Ajker Patrika

ভুল চিকিৎসায় বিপর্যস্ত মানুষ

ঘিওর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ০৭
ভুল চিকিৎসায় বিপর্যস্ত মানুষ

মানিকগঞ্জের ঘিওরে দীর্ঘদিন ধরে মানহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে চিকিৎসার নামে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। রমরমা বাণিজ্যের ফাঁদে পড়ে পরীক্ষার নামে রোগীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। এমনকি ভুল চিকিৎসা ও ভুল রিপোর্টে ভোগান্তিতে পড়ে বিপর্যস্ত হচ্ছেন গ্রামের মানুষ। হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখেও যেন দেখছেন না।

ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাত্র এক শ গজের মধ্যেই গড়ে উঠেছে ৩টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এ ছাড়া উপজেলা সদরে রয়েছে আরও ২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক। এসব প্রতিষ্ঠান মানছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো নিয়মনীতি। জানা গেছে, ঘিওর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত কিছু কর্মকর্তার সহায়তায় এ প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হচ্ছে। চিকিৎসকেরা প্রেসক্রিপশনে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য পাঠান এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের খরচ এবং ডাক্তারদের কমিশনসহ অসহায় রোগীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

অধিকাংশ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নেই কোনো নিবন্ধন ও পরিবেশগত ছাড়পত্র। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। এদের মধ্যে দু-একটি বাদে বেশির ভাগেরই নেই নবায়ন। তা সত্ত্বেও এসব প্রতিষ্ঠান দাপটের সঙ্গে রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে যাদের বৈধ কাগজপত্রের মধ্যে একমাত্র ট্রেড লাইসেন্সই সম্বল। সরকারি হাসপাতালের কাছাকাছি গড়ে ওঠা দালাল নির্ভর এসব ক্লিনিকে গিয়ে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন মানুষ। 
অনুসন্ধানে জানা যায়, এক শ্রেণির দালাল ও সরকারি হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মিলে এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। উপজেলার প্রাণকেন্দ্র ঘিওরে বেশ কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক ঘুরে দেখা গেছে, অদক্ষ টেকনিশিয়ান ও প্যারামেডিকেল চিকিৎসক দিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে স্বাস্থ্য সেবা। এদের মধ্যে জনসেবা মেডিকেল সেন্টার, ন্যাশনাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কামরুন্নাহার মেডিকেল সেন্টার, ঘিওর এক্স-রে অ্যান্ড প্যাথলজি সেন্টার ও ঘিওর আধুনিক হাসপাতাল অন্যতম।

কামরুন্নাহার মেডিকেল সেন্টারের সাইনবোর্ডে দেখে জানা যায়, এখানে অ্যানালাইজার মেশিনে সব ধরনের রক্ত পরীক্ষাসহ সব ধরনের হরমোন পরীক্ষা করা হয়। এ ছাড়া এখানে ক্যানসার মার্কার ও কার্ডিয়াক মার্কার করা হয়। পাশেই রয়েছে, ন্যাশনাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে আরেক নামসর্বস্ব ডায়াগনস্টিক সেন্টার। যার ভেতরে প্রবেশ করলে প্রথমেই শরীরে আতঙ্ক জাগে। কারণ, ডোবা জায়গার প্রায় ৫০ ফিট ওপরে কোনোমতে নির্মাণ করা হয়েছে এ সেন্টারের ভবন। শুধু তাই নয়, এখানকার এক্স-রে রুমের সামনে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত বিশাল আকৃতির এক ফাটল। যে ফাটলের দিকে চোখ গেলে মনে হবে এখনই যেন ভবনটি ভেঙে ডোবায় পড়ে যাবে।

উপজেলার রাধাকান্তপুর গ্রামের রোগী আব্দুর রহিম বলেন, ‘মাইকিং শুনে আমি একবার ডাক্তার দেখাতে ঘিওর জনসেবায় গিয়েছিলাম। সেখানে তাঁরা ডাক্তার দেখিয়ে এক্স-রে, আলট্রা ও বিভিন্ন প্রকার রক্ত পরীক্ষা করে দেড় হাজার টাকা নিয়েছিল। কিন্তু আমার কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পরে জানতে পেরেছি, তাঁরা আমাকে যে ডাক্তার দেখিয়ে দিয়েছিলেন তিনি এমবিবিএস ডাক্তার নন।’

সিংজুরি গ্রামের বাচ্চু মোল্লা বলেন, ‘মাসখানেক আগে আমার ছেলের বউয়ের ঘিওর আধুনিক হাসপাতালে সিজার হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত পুরোপুরি ঘা শুকায়নি এবং অপারেশনের পর থেকে তাঁর মেরুদণ্ডে প্রচুর ব্যথা। সব মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।’ ন্যাশনাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী মো. হ‌ুমায়ূন বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের সিভিল সার্জন অফিস থেকে অনুমোদন নেওয়া আছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত