Ajker Patrika

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তি: শেয়ারবাজারে বড় উল্লম্ফন, পড়েছে স্বর্ণের দাম

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৩ মে ২০২৫, ১১: ০৭
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক শেয়ারবাজারে বড় উল্লম্ফন দেখা গেছে। গতকাল সোমবার দুই দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্যিক সম্পর্কের উত্তেজনার অবসান ঘটিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছায় দুই দেশ। ট্রাম্পের ভাষ্যমতে, এই চুক্তি দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের একটি নতুন সূচনা। চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র তার শুল্ক ১৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশে নামাবে, আর চীনও তাদের শুল্ক ১২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামাচ্ছে। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছেন, সব শুল্ক একেবারে বাতিল করা হয়নি—কিছু শুধু সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে। যদি আগামী তিন মাসে আলোচনায় নতুন কোনো অগ্রগতি না হয়, তাহলে এসব শুল্ক আবারও বাড়তে পারে।

ট্রাম্প জানান, আগে যে ১৪৫ শতাংশ শুল্কারোপ করা হয়েছিল, আবার তাতে ফিরে যেতে হবে না বলে আশাবাদী তিনি। চুক্তি ঘোষণার পর তিনি বলেন, ‘আমরা চীনের ক্ষতি করতে চাই না। দেশটি আগে থেকেই নানা ক্ষেত্রে অনেক ক্ষতির শিকার হচ্ছিল। কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল, দেশজুড়ে অস্থিরতা বাড়ছিল। সব মিলিয়ে এই চুক্তি চীনের জন্য বেশ স্বস্তিদায়ক। একটা সমাধানে পৌঁছাতে পেরে তারা আপ্লুত।’ চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে আলাপ করবেন বলেও জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

বিনিয়োগকারীরাও এই উত্তেজনা প্রশমনের খবরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। ঘোষণা আসার পরই এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ৩ দশমিক ২ শতাংশের বেশি বেড়ে যায়, ডাও জোন্স বেড়েছে ২ দশমিক ৮ শতাংশ এবং নাসডাক বেড়েছে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ।

সূচকগুলো বছরের শুরুতে যে অবস্থানে ছিল, এই বৃদ্ধির ফলে সেখানেই আবার ফিরে এল। গত ২ এপ্রিল ১০ শতাংশ বেসলাইন ধরে ঢালাওভাবে শতাধিক দেশের ওপর নতুন করে শুল্কারোপের পর যেসব শেয়ারমূল্য পড়ে গিয়েছিল, সেগুলোও পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ২ এপ্রিলকে মার্কিন বাণিজ্যের জন্য মুক্তির দিন বলে অভিহিত করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এই শতাধিক দেশের মধ্যে ৬০টি দেশকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকারক হিসেবে চিহ্নিত করে অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি শুল্ক আরোপ করা হয়, যার মধ্যে একটি ছিল চীন। সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপ করা হয় দেশটির পণ্যের ওপর। জবাবে চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। দুই দেশের এই পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপে ব্যাপক ধস নামে আন্তর্জাতিক শেয়ারবাজারে।

ওয়াল স্ট্রিট টার্গেটের তথ্য অনুযায়ী, বড় উল্লম্ফন দেখা গেছে হোম ডিপো ও নাইকির শেয়ারদরের। প্রযুক্তি খাতেও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে শেয়ারদর। যেমন—এনভিডিয়া, আমাজন, অ্যাপল ও মেটার শেয়ারদরে বড় অগ্রগতি দেখা গেছে। সোমবার ইউরোপের শেয়ারবাজারেও ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এর আগে হংকংয়ের মূল সূচক হ্যাং সেং দিনের শেষে প্রায় ৩ শতাংশ বাড়ে। এই চুক্তির ফলে সবচেয়ে লাভবান হয়েছে শিপিং কোম্পানিগুলো। ডেনমার্কের মায়ের্স্কের শেয়ারদর বেড়েছে ১২ শতাংশেরও বেশি এবং জার্মানির হ্যাপাগ-লয়েডের শেয়ার বেড়েছে ১৪ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের এই চুক্তি বিশ্ব বাণিজ্যকে সঠিক পথে এগিয়ে নেওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছে মায়ের্স্ক। খুব শিগগিরই দেশ দুটি একটি স্থায়ী চুক্তিতে পৌঁছাবে বলেও আশাবাদী প্রতিষ্ঠানটি।

যুক্তরাষ্ট্রে খুচরা ব্যবসায়ীদের সংগঠন ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশন—এনআরএফের প্রেসিডেন্ট ম্যাথিউ শে বলেন, ‘এই সাময়িক বিরতি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম ধাপ, যা খুচরা ব্যবসায়ী ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জন্য কিছুটা স্বস্তির—বিশেষ করে এই সময়টাতে এটি জরুরি ছিল, কারণ খুচরা ব্যবসায়ীরা এখন শীতকালীন উৎসবের জন্য পণ্য অর্ডার দিচ্ছে।’

আন্তর্জাতিক চেম্বার অব কমার্স বলছে, বহুদিনের বৈরী সম্পর্কের দুই দেশ—যুক্তরাষ্ট্র আর চীন যে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করছে, এই চুক্তি তার স্পষ্ট ইঙ্গিত। সংস্থাটির উপ-মহাসচিব অ্যান্ড্রু উইলসন বলেন, ‘আশা করছি, চাকরি ও বিনিয়োগ নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল তা দূর করতে এই সপ্তাহের মধ্যেই এই শক্তি ভিত্তি তৈরি করবে এই চুক্তি।’

তবে শুল্কজনিত অস্থিরতায় অনেক বিনিয়োগকারীই স্বর্ণকে নিরাপদ মনে করছিলেন। কিন্তু স্বর্ণের দাম ৩ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। প্রতি আউন্সে স্বর্ণের দাম এখন প্রায় ৩ হাজার ২২৪ ডলার।

যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ট্রাম্প, বাণিজ্য, শেয়ারবাজার, শুল্ক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত