Ajker Patrika

এবার সড়কের মাটি ইটভাটায়

আজিজুর রহমান, চৌগাছা
Thumbnail image

যশোরের চৌগাছায় এবার সড়কের মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের কাটাখালী খালের পাশ দিয়ে নির্মিত সড়কের পাশ থেকে রাতের আঁধারে মাটি কেটে নিচ্ছে একটি অসাধু চক্র।

ফলে সড়কটি সরু হয়ে পড়ছে। বর্ষা মৌসুম এলে সড়কটির বিভিন্ন স্থান ধসে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠতে পারে বলে শঙ্কা এলাকাবাসীর। এর আগে উপজেলাটির ভৈরব নদের পাড়ের মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করে আসছিল একটি চক্র।জানা গেছে, চৌগাছার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের পুড়াপাড়া আদিবাসী পাড়ার পাশ দিয়ে একটি খাল (কাটাখালী খাল বলে পরিচিত) স্বরূপদাহ ইউনিয়নের খড়িঞ্চা বাঁওড়ে মিলিত হয়েছে। এটি দিয়ে দুই ইউনিয়নের বর্ণি, পুড়াপাড়া, সুখপুকুরিয়া, কমলাপুর, সাঞ্চাডাঙ্গা দেবালয়সহ ১০-১২টি গ্রামের মাঠের অতিরিক্ত পানি খড়িঞ্চা বাঁওড়ে এসে পড়ে। সেখান থেকে কপোতাক্ষ নদে পানি নিষ্কাশন হয়।

গ্রামগুলোর মাঠের ফসল রক্ষায় আশির দশকে খালটি খনন করা হয়। খননের পর খালের উত্তর পাশ দিয়ে প্রায় ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি প্রশস্ত সড়ক পুড়াপাড়া থেকে দেবালয় গ্রামে মিশে কমলাপুর মোড়ে চৌগাছা-পুড়াপাড়া সড়কে মিলেছে। সড়কটি স্থানীয়দের চলাচলসহ আশপাশের প্রায় ১০টি গ্রামের কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল তোলার কাজে ব্যবহৃত হয়। স্থানীয়রা আরও জানান, দুই বছর আগে সরকারিভাবে খালটি ফের খনন করা হয়। খাল খননের মাটি দিয়ে পাশের সড়কটি আরও উঁচু ও প্রশস্ত করে চলাচল উপযোগী করেন সুখপুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তোতা মিয়া। হঠাৎ গত সপ্তাহে স্বরূপদাহ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাঞ্চাডাঙ্গা গ্রামের মাসুদ রানা সড়কের মাটি রাতের আঁধারে কেটে ইটভাটায় বিক্রি শুরু করেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় বাঘাকুড়ো মতান্তরে বাগের মাঠ থেকে সড়কের পাশের মাটি তিনি রাতের আঁধারে কেটে অন্তত ২০টি ট্রাকে করে নিয়ে যান। মাটি কেটে নেওয়ায় ওই জায়গার সড়ক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বর্ষা মৌসুম এলেই সড়কটি ধসে খালে মিশে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। শনিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মাটি কেটে নেওয়া অংশের সড়ক সরু হয়ে গেছে। এ সময় মাঠে কাজে ব্যস্ত কৃষক হাছেন আলী, মসলেম উদ্দিন, আলী বক্স, আমিরুল ইসলাম, রাসেল হোসেন, আওলিয়ার রহমান, মোশারফ হোসেনসহ অনেকর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। 
তাঁরা বলেন, যিনি সড়কের মাটি কেটেছেন তিনি দাবি করেছেন, নিজের জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। এটি দীর্ঘদিনের একটি সড়ক। কয়েক গ্রামের মানুষ বছরের পর বছর সড়কটি ব্যবহার করে আসছেন।

কৃষকেরা জানান, প্রথমে মাসুদ রানা দিনের বেলায় মাটি কাটতে শুরু করলে গ্রামবাসী বাঁধা দেয়। এর পর কিছুদিন মাটি কাটা বন্ধ রাখেন তিনি। তবে গত সপ্তাহের বুধ-বৃহস্পতিবারে রাতের আঁধারে একাধিক এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি কেটে অন্তত ২০টি ট্রাকে বোঝাই করে ইটভাটায় বিক্রি করে দিয়েছেন। স্বরূপদাহ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আব্দুল মান্নান বলেন, ‘মাটি কাটার খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে বাঁধা দিলেও তাঁরা কোনো কর্ণপাত করেননি। মাটি কেটে নেওয়ায় সড়কটি যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে।’ অভিযুক্ত মাসুদ রানা বলেন, ‘যেখান থেকে মাটি কাটা হয়েছে, সেখানে আমার ৮-১০ বিঘা জমি রয়েছে। খাল খননের সময় মাটি আমার জমিতে রাখা হয়েছিল। তাই সে মাটি সরিয়ে নিয়েছি।’

স্বরূপদাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল কদর বলেন, ‘প্রথম যেদিন মাটি কাটতে শুরু করেন। সেদিন আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে মাটি কাটতে নিষেধ করি। তাঁরা সেদিন নিষেধ মেনে চলে যান। পরে জানতে পারি, রাতে ­মাটি কেটে নিয়ে গেছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।’চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, ‘সড়কের মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত