Ajker Patrika

থাইল্যান্ডে বাচ্চাদের স্কুলে হামলা: নেপথ্যে কি ভয়ংকর মাদক মেথ

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image

থাইল্যান্ডের একটি প্রি-স্কুলের শিশু ডে-কেয়ার সেন্টারে সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তার ছুরি ও বন্দুক হামলায় অন্তত ৩৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২৩টিই শিশু। নিজের সন্তান ও স্ত্রীকে হত্যার পর হামলাকারী আত্মহত্যা করেছেন। এই পুলিশ কর্মকর্তা মাদক রাখার দায়ে সম্প্রতি বরখাস্ত হন। 

এই ঘটনার পর থাইল্যান্ডে নতুন করে দেশব্যাপী মাদক-বিরোধী অভিযান শুরুর দাবি উঠছে। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছে বিরোধী দলগুলো। যেখানে থাইল্যান্ডে মাদক চোরাচালানের আর্থিক পরিমাণ বছরে শত কোটি ডলারের বেশি। 

থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা সরকারকে ‘মাদক, বিশেষ করে মেথামফেটামিন ট্যাবলেট চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের গতি বাড়ানোর’ আহ্বান জানিয়েছেন। স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে বছরব্যাপী মাদক-বিরোধী অভিযান চালিয়েছিলেন। এই অভিযানে প্রায় আড়াই হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এর মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাই বেশি। 

গতকাল বৃহস্পতিবারের (৬ অক্টোবর) হামলাকারী পানিয়া কামরাব (৩৪) গত জানুয়ারিতে অবৈধ মাদক রাখার দায়ে গ্রেপ্তার হন। এরপর তাঁকে পুলিশ বাহিনী থেকে বরখাস্ত করা হয়। আজ শুক্রবার তাঁর আদালতে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল। 

ধারণা করা হচ্ছে, পানিয়া মেথামফেটামিন ট্যাবলেটের প্রভাবে আচ্ছন্ন ছিলেন। এই মাদক সাধারণত মেথ নামে পরিচিত। তবে পুলিশ জানিয়েছে, রক্ত পরীক্ষায় মাদকের কোনো উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। 

থাকসিনের দল পিউ থাইয়ের নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলগুলো সরকারের শিথিল মাদকবিরোধী নীতির সমালোচনা করছে। পিউ থাইয়ের একজন এমপি জুথাপোর্ন ‘সরকারের মাদক ব্যবসা প্রতিরোধে ব্যর্থতার’ ফলস্বরূপ এবং ‘সস্তায় মাদক কেনাবেচার সুযোগ থাকায়’ এই দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে বলে আজ একটি বিবৃতি দিয়েছেন। ক্ষমতায় গেলে মাদক সম্পূর্ণ নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আরেক নেতা। 

মাদক পাচারের প্রধান রুট মেকং নদীর উপত্যকা। এখানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো মাদকের ব্যাপারে প্রায় চোখ বন্ধ করে থাকে। মাদক ও বন্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্যসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংগঠিত অপরাধ অর্থনীতির স্বর্গরাজ্য এটি। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ সংক্রান্ত কার্যালয়ের হিসাব অনুসারে, ২০১৯ সালে এই অঞ্চলে এ দুই বাণিজ্যের আনুমানিক অর্থমূল্য ছিল ১৩০ বিলিয়ন ডলার! 

অবশ্য মানবাধিকার কর্মীরা ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে এবং থাইল্যান্ডের থাকসিন সিনাওয়াত্রা স্টাইলের মাদক-বিরোধী অভিযানের সমালোচনা করেন। কারণ এ ধরনের অভিযানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়া হয়। 

 ২০০৩ সালে শুরু হওয়া থাকসিনের মাদক বিরোধী অভিযানে সন্দেহভাজন মাদক পাচারকারীদের গ্রেপ্তার এবং মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের শাস্তিও দেওয়া হতো। ওই সময় বহু অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য অপরাধী সিন্ডিকেটকে দায়ী করে থাকসিন বলেন, গুন্ডারা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের হত্যা করেছে যাতে তারা পুলিশের কাছে অপরাধের কোনো প্রমাণ পাঠাতে না পারে। 

বৃহস্পতিবারের ঘটনা থাইল্যান্ডে বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন নিয়েও আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, বাচ্চাদের স্কুলে হামলায় পানিয়া কামরাবের পিস্তলটি বৈধ ছিল। সেটি পুলিশেরই অস্ত্র। একজন সৈনিক ২০২০ সালে নাখোন রাতচাসিমার একটি শপিং মলে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ২৯ জনকে হত্যা করেন। এই হত্যাকাণ্ডে তিনি ব্যবহার করেন একটি সামরিক রাইফেল। 

বিরোধী দল মুভ ফরওয়ার্ড পার্টির মুখপাত্র রাংসিমান রোম এক বিবৃতিতে বলেন, ‘পুলিশ এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা জনসাধারণের ওপর এসব আক্রমণ “সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে গভীরভাবে প্রোথিত সহিংসতার সংস্কৃতির প্রতিফলন”’। 

থাইল্যান্ডের সাবেক সিনেটর জন উংফাকর্ন ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, জাপান, ব্রিটেন এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর মতোই কঠোর বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন করতে হবে। এমন একটি উদ্যোগ কেবল সংবিধান মেনে চলা বেসামরিক সরকারের অধীনেই নেওয়া সম্ভব। 

নাগরিক সমাজও মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যাপারে বিরোধীদের সঙ্গে কণ্ঠ মেলাচ্ছেন। এটি করা না গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলেও সতর্ক করছেন তাঁরা। 

রাজনীতি বিশ্লেষক সোমজাই ফাগাফাসভিভাত সংবাদমাধ্যমকে বলেন, পুলিশ এবং সামরিক বাহিনীর কর্মীদের আগ্নেয়াস্ত্র রাখার নিয়মগুলো বেসামরিক নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য আইনের মতোই হওয়া উচিত। মেথামফেটামিন ট্যাবলেটের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষকে ‘আরও কঠোর’ হতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত