Ajker Patrika

নোটিশেও তোয়াক্কা নেই, দখল ছাড়েনি কেউ

অরূপ রায়, সাভার
নোটিশেও তোয়াক্কা নেই, দখল ছাড়েনি কেউ

ঢাকার সাভারের নামাবাজারের পর আশুলিয়ার নয়ারহাট বাজারের পাশে বংশী নদী ও তীর দখল করে গড়ে তোলা অর্ধশতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ইতিমধ্যে ওই সব স্থাপনা অপসারণের পাশাপাশি খাসজমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য দখলদারদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এর পরেও বহালতবিয়তে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন দখলদারেরা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নয়ারহাট বাসস্ট্যান্ড থেকে ঘুঘুদিয়া ও ঘোরাদিয়া হয়ে সাভারের বেদেপাড়া পর্যন্ত একটি সড়ক রয়েছে। সড়কের নয়ারহাট অংশের দুপাশে বাজার থাকায় যানবাহন চলাচলে সমস্যা হতো। ব্যবসায়ীরাও স্বচ্ছন্দে বেচা-কেনা করতে পারতেন না। এই পরিপ্রেক্ষিতে বছর দশেক আগে বংশী নদী ও তীর ভরাট করে বিকল্প সড়ক নির্মাণ করেন স্থানীয় পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ান।

এদিকে একই সময়ে বিকল্প সড়কের পাশে নদীর ভরাট করা অংশ দখল করে অর্ধশতাধিক আধপাকা স্থাপনা নির্মাণ করেন প্রভাবশালীরা।এরপর ওই ঘর কিনে ও ভাড়া নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন অনেকে। এ দখলদারদের তালিকায় খোদ ইউপি চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ানের নামও রয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি খাসজমির ছেড়ে দেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে তাঁদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশে গত ৩০ অক্টোবরের মধ্যে দখল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়, যাতে চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ানসহ ৪৪ জন দখলদারের নাম রয়েছে। কিন্তু গতকাল রোববার পর্যন্ত একজন দখলদারও তাঁদের দখল ছাড়েননি।

সরেজমিনে নয়ারহাট বাজার এলাকায় মহাসড়ক থেকে নামলেই নদীর তীরে একটি বালুর গদি চোখে পড়ে। কয়েক মাস আগে নদী ভরাট করে এই গদি বানিয়ে ব্যবসা করছেন রাসেল তালুকদার নামে একজন। এর পরেই এক সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা অর্ধশতাধিক দোকান দেখা যায়। এসব দোকানের একটি ‘সাগর মিষ্টি ঘর’। বছর দশেক আগে ১০ লাখ টাকায় খাস জমি কিনে দোকান করেছেন ব্যবসায়ী গোপাল ঘোষ।

গোপাল ঘোষ বলেন, ‘নদী ভরাট করা জায়গা কেনার সময় চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ান আশ্বাস দিয়েছিলেন, আমাদের কখনো উচ্ছেদ করা হবে না। এ ভরসায় খাসজমির দখল কিনে দোকান দিয়েছিলাম।’

অপর এক দখলদার বাবুল হোসেন বলেন, ‘দখল ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ পেয়েছি। চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ানসহ মুরুব্বিরা চেষ্টা করছেন, যাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযান না চালানো হয়।’

এদিকে পাথালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ানের দখলে থাকা খাসজমিতে স্থাপনা নির্মাণ করে ব্যক্তিগত কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করেছেন। গতকাল রোববার ওই কার্যালয়ে গিয়ে কথা হয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি ফয়জুল হকের সঙ্গে।

ফয়জুল হক বলেন, ‘জনগণের স্বার্থে চেয়ারম্যান এই অফিসটি পরিচালনা করছিলেন। সরকারের প্রয়োজনে তা ভেঙে দিলে আমাদের কী করার আছে। তবে চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে না ভাঙে।’

জানতে চাইলে চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ান বলেন, ‘জনগণের চলাচলের জন্য সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছিল। আর সড়কটি যাতে নদীতে ভেঙে না যায় তার সাপোর্ট হিসেবে দোকানগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল।’

সাভারের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘দখল ছেড়ে দেওয়ার জন্য দখলদারদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দখল না ছাড়লে শিগগিরই তাঁদের উচ্ছেদ করা হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত