Ajker Patrika

ইয়াবা নিয়ে আসতে কক্সবাজার ভ্রমণ!

কুমিল্লা প্রতিনিধি
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ২৫
ইয়াবা নিয়ে আসতে কক্সবাজার ভ্রমণ!

মাদক কারবারিরা মাদকাসক্ত কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে মাদক সরবরাহ করে আস্থা অর্জন করে। এরপর টাকার লোভ দেখিয়ে মাদক বহনের কাজে তাঁদের ব্যবহার করা হয়। এই কাজে প্রশাসনের নজর এড়াতে ভয়ঙ্কর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নেন শিক্ষার্থীরা। ভ্রমণের নামে যান কক্সবাজার ও টেকনাফে। সেখানে বিশেষ কায়দায় ইয়াবা বড়ি খেয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যান তাঁরা। পরে সুযোগ বুঝে মলের সঙ্গে ইয়াবা বের করে কারবারিদের হাতে তুলে দেন।

এভাবে ইয়াবা বহনের সময় গত সোমবার রাতে ২৪ হাজার ইয়াবা বড়িসহ ৯ শিক্ষার্থীকে আটক করে র‌্যাব। তাঁরা সবাই পাকস্থলীতে ইয়াবা বহন করে টেকনাফ থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার আমতলি এলাকায় বাসে তল্লাশি চালিয়ে তাঁদের আটক করা হয়। পরে তাঁদের দেওয়া তথ্য মতে, পেটে এক্স-রে করে পাকস্থলীতে ইয়াবা বহনের বিষয়টি নিশ্চিত হয় র‌্যাব।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কুমিল্লায় র‌্যাব-১১-এর সিপিসি-২-এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন।

র‌্যাব কমান্ডার জানান, শিক্ষার্থীদের মূলত মাদক বহনের কাজে ব্যবহার করে কারবারিদের সিন্ডিকেট। মাদক ও টাকার লোভে শিক্ষার্থীরা এ কাজ করে দেন। এ ছাড়া মাদক সংক্রান্ত কাজে লিপ্ত থাকার গোপন ভিডিও ধারণ করে শিক্ষার্থীদের ফাঁদে ফেলেও দিনের পর দিন অবৈধ কাজে বাধ্য করা হয়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, অভিভাবকদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসএসসি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়েছেন মাদক পাচারে। এর বেশ কিছু তথ্য এসেছে র‌্যাবের হাতে। তাদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করছে র‌্যাব। ইয়াবাসহ আটক ৯ শিক্ষার্থী বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। তাঁরা এসএসসি, এইচএসসি ও স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী।

গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীরা হলেন কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার চরপাড়াতলা গ্রামের মো. তোফায়েল আহমেদ (১৯), ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার দত্তের বাজার গ্রামের মো. মিনহাজুল ইসলাম রিফাত (২২), পটুয়াখালী জেলার পটুয়াখালী সদর থানার পশুরবুনিয়া গ্রামের মো. সোহেল (২১), নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার পিজাহাতি গ্রামের মো. মিতুল হাসান মাহফুজ (২২), কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার চরপাড়াতলা গ্রামের মো. আশিকুল ইসলাম (১৯), গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানার আমবাগ (কোনাবাড়ী) গ্রামের মো. সিয়াম ইসলাম (১৯), ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার বাকশি (পাঠানবাড়ী) গ্রামের মো. রিশাত পাঠান (২২), ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার নয়াবাড়ী গ্রামের মো. গোলাপ (২২) ও ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার বাগশি গ্রামের মো. সেলিম (২২)।

গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে র‌্যাব জানায়, প্রথমে এই তরুণদের গাঁজা ও ইয়াবা বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হতো। মাদকের আসরে আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে তাঁদের ধীরে ধীরে মাদকাসক্ত করে ফেলা হয়। পরবর্তীতে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার প্রলোভন এবং উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখানো হয়। অপর দিকে মাদকাসক্ত এই তরুণেরা মাদকের টাকা সংগ্রহ করার জন্য অস্থির হয়ে পড়েন। এ সময় তাঁদের মাদক বহনের প্রস্তাব দেওয়া হয়।

অভিযুক্তরা র‌্যাবকে আরও জানান, তাঁদের আব্দুল্লাপুরের একটি বাস কাউন্টারে যেতে বলা হয়। সেই কাউন্টারে আগে থেকেই তাঁদের জন্য কক্সবাজার জেলার টেকনাফগামী বাসের টিকিট কেটে রাখা হয়। বাস টেকনাফ গিয়ে থামলে সেখানে থাকা লোকজন তাঁদের একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে যান এবং হোটেলের যে কক্ষে রাখা হয় সে কক্ষটি সারা দিন বাইরে থেকে তালা মেরে রাখা হয়। সন্ধ্যা নাগাদ দুই থেকে তিনজন লোক হোটেলে এসে ওই তরুণদের সঙ্গে দেখা করেন এবং ইয়াবা পেটে বহন করার প্রক্রিয়া শিখিয়ে দেন।

আটককৃতরা র‌্যাবকে আরও জানান, গত এক বছরে তাঁরা বহুবার টেকনাফ থেকে ঢাকায় ইয়াবা এনেছে। রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় এমন আরও কয়েকটি শিক্ষার্থীদের দল এ কাজে জড়িত। তাঁদের মা-বাবার অগোচরে এ কাজ করতেন তাঁরা।

আটককৃতদের বিরুদ্ধে কুমিল্লার কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত