Ajker Patrika

ভর্তি জালিয়াতিতে ছাত্রলীগ নেতা

আমানুর রহমান রনি, ঢাকা
ভর্তি জালিয়াতিতে ছাত্রলীগ নেতা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনার নেপথ্যে নাম এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এক নেতার। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। তিনি অন্যান্য ভর্তি ও নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম রাকিবুল হাসান ওরফে রাব্বি (২৪)। তিনি ম্যানেজমেন্টের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপসাহিত্য সম্পাদক। তিনি হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে থাকেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাকিবুল হাসান ওরফে রাব্বি আগের কমিটির সদস্য হবেন। আমরা বর্তমানে কোনো কমিটি দিইনি। আমাদের কমিটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেনি। তবে সে যে-ই হোক, কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত হলে তাঁকে আইনের আওতায় আনাই শ্রেয়।’

গতকাল মঙ্গলবার জালিয়াতির কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন রাকিবুল। এর আগে ৩ মে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা মহানগর দক্ষিণের একটি দল।

পিবিআই তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও আদালত সূত্র জানিয়েছে, ২০২২ সালের ১৩ আগস্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক ইউনিটের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা হয়। ওই পরীক্ষায় সেজান মাহফুজ নামে এক শিক্ষার্থী অংশ নেন। তিনি পরীক্ষার্থী হলেও পরীক্ষায় অংশ নেন মো. আকতারুল ইসলাম নামে এক তরুণ। পরীক্ষার পরিচয়পত্রের সঙ্গে থাকা ছবির মিল না থাকায় আকতারুল ইসলামকে জেরা করেন শিক্ষকেরা। শিক্ষকদের জেরার মুখে আকতারুল স্বীকার করেন, তিনি অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছেন। এরপর তাঁকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ১৯৮০ সালের পাবলিক পরীক্ষা আইনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

 আকতারুল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেক অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই।

গত ৬ মার্চ পরীক্ষার্থী সেজান মাহফুজকে পিবিআই গ্রেপ্তার করে। আদালতে তাঁর দেওয়া স্বীকারোক্তিতে ছাত্রলীগ নেতা রাকিবুল হাসান ওরফে রাব্বির নাম আসে। তাঁকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয় পিবিআই। এক দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মামুনুর রশীদের আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন তিনি।

তিন লাখ টাকায় চুক্তি
রাব্বি তাঁর জবানবন্দিদে আদালতে বলেছেন, জগন্নাত বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য পরীক্ষার্থী সেজান মাহফুজের সঙ্গে তিন লাখ টাকায় তাঁর চুক্তি হয়। সেজান পরীক্ষার আগেই অর্ধেক টাকা রাব্বিকে পরিশোধ করেন। বাকি টাকা রেজাল্টের পর দেওয়ার কথা ছিল। তবে পরীক্ষা কেন্দ্রে আকতারুল ধরা পরায় তাঁদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোলাম মুক্তার আশরাফ উদ্দিন বলেন, সেজান ও রাব্বি দুজনেই তিন লাখ টাকার চুক্তির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তাদের মধ্যে লেনদেনেরও প্রমাণ পেয়েছি আমরা।’ 

মেডিকেল ও সরকারি নিয়োগেও জালিয়াতি
ছাত্রলীগ নেতা রাব্বি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি জালিয়াতি ছাড়াও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা এবং সরকারি বেসরকারি নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। তাঁর মোবাইলের কথোপকথোন, ক্ষুদেবার্তা ও মোবাইল ব্যাংকিং ট্রান্সজেকশনে এরকম তথ্য পেয়েছে পিবিআই।

২০২০ সাল থেকে জালিয়াতি করে আসছেন রাব্বি। তাঁর মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংকিং চ্যানেলে গত দুই বছরে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। তিনি টাকা কখনো নিজের অ্যাকাউন্টে সরাসরি আনতেন না। বিভিন্ন জনের ব্যাংক একাউন্ট, বিকাশ ও এসএ পরিবহনের মানি ট্রান্সফার সার্ভিস ব্যবহার করে করতেন।

ঢাবির মহসীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হলেও ছাত্রলীগ নেতা রাব্বি থাকেন ধানমন্ডি ১৫ নম্বর স্টাফ কোয়ার্টারের পেছনের একটি বহুতল বাড়ির ফ্ল্যাটে। তাঁর গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল থানার নেকমরদ এলাকায়। রাব্বির রয়েছে পাঁচ লাখ টাকা দামের দামি মোটরসাইকেল। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থী এতো সম্পত্তির মালিক হওয়ার উৎস খুঁজছে পুলিশ।

পিবিআইর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ সারোয়ার জাহান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা আরও কয়েকজনের নাম পেয়েছি। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত