Ajker Patrika

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল

স্কুল ভবনটা খাঁচার মতো এতেই প্রাণহানি বেড়েছে

  • ছিল না জরুরি বের হওয়ার পথ।
  • আগুন আর ধোঁয়ায় পরিবেশ ছিল দমবন্ধকর।
  • বারান্দাগুলোও লোহার গ্রিল দিয়ে আটকানো।
আমানুর রহমান রনি, ঢাকা 
আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২৫, ১২: ২৭
বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে। ফাইল ছবি
বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে। ফাইল ছবি

রাজধানীর দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের হায়দার আলী ভবনটির কাঠামোই দৃশ্যত সোমবারের বিপর্যয়কে এতটা প্রাণঘাতী করে তুলেছে। সরেজমিন ঘুরে এবং ভুক্তভোগী অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণাই পাওয়া গেছে।

মাইলস্টোনের দিয়াবাড়ি শাখার মূল ফটক দিয়ে প্রবেশের পরই দেখা গেছে একটি টেনিস কোর্ট ও ক্যানটিন। এরপরই হায়দার আলী ভবন। পশ্চিমমুখী হায়দার আলী ভবনটি দোতলা। তবে দ্বিতীয় তলার ছাদটি টিনের ছাউনির। দোতলা ভবনটির মাঝ বরাবর সিঁড়ি, দুই পাশে কক্ষ। নিচতলায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি এবং ওপরতলায় পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের পাঠদান চলে। প্রতিটি ক্লাসে ৩৫-৪৫ জন শিক্ষার্থী। দুটি তলায় মোট ১৬টি শ্রেণিকক্ষ থাকলেও ভবনে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ একটাই। ছিল না অগ্নিকাণ্ডের মতো বিপর্যয়ের সময় বের হওয়ার জরুরি পথ। বারান্দাগুলোও লোহার গ্রিল দিয়ে আটকানো।

একজন শিক্ষক এই প্রতিবেদককে ভবনের শ্রেণিকক্ষগুলোর বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি জানান, ভবনটির নিচতলার বাঁ দিকে সিঁড়ির পাশেই শিক্ষকদের বিশ্রাম কক্ষ। এরপরই পরপর পাঁচটি শ্রেণিকক্ষ। সেখানে তৃতীয় থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ইংরেজি ও বাংলা ভার্সনের পাঠদান হয়। এরপর একটি ওয়াশরুম। একটু আগে ছুটি হয়ে যাওয়ায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থী অভিভাবকদের সঙ্গে চলে গিয়েছিল। কিছু শিক্ষার্থী ছিল মা-বাবার অপেক্ষায়। কিছুসংখ্যক রয়ে গিয়েছিল কোচিংয়ের জন্য। নিচতলার ডান দিকে প্রথমে একটি ওয়াশরুম, এরপর ভাইস প্রিন্সিপালের অফিস। তার পাশেই ইংরেজি ভার্সনের সমন্বয়কারী মাহরীন চৌধুরীর কক্ষ। ২০টি শিশুকে বাঁচিয়ে যিনি প্রাণ দিয়েছেন। এরপরই মেয়েদের তিনটি শ্রেণিকক্ষ।

দোতলার বাঁ পাশে যথাক্রমে একটি ল্যাব রুম, চারটি শ্রেণিকক্ষ এবং একটি ওয়াশরুম। সেখানে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠদান হয়। দোতলার ডান পাশে প্রথমে একটি ওয়াশরুমের পর পাঁচটি শ্রেণিকক্ষ। সেখানে পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠদান হয়।

বিকল বিমানটি পড়ে বিধ্বস্ত হওয়ার সময় সব ক্লাসের ছুটি হয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ মা-বাবার সঙ্গে বাইরে চলে না যাওয়া অন্য শিক্ষার্থীরা অপেক্ষমাণ ছিল। একাধিক শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ইংরেজি ভার্সনের সপ্তম শ্রেণিতে পড়া রাহিম তাসকিন আহমেদ সেদিন কিছুটা আহত হয়েছে। আগুনের শিখায় তার দুই কান ঝলসে গেছে। বন্ধু হারানোর বেদনায় কাতর তাসকিন নিজের শারীরিক কষ্ট যেন ভুলেই গেছে। রাহিম গতকাল এসেছিল ঘটনার দিন ফেলে যাওয়া বইয়ের ব্যাগ নিতে। ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সে বলল, ‘আমাদের ছুটি হয়ে গেছিল। ক্লাস ক্যাপ্টেন হওয়ায় সবাইকে বের করে দেওয়ার পর আমি বের হই। ব্যাগ কাঁধে তুলব এমন সময় টিনের চালের ওপর আমরা একটা প্রচণ্ড শব্দ শুনি। পরপর আরও দুইটা বিকট শব্দ হয়। তৃতীয় শব্দটা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। দ্বিতীয় শব্দের পর মিনিটখানেকের মধ্যে কালো ধোঁয়ায় সব অন্ধকার হয়ে গেল। আর তৃতীয় শব্দের সঙ্গে সঙ্গেই আগুন লেগে যায়। আমি জ্বলন্ত বিমানের পাশ দিয়ে লাফিয়ে বের হই। আমার তিন বন্ধু গায়ে আগুন লেগে মারা গেছে। সেই দৃশ্য আর মনে করতে চাই না!’

ঘটনার সময় স্কুল ছুটি হয়ে গিয়েছিল। তবে কিছু শিক্ষার্থী কোচিং ক্লাস ও অভিভাবকের জন্য অপেক্ষা করছিল। এ ছাড়া শিক্ষক ও স্টাফরাও ছিলেন ভবনের ভেতরে। কয়েকজন শিক্ষক জানান, নিচতলার সিঁড়ির পাশে শিক্ষকদের কক্ষ, যেখানে শিক্ষকেরা অবস্থান করছিলেন।

বাংলা ভার্সনের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী জাহিদ মোল্লা বলল, প্রতিদিন ছুটির পর সে ঠিক যে জায়গায় দাঁড়ায়, সেখানেই যুদ্ধবিমানটি পড়েছে। এক বন্ধু ডেকে ক্যানটিনে নিয়ে না গেলে সে হয়তো ওখানেই থাকত।

কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেছে, আগুন লেগে যাওয়ার পর আটকে গিয়ে তারা জানালা ও বারান্দার গ্রিলের ভেতর থেকে চিৎকার করতে থাকে। সেনাবাহিনীর দল ও ফায়ার সার্ভিস কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে পৌঁছে দোতলার টিনের চাল ও নিচতলার গ্রিল কেটে শিক্ষার্থীদের বের করে।

শিক্ষার্থীরা ছাড়াও গতকাল স্কুলের সামনে যাওয়া কয়েকজন অভিভাবক হায়দার আলী ভবনের কাঠামোগত দিক নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। তাঁদের প্রশ্ন, যেখানে কয়েক শ শিক্ষার্থী একসঙ্গে ক্লাস করে, সেখানে কেন একটিমাত্র প্রবেশপথ থাকবে? শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা বলেছেন, ভবনের বারান্দায় গ্রিল না থাকলে অনেকে হয়তো বের হতে পারত।

রফিক নামে একজন অভিভাবক বলেন, ‘ভবনটি একটা খাঁচার মতো। একটিই প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ। ভবনটি খোলামেলা হলে বাচ্চারা বের হতে পারত। বারান্দাও গ্রিল দিয়ে ঘেরা। তাই নিচতলায় থেকেও অনেকে বের হতে পারেনি।’

এদিকে গতকাল মাইলস্টোন স্কুলের মূল ফটকসহ পাঁচটি প্রবেশমুখ বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। ভবনের সামনে মোতায়েন করা হয় নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী। কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, এমনকি অভিভাবকেরাও প্রবেশ করতে পারেননি। শুধু শিক্ষকদের পরিচয়পত্র দেখে জরুরি সভার জন্য প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। সংবাদকর্মীদের প্রবেশেও বাধা দেওয়া হয়। চার-পাঁচজন শ্রমিককে হায়দার আলী ভবনের তিন পাশে টিনের বেড়া দিতে দেখা যায়।

গতকাল ভবনের জানালা দিয়ে দেখা গেছে, এখনো পড়ে আছে পুড়ে যাওয়া বই, টিফিন বক্স, পানির বোতল, ব্যাগ। কিছু ব্যাগ ও বই-খাতা উদ্ধার করে রাখা হয়েছে, যা ধীরে ধীরে অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

সন্ধ্যা থেকে বন্ধ থাকবে নির্বাচন ভবনের আশপাশের ব্যবসা কার্যক্রম

কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জরুরি অবতরণও করা যাবে না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মৌলভীবাজারের তিন হাওর: অস্তিত্ব নেই ২০০ বিলের

  • এসব হাওরে একসময় ৪৩৭টি বিল ছিল।
  • বিপন্ন হয়ে পড়েছে হাওরপারের মানুষের জীবিকা।
  • খনন করে বিল উদ্ধারের দাবি স্থানীয়দের।
  • প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস প্রশাসনের।
মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
খনন না করায় পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে এশিয়ার অন্যতম বড় মিঠাপানির জলাভূমি হাকালুকি হাওর। সম্প্রতি জুড়ী উপজেলার জয়ফরনগর এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
খনন না করায় পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে এশিয়ার অন্যতম বড় মিঠাপানির জলাভূমি হাকালুকি হাওর। সম্প্রতি জুড়ী উপজেলার জয়ফরনগর এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের হাকালুকি, হাইল ও কাউয়াদীঘি হাওরে কাগজে-কলমে ৪৩৭টি বিল থাকলেও বাস্তবে প্রায় ২০০টির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। খননের অভাবে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে এসব জলাশয়। ফলে কমে গেছে দেশি মাছ, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও জলজ উদ্ভিদ। এতে করে হাওরপারের বহু মানুষের জীবিকা বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

হাকালুকি এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ মিঠাপানির জলাভূমি। এটি মৌলভীবাজারের বড়লেখা, কুলাউড়া, জুড়ী উপজেলা ছাড়াও সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে বিস্তৃত। একসময় এই হাওরের সব বিল মিলে আয়তন ছিল ৪ হাজার ৪০০ হেক্টর। কাগজে-কলমে এখানে ২৩৮টি বিল; কিন্তু খনন না হওয়ায় প্রায় ১০০টি ভরাট হয়ে গেছে। এ ছাড়া হাইল হাওরে ১৩১টি ও কাউয়াদীঘি হাওরে ৬৮টি বিল থাকার কথা। কিন্তু এই দুই হাওরেও প্রায় ১০০ বিলের কোনো হদিস নেই।

কাগজে-কলমে তিন হাওরে ৪৩৭টি বিলের কথা বলা হলেও বাস্তবে ২৪৫টি ইজারা দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো পলি ও বালুতে ঢাকা পড়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরিফ হোসেন জানান, হাকালুকি, হাইল ও কাউয়াদীঘি হাওরে চার শতাধিক বিলের কথা বলা হলেও বাস্তবে এই সংখ্যা এখন অনেক কম। প্রায় ৪০ শতাংশ বিল ভরাট হয়ে গেছে। এগুলো খনন করা প্রয়োজন। একসময় হাওরে দেশীয় ২৬০ প্রজাতির মাছ ছিল, এখন তা কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে।

হাওরের সঙ্গে যুক্ত ছড়া ও নদী থেকে প্রতি বর্ষায় পলি আসে। এই পলি জমে বিলগুলোর গভীরতা কমতে কমতে একসময় ভরাট হয়ে যায়। ২০ একরের বেশি আয়তনের বিল তিন বছরের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ইজারা দেওয়া হয়। ২০ একরের কম বিল উপজেলা ভূমি অফিস থেকে এক বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু ইজারাদারেরা ঠিকমতো খনন না করায় পলি জমে বিলগুলো অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে।

জুড়ী উপজেলার হাকালুকি হাওরপারের বাসিন্দা সাজ্জাদ মিয়া বলেন, যেভাবে হাওরের বিল ভরাট হচ্ছে, তাতে করে একসময় আর এগুলো খুঁজে পাওয়া যাবে না। এভাবে বিল ভরাট হতে থাকলে এগুলো থেকে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষের কী হবে?

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এক দশক আগেও হাওরের বিলগুলোর অস্তিত্ব ছিল। অথচ এখন এগুলোর একটি বড় অংশই ভরাট হয়ে গেছে। যেগুলো এখনো টিকে আছে, খনন না করা হলে সেগুলোও ভরাট হয়ে যাবে।

সরেজমিনে জানা যায়, বছরের এই সময়ে হাওর পানিতে টইটম্বুর থাকার কথা। তবে বাস্তবে কুলাউড়া, জুড়ী, রাজনগর ও শ্রীমঙ্গল অংশে পানি একেবারেই কম। মাছের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে গেছে। আগের মতো মাছ না পাওয়ায় পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছেন অনেক মৎস্যজীবী।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন মৌলভীবাজার জেলা শাখার সভাপতি সালেহ সোহেল বলেন, দেশের বৃহৎ হাওরগুলোর মধ্যে তিনটি মৌলভীবাজারে। অথচ এগুলো এখন সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। হাওরের বিলগুলো জরুরিভাবে খনন করা প্রয়োজন। এখানকার জলজ উদ্ভিদ রক্ষা করতে হবে।

মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোসা. শাহীনা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, হাওরের বিলগুলো খননের জন্য জেলা প্রশাসক সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। অনুমোদন হলে খননকাজ শুরু হবে। ভরাট হওয়া বিলগুলো খনন করা খুবই প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

সন্ধ্যা থেকে বন্ধ থাকবে নির্বাচন ভবনের আশপাশের ব্যবসা কার্যক্রম

কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জরুরি অবতরণও করা যাবে না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টেকনাফে নাফ নদীতে এক জেলের জালে ৬০ মণ ইলিশ

 টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০০: ৩৬
নাফ নদীতে এক জেলের জালে ৬০ মণ ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
নাফ নদীতে এক জেলের জালে ৬০ মণ ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদীতে এক জেলের টানা জালে ধরা পড়েছে ৬০ মণ ইলিশ। প্রতিটি মাছের ওজন ৬০০ থেকে ৮০০ গ্রাম। ধরা পড়া এসব মাছ বিক্রি হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ টাকায়।

আজ মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ার জেলে মোহাম্মদ ঈমান হোসেন নাফ নদীতে জাল ফেলেন। সন্ধ্যার দিকে জাল টেনে তুললে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মাছ ধরা পড়ে।

টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালীয়া খালের হাকিম ফিশারিজের পরিচালক মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আজ দুপুরে নদীতে জাল ফেলার পর সন্ধ্যায় জাল টানতেই প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে। পরে মাছগুলো কায়ুকখালীয়া খালের ফিশারিজে আনা হয়।

স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ বলেন, ‘প্রতি কেজি ৬০০ টাকা দরে আমি মাছগুলো কিনেছি। প্রতি মণ ২৪ হাজার টাকায় মোট ৬০ মণ ইলিশ কিনতে আমার সাড়ে ১৪ লাখ টাকা লেগেছে। মাছগুলো বরফে সংরক্ষণ করে বুধবার সকালে চট্টগ্রামে পাঠানো হবে।’

এ বিষয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, গত শনিবার মধ্যরাতে ২২ দিনের ইলিশ প্রজনন মৌসুমের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা নদীতে নামার পরই এক জেলের জালে বিপুল পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়া আনন্দের খবর। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, টেকনাফের নাফ নদীতে এই মৌসুমে এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ইলিশ ধরা পড়ার ঘটনা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

সন্ধ্যা থেকে বন্ধ থাকবে নির্বাচন ভবনের আশপাশের ব্যবসা কার্যক্রম

কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জরুরি অবতরণও করা যাবে না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দপ্তরের গোপন নথি প্রকাশ পিএসের ফেসবুক আইডিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্যের দপ্তরের একাধিক গোপন নথি প্রকাশ করা হয়েছে এক কর্মকর্তার ফেসবুক আইডিতে। ওই কর্মকর্তা হলেন উপাচার্যের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিএস) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

গতকাল সোমবার মধ্যরাতে মিজানুর রহমানের ফেসবুক আইডিতে কমপক্ষে ৬০টি নথি শেয়ার করা হয়। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে সেগুলো মুছে ফেলা হলেও অনেক শিক্ষার্থী সেগুলোর স্ক্রিনশট রেখেছেন। এ নিয়ে আজ ক্যাম্পাসে আলোচনার ঝড় ওঠে।

প্রকাশ করা নথিপত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেগুলোর মধ্যে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করা, ব্যক্তিগত ফাইল ও শাস্তির নথি, তদন্ত প্রতিবেদন ও অডিট আপত্তির নথি, শিক্ষার্থীদের মামলার নথি, কর্মকর্তাদের চাকরির আবেদনপত্রের ব্যক্তিগত ছবি রয়েছে।

এ বিষয়ে মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। কীভাবে গোপন এসব ছবি আমার ফেসবুক স্টোরি থেকে শেয়ার হলো তা-ও বুঝতে পারছি না।’

প্রতিষ্ঠানটির গোপন নথি প্রকাশ করে দেওয়ার বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলমকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

সন্ধ্যা থেকে বন্ধ থাকবে নির্বাচন ভবনের আশপাশের ব্যবসা কার্যক্রম

কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জরুরি অবতরণও করা যাবে না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সংঘর্ষের পর সিটি ও ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি বন্ধ, পাল্টাপাল্টি দোষারোপ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার
সিটি ইউনিভার্সিটির আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা
সিটি ইউনিভার্সিটির আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা

সাভারের বিরুলিয়ায় সিটি ইউনিভার্সিটি ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনার পর উভয় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। সিটি ইউনিভার্সিটি ৪ নভেম্বর এবং ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখবে।

এর আগে শরীরে থুতু ফেলাকে কেন্দ্র করে রোববার রাতে সিটি ইউনিভার্সিটি ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের জের ধরে রাতেই ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা পাশের সিটি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর করেন, গাড়ি পুড়িয়ে দেন। সংঘর্ষে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।

এই সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনার জন্য উভয় বিশ্ববিদ্যালয় একে অপরকে দোষারোপ করছে। দুইটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠনসহ থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।

আজ মঙ্গলবার সিটি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে পোড়া গাড়ির অংশ, ভাঙচুর হওয়া ভবনের জানালা ও আসবাব। উপাচার্যের কার্যালয়েও চালানো হয়েছে হামলা। সেখানে ভাঙা কাচ ও পুড়ে যাওয়া নথিপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।

জানতে চাইলে ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক লুৎফর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হামলাকারীদের আচরণ শিক্ষার্থীসুলভ ছিল না। তারা আমার কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। গাড়িগুলো আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা আজ থানায় মামলা করব এবং ইউজিসিতে লিখিত অভিযোগ জানাব।’

তিনি আরও বলেন, ‘অভ্যন্তরীণভাবে পুরো বিষয়টি তদন্তের পাশাপাশি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে পুরো ঘটনার তদন্ত করা হবে। এই এলাকার পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করা হয়েছে, সেই পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমেও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করব।’

অপর দিকে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক এম আর কবির বলেন, ‘রোববার রাতে সংঘর্ষের ঘটনাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে সব দায় ড্যাফোডিলের ওপর চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সংঘর্ষে ড্যাফোডিলের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন রাতে ড্যাফোডিলের ১১ শিক্ষার্থীকে আটকের পর জিম্মি করে জোরপূর্বক তাঁদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। জবানবন্দিতে ওই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সিটি ইউনিভার্সিটির অ্যাকাউন্টস থেকে দেড় কোটি টাকা চুরি ও অস্ত্রসহ হামলার কথা বলানো হয়, যা সত্য নয়। তদন্ত হলেই প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসবে।’

ড. এম আর কবির আরও বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যাঁরা ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবেন। প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ সময় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুম ইকবাল, এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

সন্ধ্যা থেকে বন্ধ থাকবে নির্বাচন ভবনের আশপাশের ব্যবসা কার্যক্রম

কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জরুরি অবতরণও করা যাবে না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত