটন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইউনিয়নের ছয়জন সদস্য আমার বিপক্ষের লোকদের দিয়ে প্রভাবিত হয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করেছে।’

হতদরিদ্রদের দিয়ে ৪০ দিনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন না করে এস্ককাভেটর দিয়ে কাজ করার বিষয় জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রশাসনের সবাই এ বিষয় জানেন। আমি এ কাজ করিনি। সিবিসি যারা ছিল তারা করিয়েছে। সাত ইউনিয়নেই ভেকু দিয়ে কাজ করিয়েছে।’

ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. সহিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়ে শুনেছি। এ অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মনগড়া।’ হতদরিদ্রের ৩১৬ নামে ভুয়া সিম রেজিস্ট্রেশন এবং ওই সিম সংরক্ষণ ও টাকা উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অভিযোগ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. নূর কুতুবুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত