Ajker Patrika

ধানখেতে ভুয়া অফিস খুলে বিকাশ প্রতারণা

ফয়সাল পারভেজ, মাগুরা
আপডেট : ০৩ জুন ২০২২, ১১: ৫৬
Thumbnail image

মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায় বিকাশ প্রতারণার সঙ্গে শতাধিক তরুণ জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। কৌশলে দেশের নানা প্রান্তের গ্রাহকদের ফাঁদে ফেলে তাঁরা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

এর মধ্যে শ্রীপুর উপজেলার গড়াই নদীর তীরে মহেশপুর গ্রামে একটি শক্তিশালী চক্র সক্রিয় আছে। গ্রামটির একদিকে রাজবাড়ী জেলার সীমান্ত। এই চরাঞ্চলের পাটখেত, ধানখেত ও বালুর ঢিবিতে তরুণেরা গড়ে তুলেছে প্রতারণা করার জন্য ভুয়া অফিস। এই ভুয়া অফিসে বসে, দাঁড়িয়ে কিংবা শুয়ে তাঁরা ফোন দেন টার্গেট করা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকদের। অঞ্চলটি দুর্গম হওয়ায় পুলিশের অভিযানও খুব একটা নেই বলে জানা গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, কয়েক বছর ধরে তাঁরা এই প্রতারণার কথা মুখে মুখে শুনছেন। এখন তরুণদের চালচলন ও আচার-আচরণে তাঁরা এর প্রমাণ পাচ্ছেন।

টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল সম্পর্কে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, পাঁচ লাখ টাকা দামের মোটরসাইকেল চালাচ্ছে কলেজপড়ুয়া ছেলেপেলে। এদের পরিবারের আয় সীমিত। সংসার কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কিছুদিন আগেও ঠিকমতো খেতে পারত না। এখন তাদের বাড়ি, গাড়ি ও জমি সব হয়েছে। সবই হচ্ছে বিকাশে প্রতারণার মাধ্যমে।

মাগুরা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সূত্রমতে, বিকাশের গ্রাহকদের কাছ থেকে নানা কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকেরা। মহেশপুর ও চর মহেশপুর গ্রামে এমন বেশ কয়েকজন তরুণ আছে। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতারণার এই কৌশলের নাম দিয়েছে ‘টোপ মারা’। আর যাঁরা জড়িত, তাঁরা ‘টোপ পার্টি’ নামে পরিচিত। এ প্রতারণায় জড়িত শতাধিক তরুণ। জড়িত থাকা প্রতারকেরা পুলিশের নজরে রয়েছে।

দ্বারিয়াপুর ইউনিয়নের মহেশপুর থেকে, গোয়ালদহ, চর গোয়ালদহ, চর মহেশপুর, চৌগাছী, চর চৌগাছী, ঘষিয়াল, শ্রীকোল ইউনিয়নের বরিশাট গ্রাম, নয়নশার ঘাট এলাকাতেও অনেক তরুণ এ প্রতারণার সঙ্গে জড়িত বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে। এই চক্রের সদস্যদের বয়স ১৭ থেকে ২৫ বছর। তবে নেতৃত্ব যারা দেন, তাঁদের বয়স ৩০ এর কাছাকাছি। ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যেতে পারেন, এমন শঙ্কায় এঁদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করছে না পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, প্রতারণার কাজে নিয়োজিত রয়েছে নানা পর্যায়ের কর্মী। একদল কর্মী বিকাশ, নগদ, রকেট কিংবা অন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট পর্যায়ে ঘোরাঘুরি করে তথ্য সরবরাহ করেন। এজেন্টদের কাছে যেসব গ্রাহক টাকা পাঠান, তাঁদের তথ্য এঁরা অন্য একটি গ্রুপকে ফোনে ছবি তুলে দিয়ে দেন। এরপর ওই টাকা পাওয়া গ্রাহকের কাছে ফোন দেন তৃতীয় গ্রুপ। এঁরা নির্জন জায়গায় অবস্থান নিয়ে এসব কাজ করেন। এ ক্ষেত্রে মহেশপুরের চরাঞ্চলটি উপযোগী।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ২০২০ সালের ৩০ আগস্ট শ্রীপুর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। এ মামলায় ১০ জনকে আসামি করা হয়। সেখানে অভিযোগ ছিল আসামিরা দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন ফেসবুক আইডি ও মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে ফেসবুক আইডি হ্যাক এবং বিকাশ কোম্পানির গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল।

দ্বারিয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুর সবুর বলেন, ‘বিকাশের টাকা মহেশপুরসহ কিছু এলাকার তরুণেরা প্রতারণায় আশ্রয়ে হাতিয়ে নেয় বলে শুনেছি। তবে হাতেনাতে প্রমাণ পাইনি। প্রমাণ পেলে অবশ্যই এঁদের আইনের আওতায় আনা হবে। এঁরা যত বড় চক্রই হোক, এঁদের নির্মূল করা সম্ভব।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রিটন সরকার বলেন, ‘আমি এখানে মে মাসে এসেছি। নানা এলাকায় মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। বিকাশ প্রতারক চক্রর তথ্য আমি পেয়েছি। পুলিশের পক্ষ থেকে শতভাগ চেষ্টা আছে, এঁদের প্রতিরোধ করার। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা কাজ করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত