Ajker Patrika

ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি

সম্পাদকীয়
ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি

ঋত্বিক ঘটকের বাড়িটি নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়েছে। রাজশাহীর মিয়াপাড়ায় এই বরেণ্য চলচ্চিত্রকারের স্মৃতিবিজড়িত স্থাপনা এখন স্তূপীকৃত ইটের সমাহার। এটা সাম্প্রদায়িক অপকর্ম, নাকি আমাদের সংস্কৃতিকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলার ষড়যন্ত্র, নাকি দুটিই—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হবে। 

বড় রকমের রাজনৈতিক পরিবর্তন হলেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এ সময় দুষ্কৃতকারীরা যে যার মতো করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করার পথ খোঁজে। এর আগেও এ ধরনের ভয়াবহতা দেখেছে বাংলাদেশ। 

৫ আগস্টের পর যেসব স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে, তার একটি প্যাটার্ন দেখা যাচ্ছে। আন্দোলনে বিজয়ের সুযোগে একশ্রেণির সুযোগসন্ধানী মূলত মুক্তিযুদ্ধের অর্জনের ওপর সুকৌশলে হামলা চালিয়েছে। যদিও ছাত্র সমন্বয়কেরা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পর সরকারের উপদেষ্টারা এসব ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, কিন্তু তাঁরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায়ই চলেছে ধ্বংসযজ্ঞ। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু জাদুঘর ধ্বংস করা কিংবা কুষ্টিয়ার মুজিবনগরে ভাস্কর্যগুলো ভাঙার পেছনে কী যুক্তি ছিল, তার কী ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে? এর দায় কে নেবে? সেই সঙ্গে বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের ওপর যে আক্রমণ হয়েছে, সেটাও ছিল উদ্বেগজনক। পরে সচেতন মহল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো রক্ষা করার জন্য পাহারা দিয়েছে, যা প্রশংসাযোগ্য। কিন্তু এর আগে ঘটে যাওয়া ধ্বংসযজ্ঞের কি বিচার হবে না?     

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সম্প্রতি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার কথা বলেছেন। ‘আমরা এক মানুষ, এক পরিবার’ বলে আশ্বস্ত করেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে। এই বোধ নিয়ে এগিয়ে যেতে পারলে ভালো হয়। কিন্তু আমাদের সমাজে ধর্ম নিয়ে যে রাজনীতি, অন্য ধর্মের প্রতি অসহিষ্ণুতা ইত্যাদি বিদ্যমান, তা যদি এভাবেই থাকে, তাহলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আসবে কোত্থেকে? এটা তো একটি চর্চার ব্যাপার। মনের মধ্যে যদি ভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃণা আর বিদ্বেষ থাকে, তাহলে সবাই এক পরিবার হবে কী করে? 

ঋত্বিক ঘটক নিজ কীর্তিতেই আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেয়েছেন। যেটুকু জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজকে ঋত্বিক ঘটকের বাড়ির ৩৪ শতাংশ জমি ইজারা দেওয়া হয়। বাকি অংশে ঋত্বিক ঘটকের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ির ঘরগুলো দাঁড়িয়ে ছিল। কলেজ কর্তৃপক্ষ একাধিকবার এই জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। সাংস্কৃতিক কর্মীরা সেই অপচেষ্টা রুখে দিয়েছে। এবারের ডামাডোলের মধ্যে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করল যারা, তাদের খুঁজে বের করতে হবে। সিসিটিভির ফুটেজ থাকায় অপকর্ম যারা করল তাদের চিহ্নিত করা গেলে এর হোতাদেরও শনাক্ত করা যাবে। 

যে জাতি তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সম্মান করে না, সে জাতি মহান হয়ে ওঠে না। আমরা কোন পথে যাব, তা আমাদের নিজেদেরই ঠিক করতে হবে। ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি ধ্বংসের তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে এই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের বিচার ও শাস্তি দাবি করি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প

‘ওরা সোনার তৈরি, আমরা মাটির’, কারখানার ভেতর আত্মহত্যার আগে শ্রমিকের ফেসবুক পোস্ট

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত