Ajker Patrika

মানিকগঞ্জ হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারের ১০ যন্ত্র গায়েব

মঞ্জুর রহমান, মানিকগঞ্জ
মানিকগঞ্জ হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারের ১০ যন্ত্র গায়েব

মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার থেকে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র গায়েব হয়ে গেছে। এ ঘটনায় চিকিৎসকদের সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতাল সূত্র ও অপারেশন থিয়েটারের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্সকে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশের সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ১০টি ডায়াথার্মি যন্ত্র সরবরাহ করা হয়। একেকটি যন্ত্রের দাম ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। সিজারসহ যেকোনো রোগীর অস্ত্রোপচারের পর ক্ষতস্থানে এই যন্ত্র দিয়ে ছ্যাঁক দিলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়। ওই বছরের ২৯ নভেম্বর হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে সিএমএসডির সংশ্লিষ্ট যন্ত্র সরবরাহকারী ঠিকাদার যন্ত্রগুলো স্থাপন করে। যন্ত্রগুলো স্থাপন শেষে সনদপত্রে অপারেশন থিয়েটারের ইনচার্জ হিসেবে সিনিয়র স্টাফ নার্স জান্নাত আরা আক্তার ওরফে শিমুলের স্বাক্ষর নেওয়া হয়। সম্প্রতি সম্পদ ব্যবস্থাপনার অনলাইন এন্ট্রির জন্য পরিদর্শনকালে অপারেশন থিয়েটারে ওই যন্ত্রগুলো পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনায় ১ ফেব্রুয়ারি অপারেশন থিয়েটারের ইনচার্জ জান্নাত আরা আক্তার ওরফে শিমুলকে তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন। শিমুল বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সাধারণ সম্পাদক। নোটিশে ওই ১০টি যন্ত্র এখন কোথায়, কী অবস্থায় আছে, তার সুস্পষ্ট জবাব চাওয়া হয়। এই নোটিশের অনুলিপি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, অধিদপ্তরের (সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট) লাইন ডিরেক্টর, অধিদপ্তরের (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) পরিচালক ও পরিচালক (স্বাস্থ্য) ঢাকা বিভাগকে পাঠানো হয়। শিমুল ৪ ফেব্রুয়ারি কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছেন।

জান্নাত আরা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার কোনো ভিত্তি নেই। মিথ্যা অভিযোগ। ফোনে আর কিছু বলব না। বাকি কথা আপনার সামনে গিয়ে বলব। সবকিছু জানলে আপনার লিখতে সুবিধা হবে।’ তাঁর দাবি, এ ঘটনার সঙ্গে অন্যরা জড়িত থাকতে পারেন।

১০টি যন্ত্র চুরির ঘটনায় ৬ ফেব্রুয়ারি পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কমিটির প্রধান হলেন সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট জাহাঙ্গীর মো. সারোয়ার। সদস্যসচিব হলেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) কাজী এ কে এম রাসেল। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত করে সুস্পষ্ট মতামত, সুপারিশসহ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করলে তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি এখনো কিছু জানেন না। তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে কথা বলে পরে জানাবেন। প্রায় তিন ঘণ্টা পর আবার ফোন দিলে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।

তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. জাহাঙ্গীর মো. সারোয়ার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাকে তদন্ত কমিটির সভাপতি করার বিষয়টি লোকমুখে জেনেছি। তবে এখনো হাতে চিঠি পাইনি। চিঠি পেলে আপনাদের জানাতে পারব।’

এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে পারবেন না।

এর আগে গত বছরের ৬ অক্টোরর জান্নাত আরা আক্তারের বিরুদ্ধে অনিয়মের উল্লেখ করে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন তাঁরই সহকর্মীরা। এ ব্যাপারে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর থেকে তদন্ত কমিটিও করা হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত