Ajker Patrika

হঠাৎ ঘর নির্মাণ ঝোপঝাড়ে

রাতুল মন্ডল, শ্রীপুর (গাজীপুর)
হঠাৎ ঘর নির্মাণ ঝোপঝাড়ে

গাজীপুরের শ্রীপুরে মাটিকাটা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এ জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণও প্রায় শেষ। এর মধ্যে সেতুসংলগ্ন জমির ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে রাতারাতি বাঁশ-কাঠের ঘর নির্মাণ করছেন পৌর আওয়ামী লীগের এক নেতা।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সেতু নির্মাণের খবর জানার পর অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল হিসেবে রাতারাতি টিনশেড ঘর গড়ে তুলছেন ওই নেতা। তাঁর নাম খায়রুল চৌধুরী। তিনি শ্রীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের ধামলই গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বলছেন, ‘আমার জমিতে আমি ঘর নির্মাণ করেছি, এতে কারও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’

সেতু নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘সেতু নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। এসব ঘর নির্মাণ বন্ধ করতে ইতিমধ্যে স্থানীয় কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকৌশলী।

উপজেলার কাওরাইদ থেকে জৈনাবাজার সংযোগ সড়কের সোনাব গ্রামের চৌধুরীঘাট এলাকায় মাটিকাটা নদীর ওপর পুরোনো একটি স্টিলের বেইলি সেতু আছে। তবে ইতিপূর্বে প্রায় ২০ বার সেতুর স্লিপার সরে যাওয়াসহ ধসের ঘটনা ঘটেছে। এখন আনুমানিক ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই স্থানে পাকা সেতু নির্মাণ করছে এলজিইডি। এ জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ চলছে।

চৌধুরীঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেতুর আশপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে বাঁশ-কাঠ ও টিন দিয়ে রাতারাতি ঘর তোলা হয়েছে। এ জন্য নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ও ঢেউটিন ব্যবহার করা হচ্ছে। কোনোমতে তৈরি এসব ঘর বসবাসের উপযোগী নয়।

এই ঘর নির্মাণের ফলে সরকারের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত ও মানুষের ভোগান্তি বাড়বে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। সোনাব গ্রামের বাসিন্দা মো. ফারুক মিয়া বলেন, ‘মাটিকাটা নদীতে বেইলি সেতুর স্লিপার কয়েক দিন পরপর খুলে যায়, তাতে আমাদের চলাচলে ভোগান্তি হয়। এ ছাড়াও সরু সেতু দিয়ে দুটি গাড়ি চলাচল করতে সমস্যা হয়। নতুন সেতুটি নির্মাণ হলে অনেক উপকার হবে; কিন্তু এখন দেখি অবাক কাণ্ড! সেতুর খবর শুনে ঝোপঝাড়ের ভেতর রাতারাতি ঘর তৈরি করা হচ্ছে।’

খায়রুল চৌধুরী বলেন, ‘আমার জমিতে আমি ঘর করছি। জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি এখন পর্যন্ত কেউ আমাকে অবহিত করেনি। এখানে ঘর নির্মাণ করে পোলট্রি খামার করা হবে।’

কাওরাইদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসেম বলেন, ‘কিছুদিন আগে দেখি, খায়রুল চৌধুরী নদীর পারে ঝোপঝাড় পরিষ্কার করছেন। এরপর তাঁকে ফোন করে পাওয়া যায়নি। এসব ঘর নির্মাণ করতে তাঁকে বাধা দেওয়া হয়েছে; কিন্তু তিনি তাঁর জমিতে ঘর নির্মাণ করছেন বলে জানান। এসব ধান্ধাবাজির ঘর নির্মাণ করে সেতু নির্মাণকাজে তিনি বাধা দিতে পারবেন না।’

কাওরাইদ ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল হক আজিজ বলেন, ‘সেতু এলাকায় ঘর নির্মাণ করতে খায়রুল চৌধুরীকে নিষেধ করা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের পরপরই এসব স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। এটা দেখলেই বোঝা যায়, কী জন্য করছেন?’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিয়মানুযায়ী উপজেলা এলজিইডি বিভাগ সেতুর জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। তবে জেলা প্রশাসন থেকে জমির দাম নির্ধারণ করে ফিরতি চিঠি এখনো আসেনি।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. রাকিবুল আহসান বলেন, ‘সেতু নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ শুরুর পর এর আশপাশে হঠাৎ ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে তোলা ঘরগুলো ধান্ধাবাজির মতো মনে হয়। নিজের জায়গায় ঘর নির্মাণ করলে আইনিভাবে তাঁকে বাধা দিতে পারি না। ইতিমধ্যে আমি ঘর নির্মাণ বন্ধ করতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতিকে অবহিত করেছি।’ প্রকৌশলী আরও জানান, ‘ব্রিজের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে। দ্রুতই অধিগ্রহণের কাজ শেষ হবে। চলতি অর্থবছরেই সেতুর কাজ শুরু হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত