Ajker Patrika

রম্যলেখকের জমি নিয়ে জালিয়াতি

ইয়াহ্ইয়া মারুফ, সিলেট
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২২, ১০: ০৮
রম্যলেখকের জমি নিয়ে জালিয়াতি

প্রয়াত রম্যলেখক আতাউর রহমানের প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের জমি অন্যের নামে লিখে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সিলেট জোনের তৎকালীন সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা ও আপিল কর্মকর্তা মহিতোষ চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে। সেটেলমেন্ট বিভাগের তদন্তে জালিয়াতির এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার নগর গ্রামের আতাউর রহমানের অনুকূলে ১৯৯৪ সালের ২১ মার্চ শাহজালাল হাউজিং এস্টেট সিলেটের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহজালাল উপশহরের জে ব্লকের ৪ নম্বর রোডে সাড়ে ৮ শতক সমপরিমাণের ২৯ নম্বর প্লটটি ৯৯ বছরের জন্য ইজারা দেন। ২০০৭ সালে প্লটটির ইজারা দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়।

খ্যাতিমান রম্যলেখক আতাউর রহমান বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মহাপরিচালক হিসেবে ২০০২ সালে অবসরে যান। এর আগে মাঠপর্যায়ে জরিপ চলাকালে প্লটটি নিজের নামে রেকর্ড করাতে পারেননি। এ সুযোগে প্লটের জমি জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ও তারা মিয়া গংদের নামে রেকর্ড হয়। পরে আতাউর বাদী হয়ে তাঁর নামে রেকর্ড সংশোধনের জন্য দুটি আপত্তি মামলা করেন। ২০১৫ সালে মামলা খারিজ করে দেন আপত্তি অফিসার। পরে তিনি আপিল করেন। সিলেট জোনের তৎকালীন সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা ও আপিল কর্মকর্তা মহিতোষ চন্দ্র দাস ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর এই আপিল মামলার শুনানি করেন। ওই দিনই রায় ঘোষণা করেন। আতাউর রহমানের নামে ওই ভূমির রেকর্ড দিয়ে নিজে স্বাক্ষর করেন। আতাউর রহমানের নামে রেকর্ড করে পরচা দেন।

এদিকে ২০২১ সালের ২৮ আগস্ট আতাউর রহমান মারা যান। এরপর তাঁর স্ত্রী নাছিমা আক্তার চৌধুরী তাঁর ছোট বোনের স্বামী জুনেদ আহমদকে আমমোক্তার নিযুক্ত করেন। জুনেদ মুদ্রিত কপি সংগ্রহ করে দেখেন ওই ভূমির মালিক জকিগঞ্জ উপজেলার ফুলতলা গ্রামের আব্দুস শহীদ চৌধুরী।

জালিয়াতি করে অন্যের নামে ভূমি লিখে দেওয়ার অভিযোগে আতাউর রহমানের ভায়রা জুনেদ আহমদ চলতি বছরের ১৬ জুন ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত দেন।

২৫ জুলাই অধিদপ্তরের উপপরিচালক শেখ মুর্শিদুল ইসলাম বিষয়টি তদন্ত করার জন্য সিলেটের জোনাল সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাকে চিঠি দেন। পরে সিলেট সদরের ভারপ্রাপ্ত সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা মো. রহিম উল্লাহকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত ২১ সেপ্টেম্বর ৭ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে বলা হয়, ‘আপিল মামলার রায় প্রদান করেছেন আপিল অফিসার ও সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মহিতোষ চন্দ্র দাস। আদেশপত্রের রায় তিনি নিজ হাতে পরিবর্তন করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়।’

সিলেটের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মুহাম্মদ ওবায়দুর রহমান ২৭ সেপ্টেম্বর ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে প্রতিবেদন পাঠান। এতে বলা হয়, ‘বিভিন্ন অংশে অবৈধ শব্দ ও লাইন সংযোজন করে রায় পরিবর্তন করা হয়েছে। ...আপিল অফিসার মহিতোষ চন্দ্র দাস (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) দায়ী কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।’

এ ব্যাপারে মহিতোষ চন্দ্র দাসের বক্তব্য জানতে তাঁর তিনটি মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। 

জুনেদ আহমদ বলেন, ‘আমরা এই জালিয়াতের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি যথাযথ প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’

এদিকে আব্দুস শহীদ চৌধুরী ২০০৭ সালে মারা যান। তাঁর ছেলে আলবাব হোসেন বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তাকে সব কাগজপত্র দিয়েছি। আতাউর রহমানের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই, গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিরোধ আছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ-সংক্রান্ত একটি মামলা হাইকোর্টে চলমান।

সিলেটের জোনাল সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা মুহাম্মদ ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘এখনো ফিরতি কোনো পত্র অধিদপ্তর আমাদের দেয়নি।’

ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন/যুগ্ম সচিব) এ টি এম নাসির মিয়া বলেন, কোনো কর্মকর্তা যদি এ রকম জালিয়াতি করে থাকেন এবং তদন্তে এর প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে কোনোভাবেই রক্ষা পাবেন না। অবসরে গেলেও ছাড় নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

ঘন ঘন নাক খুঁটিয়ে স্মৃতিভ্রংশ ডেকে আনছেন না তো!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত