কামরুল হাসান
দুদিন আগে মুন্সিগঞ্জের হাঁসাড়া কবরস্থানে গিয়েছিলাম। পাড়ার শেষ প্রান্তে সেই কবরখানা। পৃথিবীর সব ফুল সেখানে ফুটে আছে। লাল শিমুল ছেয়ে আছে কবরের ওপরে। আমের মুকুলে আগাম গুটিও ধরেছে। কান পাতলে মনে হয় মৃতেরা কথা বলছে।
কবরখানায় যেতে ভয় হয়, আমার মতো সেই ভয় হয়তো অনেকের আছে। আমরা তাই মৃত মানুষদের নিয়ে কোনো বিষোদ্গার করি না, কেবল স্তুতি করি। লোকে হয়তো সেটাই পছন্দ করে। কিন্তু সেই মানুষ যদি রাজনীতিবিদ হন? তবু!
আমার কাছে রাজনীতিবিদ মানে যাঁর কোনো আড়াল নেই, গোপন বিজন ঘরও নেই। তিনি হাটের লোকের মতো, তিনি বহুদূর থেকে হেঁটে আসা বাউলের মতো।
‘বহুদূর’ কথাটার মধ্যে একটি হাহাকার আছে, রাজনীতিবিদদের হয়তো তা-ও নেই। কিন্তু তাঁর জীবনে উত্থান-পতন আছে, ভালোমন্দ আছে। আছে ইতি ও নেতিবাচক দিক। কাজেই আমজনতা হিসেবে তাঁকে নিয়ে কথা বলা যেতেই পারে। সেই স্পর্ধায় আজ বলছি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার গল্প।
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার সঙ্গে আমার কস্মিনকালেও ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক ছিল না। থাকার কথাও নয়। গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে যতটুকু দরকার, তার থেকে একচুলও বেশি কথা হয়নি কোনো দিন। কিন্তু নাজমুল হুদা ও তাঁর স্ত্রী সিগমা হুদাকে আমার মনে হতো মহিরুহ। বিরাট ল ফার্ম, নামজাদা আইনজীবী। ডজন ডজন আইনজীবী সেখানে কাজ করেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা বড় মানুষ। কিন্তু সাংবাদিকতায় এসে যখন জানলাম,তাঁরা যে কয়টি গাড়ি ব্যবহার করেন, একটিরও কোনো কাগজপত্র নেই, ভুয়া নম্বরপ্লেট ব্যবহার করে দিনের পর দিন রাস্তায় চলছেন, তখন তার মূর্তি থেকে ভাবটুকু চলে গেল।
১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে শুনলাম, ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার সময় নাজমুল হুদা মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৪৩ সালের ৬ জানুয়ারি তাঁর জন্ম। সেই হিসাবে বয়স ৮০ বছর হওয়ার কথা। গড় বয়সের হিসাবে তিনি দীর্ঘায়ু ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরদিন পুরোনো কাগজপত্র ঘাঁটতে গিয়ে একটি জবানবন্দি চোখের সামনে পড়ে গেল। ওয়ান-ইলেভেনের সময় গ্রেপ্তার হয়ে তিনি সেই জবানবন্দি দিয়েছিলেন। কোত্থেকে সেটা পেয়েছিলাম, মনে নেই। তবে সেই জবানবন্দিতে নিজের সম্পর্কে তাঁর কিছু উপলব্ধি ছিল। এত দিন পর মনে হলো ‘আষাঢ়ে নয়’ এর পাঠকদের এটা জানানো উচিত।
নাজমুল হুদার জবানবন্দিতে নিজের জন্ম, শিক্ষা, পরিবার, বেড়ে ওঠা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আছে। কিন্তু আজকাল এসব তথ্য পাওয়া মোটেও কঠিন কিছু নয়। ল্যারি পেজের গুগল নামে একটি অনাথ আশ্রম আছে, সেখানে সার্চ দিলেই গেরস্তের গোলায় রাখা ধানের মতো গড়গড় করে সব তথ্য বেরিয়ে আসে। তবু যেটুকু না বললেই নয়, সেটুকু বলি।
জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালে জাগদল গঠন করলে হুদা সেই দলে যোগ দেন। ১৯৭৮ বিএনপি হলে তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের তথ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। এরপর ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ছিলেন যোগাযোগমন্ত্রী। ওয়ান-ইলেভেনের সময় তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির তিনটি মামলা হয়। ২০১০ সালের ২১ নভেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যখন তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করেন, তখন তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।
২০১১ সালে আবার তাঁর সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ২০১২ সালে তিনি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। পরে নাজমুল হুদা ও আবুল কালাম মিলে বিএনএফ গঠন করেন। কিন্তু কয়েক মাস পর কালাম তাঁকে বহিষ্কার করেন। এরপর তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জোট এবং মানবাধিকার পার্টি নামে দুটি দল গঠন করেন। তাতেও শেষ হয়নি, ২০১৫ সালে গঠন করেন তৃণমূল বিএনপি। নির্বাচন কমিশন সেই তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধনও দিয়েছিল। কিন্তু নাজমুল হুদা আর শেষ দেখে যেতে পারেননি।
২০০৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে বাঘা বাঘা ১৫ জন রাজনীতিকের সঙ্গে নাজমুল হুদাকেও গ্রেপ্তার করা হলো। সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শুরুতে প্রথম যে ৫০ জন দুর্নীতিবাজের তালিকা প্রকাশ করা হয়, তার ১৮ নম্বরে ছিল হুদার নাম। গ্রেপ্তারের পর তাঁর ধানমন্ডির বাড়ি তল্লাশি হলো। পাওয়া গেল অনেক কিছু। ৫ ফেব্রুয়ারি তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। নাজমুল হুদাকে দেখে হাউমাউ করে কাঁদলেন স্ত্রী সিগমা হুদা।
এরপর তদন্ত শুরু হলো। অভিযোগ উঠল, যোগাযোগমন্ত্রী থাকার সময় হুদা ৩০ কোটি টাকার সরকারি কাজ পাইয়ে দিতে মীর জহির হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আড়াই কোটি টাকা ঘুষ নেন। এ মামলায় তাঁর সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হলো। পরে অবশ্য উচ্চ আদালত তাঁর সাজার মেয়াদ কমিয়ে চার বছর করে দেন।
গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ নামের আরেক ব্যক্তি হুদা ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেন। পরে হাইকোর্ট তা বাতিল করেন। অবশ্য দুদকের করা মামলা থেকেও তিনি অব্যাহতি পান। কিন্তু হুদার বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ কম ছিল না।
গ্রেপ্তারের পর রংপুর কারাগারে থাকার সময় ২০০৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি হুদা ওই জবানবন্দি দেন। তাতে বলেন, যৌথ বাহিনীর অভিযানের সময় তাঁর বাড়ি থেকে যে টাকা উদ্ধার করা হয়, তা ছিল ‘ওকালতির কাঁচা পয়সা’। সেই জবানবন্দিতে তিনি ধানমন্ডিতে তাঁর একটি বাড়ি, গুলশানে পাঁচ কাঠার প্লট, বকশীবাজারে পরিবারের নামে থাকা জমির কথা বলেন। আরও বলেন, তোপখানা রোডের মেহেরবা প্লাজায় স্ত্রীর নামে জায়গা আছে, গ্রামের বাড়িতেও আছে দালানকোঠা ও বাগানবাড়ি। অস্থাবর সম্পত্তি বলতে তিনি একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ, একটি জিপ, একটি নিশান প্যাট্রল জিপ, টয়োটা কার ও আসবাবের কথা উল্লেখ করেছিলেন। নিজের নামে, ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট থাকলেও তাতে কত টাকা আছে, তা আর উল্লেখ করেননি। তবে দুই মেয়ে অন্তরা সামিলা ও শ্রাবন্তী আমিনার নামে একটি ফ্ল্যাট আছে বলে জানিয়েছিলেন।
১৫ পৃষ্ঠার সেই জবানবন্দি শেষের দিকে এসে নাজমুল হুদা বলেছিলেন, ‘রাজনীতির নোংরা আবর্জনা আমাকে দুর্নীতিবাজ বানিয়েছে, আমাকে কলঙ্কিত করেছে, সুনাম এবং ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। উঠতে-বসতে আমি যে দুর্নীতিবাজ, তা শুনতে হয়েছে। আমার জীবনের যা ক্ষতি হয়েছে, তা এই সভ্য সমাজে পূরণীয় নয়।’
এত বছর পর হুদার সেই জবানবন্দি পড়তে গিয়ে মনে হলো, হয়তো তাঁর কথাই ঠিক, আবার মনে হলো, ঠিক না। হুদা লিখেছেন, ‘আমার সবই ছিল। কোনো কিছুর অভাব ছিল না। উপার্জন ছিল। বাড়ি ছিল। গাড়ি ছিল। পরিবারে সুখ ছিল। কিন্তু ‘‘কে যেন’’ রাজনীতিতে টেনে এনে সব নষ্ট করে দিল। এখন ভাবছি, এ পথে কেন এলাম?’
এই ‘কে যেন’টা কোন জন? সেটা কি লোভ নাকি উচ্চাকাঙ্ক্ষা? সেই প্রশ্নের জবাব হয়তো নাজমুল হুদা দিতে পারতেন। কিন্তু সেই সুযোগ তো আর নেই। হা হতোস্মি।
আরও পড়ুন
দুদিন আগে মুন্সিগঞ্জের হাঁসাড়া কবরস্থানে গিয়েছিলাম। পাড়ার শেষ প্রান্তে সেই কবরখানা। পৃথিবীর সব ফুল সেখানে ফুটে আছে। লাল শিমুল ছেয়ে আছে কবরের ওপরে। আমের মুকুলে আগাম গুটিও ধরেছে। কান পাতলে মনে হয় মৃতেরা কথা বলছে।
কবরখানায় যেতে ভয় হয়, আমার মতো সেই ভয় হয়তো অনেকের আছে। আমরা তাই মৃত মানুষদের নিয়ে কোনো বিষোদ্গার করি না, কেবল স্তুতি করি। লোকে হয়তো সেটাই পছন্দ করে। কিন্তু সেই মানুষ যদি রাজনীতিবিদ হন? তবু!
আমার কাছে রাজনীতিবিদ মানে যাঁর কোনো আড়াল নেই, গোপন বিজন ঘরও নেই। তিনি হাটের লোকের মতো, তিনি বহুদূর থেকে হেঁটে আসা বাউলের মতো।
‘বহুদূর’ কথাটার মধ্যে একটি হাহাকার আছে, রাজনীতিবিদদের হয়তো তা-ও নেই। কিন্তু তাঁর জীবনে উত্থান-পতন আছে, ভালোমন্দ আছে। আছে ইতি ও নেতিবাচক দিক। কাজেই আমজনতা হিসেবে তাঁকে নিয়ে কথা বলা যেতেই পারে। সেই স্পর্ধায় আজ বলছি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার গল্প।
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার সঙ্গে আমার কস্মিনকালেও ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক ছিল না। থাকার কথাও নয়। গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে যতটুকু দরকার, তার থেকে একচুলও বেশি কথা হয়নি কোনো দিন। কিন্তু নাজমুল হুদা ও তাঁর স্ত্রী সিগমা হুদাকে আমার মনে হতো মহিরুহ। বিরাট ল ফার্ম, নামজাদা আইনজীবী। ডজন ডজন আইনজীবী সেখানে কাজ করেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা বড় মানুষ। কিন্তু সাংবাদিকতায় এসে যখন জানলাম,তাঁরা যে কয়টি গাড়ি ব্যবহার করেন, একটিরও কোনো কাগজপত্র নেই, ভুয়া নম্বরপ্লেট ব্যবহার করে দিনের পর দিন রাস্তায় চলছেন, তখন তার মূর্তি থেকে ভাবটুকু চলে গেল।
১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে শুনলাম, ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার সময় নাজমুল হুদা মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৪৩ সালের ৬ জানুয়ারি তাঁর জন্ম। সেই হিসাবে বয়স ৮০ বছর হওয়ার কথা। গড় বয়সের হিসাবে তিনি দীর্ঘায়ু ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরদিন পুরোনো কাগজপত্র ঘাঁটতে গিয়ে একটি জবানবন্দি চোখের সামনে পড়ে গেল। ওয়ান-ইলেভেনের সময় গ্রেপ্তার হয়ে তিনি সেই জবানবন্দি দিয়েছিলেন। কোত্থেকে সেটা পেয়েছিলাম, মনে নেই। তবে সেই জবানবন্দিতে নিজের সম্পর্কে তাঁর কিছু উপলব্ধি ছিল। এত দিন পর মনে হলো ‘আষাঢ়ে নয়’ এর পাঠকদের এটা জানানো উচিত।
নাজমুল হুদার জবানবন্দিতে নিজের জন্ম, শিক্ষা, পরিবার, বেড়ে ওঠা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আছে। কিন্তু আজকাল এসব তথ্য পাওয়া মোটেও কঠিন কিছু নয়। ল্যারি পেজের গুগল নামে একটি অনাথ আশ্রম আছে, সেখানে সার্চ দিলেই গেরস্তের গোলায় রাখা ধানের মতো গড়গড় করে সব তথ্য বেরিয়ে আসে। তবু যেটুকু না বললেই নয়, সেটুকু বলি।
জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালে জাগদল গঠন করলে হুদা সেই দলে যোগ দেন। ১৯৭৮ বিএনপি হলে তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের তথ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। এরপর ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ছিলেন যোগাযোগমন্ত্রী। ওয়ান-ইলেভেনের সময় তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির তিনটি মামলা হয়। ২০১০ সালের ২১ নভেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যখন তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করেন, তখন তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।
২০১১ সালে আবার তাঁর সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ২০১২ সালে তিনি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। পরে নাজমুল হুদা ও আবুল কালাম মিলে বিএনএফ গঠন করেন। কিন্তু কয়েক মাস পর কালাম তাঁকে বহিষ্কার করেন। এরপর তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জোট এবং মানবাধিকার পার্টি নামে দুটি দল গঠন করেন। তাতেও শেষ হয়নি, ২০১৫ সালে গঠন করেন তৃণমূল বিএনপি। নির্বাচন কমিশন সেই তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধনও দিয়েছিল। কিন্তু নাজমুল হুদা আর শেষ দেখে যেতে পারেননি।
২০০৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে বাঘা বাঘা ১৫ জন রাজনীতিকের সঙ্গে নাজমুল হুদাকেও গ্রেপ্তার করা হলো। সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শুরুতে প্রথম যে ৫০ জন দুর্নীতিবাজের তালিকা প্রকাশ করা হয়, তার ১৮ নম্বরে ছিল হুদার নাম। গ্রেপ্তারের পর তাঁর ধানমন্ডির বাড়ি তল্লাশি হলো। পাওয়া গেল অনেক কিছু। ৫ ফেব্রুয়ারি তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। নাজমুল হুদাকে দেখে হাউমাউ করে কাঁদলেন স্ত্রী সিগমা হুদা।
এরপর তদন্ত শুরু হলো। অভিযোগ উঠল, যোগাযোগমন্ত্রী থাকার সময় হুদা ৩০ কোটি টাকার সরকারি কাজ পাইয়ে দিতে মীর জহির হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আড়াই কোটি টাকা ঘুষ নেন। এ মামলায় তাঁর সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হলো। পরে অবশ্য উচ্চ আদালত তাঁর সাজার মেয়াদ কমিয়ে চার বছর করে দেন।
গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ নামের আরেক ব্যক্তি হুদা ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেন। পরে হাইকোর্ট তা বাতিল করেন। অবশ্য দুদকের করা মামলা থেকেও তিনি অব্যাহতি পান। কিন্তু হুদার বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ কম ছিল না।
গ্রেপ্তারের পর রংপুর কারাগারে থাকার সময় ২০০৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি হুদা ওই জবানবন্দি দেন। তাতে বলেন, যৌথ বাহিনীর অভিযানের সময় তাঁর বাড়ি থেকে যে টাকা উদ্ধার করা হয়, তা ছিল ‘ওকালতির কাঁচা পয়সা’। সেই জবানবন্দিতে তিনি ধানমন্ডিতে তাঁর একটি বাড়ি, গুলশানে পাঁচ কাঠার প্লট, বকশীবাজারে পরিবারের নামে থাকা জমির কথা বলেন। আরও বলেন, তোপখানা রোডের মেহেরবা প্লাজায় স্ত্রীর নামে জায়গা আছে, গ্রামের বাড়িতেও আছে দালানকোঠা ও বাগানবাড়ি। অস্থাবর সম্পত্তি বলতে তিনি একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ, একটি জিপ, একটি নিশান প্যাট্রল জিপ, টয়োটা কার ও আসবাবের কথা উল্লেখ করেছিলেন। নিজের নামে, ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট থাকলেও তাতে কত টাকা আছে, তা আর উল্লেখ করেননি। তবে দুই মেয়ে অন্তরা সামিলা ও শ্রাবন্তী আমিনার নামে একটি ফ্ল্যাট আছে বলে জানিয়েছিলেন।
১৫ পৃষ্ঠার সেই জবানবন্দি শেষের দিকে এসে নাজমুল হুদা বলেছিলেন, ‘রাজনীতির নোংরা আবর্জনা আমাকে দুর্নীতিবাজ বানিয়েছে, আমাকে কলঙ্কিত করেছে, সুনাম এবং ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। উঠতে-বসতে আমি যে দুর্নীতিবাজ, তা শুনতে হয়েছে। আমার জীবনের যা ক্ষতি হয়েছে, তা এই সভ্য সমাজে পূরণীয় নয়।’
এত বছর পর হুদার সেই জবানবন্দি পড়তে গিয়ে মনে হলো, হয়তো তাঁর কথাই ঠিক, আবার মনে হলো, ঠিক না। হুদা লিখেছেন, ‘আমার সবই ছিল। কোনো কিছুর অভাব ছিল না। উপার্জন ছিল। বাড়ি ছিল। গাড়ি ছিল। পরিবারে সুখ ছিল। কিন্তু ‘‘কে যেন’’ রাজনীতিতে টেনে এনে সব নষ্ট করে দিল। এখন ভাবছি, এ পথে কেন এলাম?’
এই ‘কে যেন’টা কোন জন? সেটা কি লোভ নাকি উচ্চাকাঙ্ক্ষা? সেই প্রশ্নের জবাব হয়তো নাজমুল হুদা দিতে পারতেন। কিন্তু সেই সুযোগ তো আর নেই। হা হতোস্মি।
আরও পড়ুন
সবার সামনে পিটিয়ে হত্যা, পাথরে শরীর থেঁতলে দেওয়া, নিজের বাড়ির সামনে গুলি করে পায়ের রগ কেটে হত্যা, অস্ত্র দেখিয়ে সর্বস্ব ছিনতাই, চাঁদা না পেয়ে গুলি—এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা কয়েক দিন ধরে বেশ আলোচিত। কিন্তু পুলিশ অনেকটাই নির্বিকার। প্রতিটি ঘটনার সিটিটিভি ফুটেজ থাকলেও সব অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।
১০ দিন আগেএবার রাজধানীর শ্যামলীতে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, মানিব্যাগ, কাঁধের ব্যাগ ও মোবাইল ফোন নেওয়ার পর ছিনতাইকারীরা এক যুবকের পোশাক ও জুতা খুলে নিয়ে গেছে।
১১ দিন আগেমোবাইল চুরির ঘটনায় বোরহান নামের এক তরুণকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ছেলেকে বাঁচাতে বোরহানের বাবা রুবির পরিবারের সাহায্য চান। বসে এক গ্রাম্য সালিস। তবে সেই সালিসে কোনো মীমাংসা হয় না। এরই মধ্য নিখোঁজ হয়ে যান বোরহান। এতে এলাকায় রব পড়ে বোরহানকে হত্যা ও লাশ গুম করে ফেলা হয়েছে। তখন বোরহানের বাবা থানায় অভিযোগ দা
১৮ দিন আগেমালয়েশিয়ায় জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটক করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর পর তিনজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ শনিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম মিজবাহ উর রহমান তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
১৮ দিন আগে