কামরুল হাসান
দুবার ফোন বেজেছে। তৃতীয়বার বাজতেই ধরে ফেললাম। অফিসের ফোন। ওপারে টেলিফোন অপারেটর সুফলা। তাঁর কণ্ঠে উদ্বেগ, পিলখানা থেকে কে একজন অফিসের টিঅ্যান্ডটি নম্বরে ফোন করে বলেছেন, সেখানে খুব গন্ডগোল হচ্ছে। আচ্ছা, দেখছি, বলে ফোন রাখতে না রাখতেই আবার ফোন। ভাইয়া, অনবরত ফোন আসছে, এখন গোলাগুলি শুরু হয়ে গেছে।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, বুধবারের সকাল। গোলাগুলির কথা শুনে বেশ ঘাবড়ে গেলাম। সকাল থেকে বিডিআরের বার্ষিক দরবার হওয়ার কথা। কিন্তু গোলাগুলি কেন? বিডিআরে পরিচিত কয়েকজন কর্মকর্তাকে ফোন দিলাম। কেউ ধরলেন না। সিলেট সেক্টর কমান্ডার গুলজার উদ্দিন আহমেদের ফোনও লাগাতার ব্যস্ত। একটু পর আবার সুফলার ফোন। বললেন, আশপাশের বাসিন্দারা ফোন করছেন ভাইয়া, পরিস্থিতি নাকি খুবই খারাপ।
সুফলাকে বললাম, নিউজের সবাইকে ফোন করে ঘটনাটা জানান। আমি পিলখানায় যাচ্ছি বলে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। হঠাৎ ফোন–কর্নেল গুলজার উদ্দিন আহমেদের। ভয়ার্ত কণ্ঠ। বাঘের মতো সাহসী মানুষের এমন কণ্ঠস্বর শুনে চমকে গেলাম। কথা বলছেন নিচু গলায়–ফিসফিসিয়ে। বললেন, ‘বিদ্রোহী সৈনিকেরা আমাদের ঘিরে ফেলেছে। বাঁচব কি না, জানি না। প্লিজ, যাকে পারেন তাকে বলেন।’ শুনে রক্ত ঠান্ডা হয়ে গেল। কী করব বুঝতে পারছি না। ফোন দিলাম ডিএমপির কমিশনার নাঈম আহমেদকে। তাঁর ফোন লাগাতার ব্যস্ত। র্যাবের মহাপরিচালক হাসান মাহমুদ খন্দকারকে ফোন করতেই বললেন, তিনি ঘটনাস্থলের দিকেই যাচ্ছেন। ফোন দিলাম পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদকে। তাঁর গলা কাঁপছে। বললেন, ‘মাজহার-বাঁধন ভেতরে। বাঁধন বারবার ফোন করছে। মেয়ের অবস্থা শুনে তার মা-ও কাঁদছে।’ আইজিপির কথায় অসহায়ের সুর।
নাম দুটো শুনেই মনে পড়ে গেল, বাঁধন আইজিপির বড় মেয়ে। মাত্র কয়েক মাস আগে বিয়ে হয়েছে। পাত্র ক্যাপ্টেন মাজহার বিডিআরের মহাপরিচালক শাকিল আহমেদের এডিসি। বিডিআরের দরবার হলের সেই বিয়েতে আমিও ছিলাম। বিয়ের সাজে বাঁধনকে পরীর মতো লাগছিল। বাঁধনের বিপদের কথা শুনে বেশ খারাপ লাগল। কথা না বাড়িয়ে ফোন রেখে দিলাম।
বুধবার ঢাকার রাস্তায় খুব জ্যাম থাকে। কিন্তু কী কারণে যেন সেদিন রাস্তা ফাঁকাই ছিল। বেইলি রোড থেকে ধানমন্ডি ২ নম্বর সড়ক পর্যন্ত গেলাম বিনা বাধায়। ২ নম্বর সড়কের শেষ মাথায় লেকের উল্টো দিকে আম্বালা ইন হোটেল। জায়গাটিকে নিরাপদ মনে হলো। ততক্ষণে কয়েকজন টিভি সাংবাদিক আম্বালার সামনে দাঁড়িয়ে গেছেন।
জিগাতলায় বিডিআর ৪ নম্বর গেটের সামনে দিয়ে দু-একটা গাড়ি চলছে। পিলখানার ভেতর থেকে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। তবে সেটা খুব বেশি নয়। ভেতরে ভয়ংকর ঘটনা ঘটছে সবাই সেটা আঁচ করেছেন, কিন্তু কী হচ্ছে তা কেউ বুঝতে পারছেন না। কয়েকজন সাংবাদিক ৪ নম্বর গেটের দিকে একবার যাওয়ার চেষ্টা করলেন, আবার ফিরে আসছেন। একটু পরে ঝড়ের বেগে একটি পিকআপ এসে থামল জিগাতলা গেটের সামনে। পিকআপ থেকে জনা দশেক জওয়ান নেমেই শুরু করে দিল এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ। আমার বন্ধু লিটন হায়দার জিগাতলার দিক থেকে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল, অল্পের জন্য বেঁচে গেলাম। সেখানে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
জিগাতলার গেটটা এতক্ষণ ফাঁকাই ছিল। এবার সশস্ত্র বিদ্রোহী সৈনিকেরা সেটা দখল করে নিল। আম্বালার সামনে দাঁড়িয়ে আমরা শুধু গুলির আওয়াজ শুনছি। এর মধ্যে র্যাব ও পুলিশের বিশাল দল এসে গেছে। সোয়াত এসেছে এম ফোর কারবাইন নিয়ে। কিন্তু এত গোলাগুলির মধ্যে আগে কী করতে হবে তা বোঝার চেষ্টা করছে।
বেলা সাড়ে ১১টার পর এলেন প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সঙ্গে হুইপ মির্জা আজম। একটা সাদা পতাকা ও হ্যান্ডমাইক নিয়ে তারা ৪ নম্বর গেটের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু গুলির কারণে পিছিয়ে এলেন। তার পরও জাহাঙ্গীর কবির নানক হ্যান্ডমাইক দিয়ে সবাইকে শান্ত হয়ে আলোচনায় বসার অনুরোধ করলেন। কয়েক মিনিট গোলাগুলি নেই। আবার গুলির শব্দ। এবার আরও ব্যাপক। কান ফাটা আওয়াজ আসছে পিলখানার ভেতর থেকে। ভারী আওয়াজ।
বেলা ২টার দিকে প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও হুইপ মির্জা আজম আবার গেলেন ৪ নম্বর গেটের কাছে। সঙ্গে নেত্রকোনার এমপি মুশতাক আহমেদ রুহী, কর্নেল তাহেরের ভাই ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল, গাইবান্ধার এমপি মাহবুব আরা গিনি। এবার কাজ হলো। বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা আলোচনায় বসতে সম্মত হলেন। তবে শর্ত, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।
সাড়ে ৩টার দিকে ১৪ জন বিডিআর সদস্যকে নেওয়া হলো প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে, আলোচনার জন্য। তাঁরা ফিরে এসে সবাইকে অস্ত্র জমা দিয়ে জিম্মিদের ছেড়ে দিতে বলেন। কিন্তু জওয়ানেরা কেউ সে কথা শুনলেন না। আবার আলোচনা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, হুইপ মির্জা আজম বিডিআর জওয়ানদের নিয়ে বসেন হোটেল আম্বালার ওপরে। আলোচনা চলতে থাকে, রাতও বাড়ে। আমরা হোটেলের নিচে অপেক্ষা করছি। সামনে র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। সবাই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। খবর আসছে, বিদ্রোহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।
বিকেলের দিকে র্যাবের মহাপরিচালক হাসান মাহমুদ খন্দকার আমাকে ডেকে বলেন, আইজিপি খুবই ভেঙে পড়েছেন। তিনি কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। সকাল থেকে কিছু মুখেও দেননি। আইজিপি নূর মোহাম্মদকে আমি অনেক বছর ধরে চিনি। কিন্তু তাঁর এমন অবস্থা কোনো দিন দেখিনি।
আমি তাঁর কাছে গিয়ে হাতটা ধরতেই অসহায়ের মতো আমাকে বলেন, ‘আপনারা সবাই এত ক্ষমতাধর মানুষ, তার পরও আমার মেয়েটাকে বের করে আনতে পারছেন না?’
আইজিপির এ কথার কোনো জবাব আমি দিতে পারি না। অসহায় পিতার বেদনা আমাকেও ব্যথিত করে। আমি তাকিয়ে দেখি আইজিপির চোখে পানি। জীবনে প্রথম তাঁকে কাঁদতে দেখলাম।
গভীর রাতে সিদ্ধান্ত হলো কয়েকজন পিলখানার ভেতরে যাবেন। রাত ১২টার দিকে আম্বালার সামনে এল প্রধানমন্ত্রীর ব্যবহার করা বুলেটপ্রুফ গাড়ি। সেই গাড়িতে উঠলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও আইজিপি নূর মোহাম্মদ। রাত ১টায় তাঁরা পিলখানায়। পিলখানার ভেতরটা তখন মিশকালো অন্ধকার। জওয়ানরা সব বাতি নিভিয়ে দিয়েছেন।
প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম তাঁর জবানবন্দিতে বলেছিলেন, রাতের বেলা বিডিআর জওয়ানরা অনেকক্ষণ তাঁদের ফাঁকা মাঠের ভেতরে বসিয়ে রাখেন। অনেক কিছু বলার পরও তাঁদের কোয়ার্টার গার্ডে নিয়ে যেতে রাজি হচ্ছিলেন না। পরে কয়েকটি বাসায় গিয়ে তাঁরা ভীতসন্ত্রস্ত পরিস্থিতি দেখেন।
এক সেনা কর্মকর্তা তাঁর সাক্ষ্যে বলেছিলেন, বিদ্রোহী জওয়ানেরা যখন দরবার হলে ডিজিসহ সবাইকে জিম্মি করেছিলেন, তখন এডিসি মাজহার তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কেঁদে কেঁদে কথা বলছিলেন। সম্ভবত বাঁধনের সঙ্গে সেটাই তাঁর স্বামীর শেষ কথা। অনেক দেনদরবারের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ১০টি পরিবার ও আইজিপির মেয়ে বাঁধনকে উদ্ধার করতে পারেন। বাঁধন ছিলেন অফিসার্স মেসের একটি কক্ষে। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে তাঁরা পিলখানা থেকে বের হন। বুলেটপ্রুফ গাড়ির মাঝে একটি আসনে ছিলেন আইজিপি আর তাঁর মেয়ে। গণমাধ্যমের ক্যামেরার জ্বলে ওঠা আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল তিনি চোখ মুছছেন। ক্ষমতাধর এক পিতা চরম অসহায়ত্ব সঙ্গী করে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু বাঁধন? বাঁধন তো ফিরেছেন একা!
আরও পড়ুন:
দুবার ফোন বেজেছে। তৃতীয়বার বাজতেই ধরে ফেললাম। অফিসের ফোন। ওপারে টেলিফোন অপারেটর সুফলা। তাঁর কণ্ঠে উদ্বেগ, পিলখানা থেকে কে একজন অফিসের টিঅ্যান্ডটি নম্বরে ফোন করে বলেছেন, সেখানে খুব গন্ডগোল হচ্ছে। আচ্ছা, দেখছি, বলে ফোন রাখতে না রাখতেই আবার ফোন। ভাইয়া, অনবরত ফোন আসছে, এখন গোলাগুলি শুরু হয়ে গেছে।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, বুধবারের সকাল। গোলাগুলির কথা শুনে বেশ ঘাবড়ে গেলাম। সকাল থেকে বিডিআরের বার্ষিক দরবার হওয়ার কথা। কিন্তু গোলাগুলি কেন? বিডিআরে পরিচিত কয়েকজন কর্মকর্তাকে ফোন দিলাম। কেউ ধরলেন না। সিলেট সেক্টর কমান্ডার গুলজার উদ্দিন আহমেদের ফোনও লাগাতার ব্যস্ত। একটু পর আবার সুফলার ফোন। বললেন, আশপাশের বাসিন্দারা ফোন করছেন ভাইয়া, পরিস্থিতি নাকি খুবই খারাপ।
সুফলাকে বললাম, নিউজের সবাইকে ফোন করে ঘটনাটা জানান। আমি পিলখানায় যাচ্ছি বলে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। হঠাৎ ফোন–কর্নেল গুলজার উদ্দিন আহমেদের। ভয়ার্ত কণ্ঠ। বাঘের মতো সাহসী মানুষের এমন কণ্ঠস্বর শুনে চমকে গেলাম। কথা বলছেন নিচু গলায়–ফিসফিসিয়ে। বললেন, ‘বিদ্রোহী সৈনিকেরা আমাদের ঘিরে ফেলেছে। বাঁচব কি না, জানি না। প্লিজ, যাকে পারেন তাকে বলেন।’ শুনে রক্ত ঠান্ডা হয়ে গেল। কী করব বুঝতে পারছি না। ফোন দিলাম ডিএমপির কমিশনার নাঈম আহমেদকে। তাঁর ফোন লাগাতার ব্যস্ত। র্যাবের মহাপরিচালক হাসান মাহমুদ খন্দকারকে ফোন করতেই বললেন, তিনি ঘটনাস্থলের দিকেই যাচ্ছেন। ফোন দিলাম পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদকে। তাঁর গলা কাঁপছে। বললেন, ‘মাজহার-বাঁধন ভেতরে। বাঁধন বারবার ফোন করছে। মেয়ের অবস্থা শুনে তার মা-ও কাঁদছে।’ আইজিপির কথায় অসহায়ের সুর।
নাম দুটো শুনেই মনে পড়ে গেল, বাঁধন আইজিপির বড় মেয়ে। মাত্র কয়েক মাস আগে বিয়ে হয়েছে। পাত্র ক্যাপ্টেন মাজহার বিডিআরের মহাপরিচালক শাকিল আহমেদের এডিসি। বিডিআরের দরবার হলের সেই বিয়েতে আমিও ছিলাম। বিয়ের সাজে বাঁধনকে পরীর মতো লাগছিল। বাঁধনের বিপদের কথা শুনে বেশ খারাপ লাগল। কথা না বাড়িয়ে ফোন রেখে দিলাম।
বুধবার ঢাকার রাস্তায় খুব জ্যাম থাকে। কিন্তু কী কারণে যেন সেদিন রাস্তা ফাঁকাই ছিল। বেইলি রোড থেকে ধানমন্ডি ২ নম্বর সড়ক পর্যন্ত গেলাম বিনা বাধায়। ২ নম্বর সড়কের শেষ মাথায় লেকের উল্টো দিকে আম্বালা ইন হোটেল। জায়গাটিকে নিরাপদ মনে হলো। ততক্ষণে কয়েকজন টিভি সাংবাদিক আম্বালার সামনে দাঁড়িয়ে গেছেন।
জিগাতলায় বিডিআর ৪ নম্বর গেটের সামনে দিয়ে দু-একটা গাড়ি চলছে। পিলখানার ভেতর থেকে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। তবে সেটা খুব বেশি নয়। ভেতরে ভয়ংকর ঘটনা ঘটছে সবাই সেটা আঁচ করেছেন, কিন্তু কী হচ্ছে তা কেউ বুঝতে পারছেন না। কয়েকজন সাংবাদিক ৪ নম্বর গেটের দিকে একবার যাওয়ার চেষ্টা করলেন, আবার ফিরে আসছেন। একটু পরে ঝড়ের বেগে একটি পিকআপ এসে থামল জিগাতলা গেটের সামনে। পিকআপ থেকে জনা দশেক জওয়ান নেমেই শুরু করে দিল এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ। আমার বন্ধু লিটন হায়দার জিগাতলার দিক থেকে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল, অল্পের জন্য বেঁচে গেলাম। সেখানে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
জিগাতলার গেটটা এতক্ষণ ফাঁকাই ছিল। এবার সশস্ত্র বিদ্রোহী সৈনিকেরা সেটা দখল করে নিল। আম্বালার সামনে দাঁড়িয়ে আমরা শুধু গুলির আওয়াজ শুনছি। এর মধ্যে র্যাব ও পুলিশের বিশাল দল এসে গেছে। সোয়াত এসেছে এম ফোর কারবাইন নিয়ে। কিন্তু এত গোলাগুলির মধ্যে আগে কী করতে হবে তা বোঝার চেষ্টা করছে।
বেলা সাড়ে ১১টার পর এলেন প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সঙ্গে হুইপ মির্জা আজম। একটা সাদা পতাকা ও হ্যান্ডমাইক নিয়ে তারা ৪ নম্বর গেটের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু গুলির কারণে পিছিয়ে এলেন। তার পরও জাহাঙ্গীর কবির নানক হ্যান্ডমাইক দিয়ে সবাইকে শান্ত হয়ে আলোচনায় বসার অনুরোধ করলেন। কয়েক মিনিট গোলাগুলি নেই। আবার গুলির শব্দ। এবার আরও ব্যাপক। কান ফাটা আওয়াজ আসছে পিলখানার ভেতর থেকে। ভারী আওয়াজ।
বেলা ২টার দিকে প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও হুইপ মির্জা আজম আবার গেলেন ৪ নম্বর গেটের কাছে। সঙ্গে নেত্রকোনার এমপি মুশতাক আহমেদ রুহী, কর্নেল তাহেরের ভাই ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল, গাইবান্ধার এমপি মাহবুব আরা গিনি। এবার কাজ হলো। বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা আলোচনায় বসতে সম্মত হলেন। তবে শর্ত, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।
সাড়ে ৩টার দিকে ১৪ জন বিডিআর সদস্যকে নেওয়া হলো প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে, আলোচনার জন্য। তাঁরা ফিরে এসে সবাইকে অস্ত্র জমা দিয়ে জিম্মিদের ছেড়ে দিতে বলেন। কিন্তু জওয়ানেরা কেউ সে কথা শুনলেন না। আবার আলোচনা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, হুইপ মির্জা আজম বিডিআর জওয়ানদের নিয়ে বসেন হোটেল আম্বালার ওপরে। আলোচনা চলতে থাকে, রাতও বাড়ে। আমরা হোটেলের নিচে অপেক্ষা করছি। সামনে র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। সবাই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। খবর আসছে, বিদ্রোহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।
বিকেলের দিকে র্যাবের মহাপরিচালক হাসান মাহমুদ খন্দকার আমাকে ডেকে বলেন, আইজিপি খুবই ভেঙে পড়েছেন। তিনি কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। সকাল থেকে কিছু মুখেও দেননি। আইজিপি নূর মোহাম্মদকে আমি অনেক বছর ধরে চিনি। কিন্তু তাঁর এমন অবস্থা কোনো দিন দেখিনি।
আমি তাঁর কাছে গিয়ে হাতটা ধরতেই অসহায়ের মতো আমাকে বলেন, ‘আপনারা সবাই এত ক্ষমতাধর মানুষ, তার পরও আমার মেয়েটাকে বের করে আনতে পারছেন না?’
আইজিপির এ কথার কোনো জবাব আমি দিতে পারি না। অসহায় পিতার বেদনা আমাকেও ব্যথিত করে। আমি তাকিয়ে দেখি আইজিপির চোখে পানি। জীবনে প্রথম তাঁকে কাঁদতে দেখলাম।
গভীর রাতে সিদ্ধান্ত হলো কয়েকজন পিলখানার ভেতরে যাবেন। রাত ১২টার দিকে আম্বালার সামনে এল প্রধানমন্ত্রীর ব্যবহার করা বুলেটপ্রুফ গাড়ি। সেই গাড়িতে উঠলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও আইজিপি নূর মোহাম্মদ। রাত ১টায় তাঁরা পিলখানায়। পিলখানার ভেতরটা তখন মিশকালো অন্ধকার। জওয়ানরা সব বাতি নিভিয়ে দিয়েছেন।
প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম তাঁর জবানবন্দিতে বলেছিলেন, রাতের বেলা বিডিআর জওয়ানরা অনেকক্ষণ তাঁদের ফাঁকা মাঠের ভেতরে বসিয়ে রাখেন। অনেক কিছু বলার পরও তাঁদের কোয়ার্টার গার্ডে নিয়ে যেতে রাজি হচ্ছিলেন না। পরে কয়েকটি বাসায় গিয়ে তাঁরা ভীতসন্ত্রস্ত পরিস্থিতি দেখেন।
এক সেনা কর্মকর্তা তাঁর সাক্ষ্যে বলেছিলেন, বিদ্রোহী জওয়ানেরা যখন দরবার হলে ডিজিসহ সবাইকে জিম্মি করেছিলেন, তখন এডিসি মাজহার তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কেঁদে কেঁদে কথা বলছিলেন। সম্ভবত বাঁধনের সঙ্গে সেটাই তাঁর স্বামীর শেষ কথা। অনেক দেনদরবারের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ১০টি পরিবার ও আইজিপির মেয়ে বাঁধনকে উদ্ধার করতে পারেন। বাঁধন ছিলেন অফিসার্স মেসের একটি কক্ষে। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে তাঁরা পিলখানা থেকে বের হন। বুলেটপ্রুফ গাড়ির মাঝে একটি আসনে ছিলেন আইজিপি আর তাঁর মেয়ে। গণমাধ্যমের ক্যামেরার জ্বলে ওঠা আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল তিনি চোখ মুছছেন। ক্ষমতাধর এক পিতা চরম অসহায়ত্ব সঙ্গী করে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু বাঁধন? বাঁধন তো ফিরেছেন একা!
আরও পড়ুন:
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খান হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মহসিন মিয়াকে (৪৬) দুবাই থেকে দেশে ফিরিয়ে এনেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ইন্টারপোলের রেড নোটিশের ভিত্তিতে দুবাই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে এবং বাংলাদেশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
১ দিন আগেসবার সামনে পিটিয়ে হত্যা, পাথরে শরীর থেঁতলে দেওয়া, নিজের বাড়ির সামনে গুলি করে পায়ের রগ কেটে হত্যা, অস্ত্র দেখিয়ে সর্বস্ব ছিনতাই, চাঁদা না পেয়ে গুলি—এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা কয়েক দিন ধরে বেশ আলোচিত। কিন্তু পুলিশ অনেকটাই নির্বিকার। প্রতিটি ঘটনার সিটিটিভি ফুটেজ থাকলেও সব অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।
১২ দিন আগেএবার রাজধানীর শ্যামলীতে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, মানিব্যাগ, কাঁধের ব্যাগ ও মোবাইল ফোন নেওয়ার পর ছিনতাইকারীরা এক যুবকের পোশাক ও জুতা খুলে নিয়ে গেছে।
১৪ দিন আগেমোবাইল চুরির ঘটনায় বোরহান নামের এক তরুণকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ছেলেকে বাঁচাতে বোরহানের বাবা রুবির পরিবারের সাহায্য চান। বসে এক গ্রাম্য সালিস। তবে সেই সালিসে কোনো মীমাংসা হয় না। এরই মধ্য নিখোঁজ হয়ে যান বোরহান। এতে এলাকায় রব পড়ে বোরহানকে হত্যা ও লাশ গুম করে ফেলা হয়েছে। তখন বোরহানের বাবা থানায় অভিযোগ দা
২০ দিন আগে