Ajker Patrika

নীতি সুদহার অনড় ১০ শতাংশেই

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি

মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের নিচে না আসা পর্যন্ত নীতি সুদ কমানোর প্রশ্নই উঠছে না—এমন বার্তাই দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের জন্য নতুন মুদ্রানীতিতে আগের মতোই ১০ শতাংশ নীতি সুদহার বা রেপো রেট বহাল রাখা হচ্ছে। আগের তিন দফার বৃদ্ধির পর যেটি এখন সবচেয়ে বেশি কড়াকড়ির জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, মুদ্রাস্ফীতি এখনো লক্ষ্যমাত্রায় আসেনি, তাই সংকোচনমূলক নীতির পথ থেকে সরে আসা যাচ্ছে না।

৩০ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে এ প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উঠবে। চূড়ান্ত অনুমোদনের পর ৩১ জুলাই গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন।

নতুন মুদ্রানীতিতে শুধু নীতি সুদহার নয়, তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সুদের হারও মূলত অপরিবর্তিত রাখা হচ্ছে। এতে নীতি সুদহার করিডরের স্ট্যান্ডিং ল্যান্ডিং ফ্যাসিলিটির (এসএলএফ) ঊর্ধ্বসীমা থাকছে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশেই, আর স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটির (এসডিএফ) নিচের সীমা সামান্য কমিয়ে ৮ দশমিক ৫০ থেকে ৮ শতাংশে নামানো হচ্ছে। পাশাপাশি ওভারনাইট রিপো সুদহার ১০ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকছে। ফলে ব্যাংকগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে স্বল্পমেয়াদি আমানত রাখার সুদ কিছুটা কমবে; কিন্তু ধার নেওয়ার খরচ অপরিবর্তিতই থাকবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, জুনে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে নেমেছে। এটি বিগত ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। তবে মে মাসে যা ছিল ৯ দশমিক ০৫ শতাংশ, সেই প্রেক্ষাপটে জুনের এই হ্রাস যথেষ্ট হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আশাবাদ পূরণ হয়নি। গভর্নর আশা করেছিলেন, মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের নিচে নামলে কিছুটা শিথিলতার জায়গা তৈরি হবে। কিন্তু লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারায় মুদ্রানীতির কড়াকড়ি বহাল থাকছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা সংকোচনমূলক অবস্থান থেকে এখনো সরে আসছি না। তবে এবার কিছু যৌক্তিকতা থাকবে। নতুন মুদ্রানীতিতে বাস্তব পরিস্থিতি অনুযায়ী সুপারিশ যুক্ত হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি যদি আগামীতে কাঙ্ক্ষিত স্তরে নামে, তখনই হার কমানোর চিন্তা আসবে।’

উল্লেখ্য, নতুন গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার সময় রেপো হার ছিল ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। পরবর্তী সময়ে তিন দফায় ৫০ বেসিস পয়েন্ট করে বাড়িয়ে তা ১০ শতাংশে উন্নীত করা হয়। এর প্রভাবে ব্যাংকঋণের গড় সুদহার এখন ১৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে, যা সরাসরি প্রভাব ফেলছে বেসরকারি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে।

এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ‘ডলারের বাজার এখন অনেকটাই স্থিতিশীল। কৃত্রিম হস্তক্ষেপ সরিয়ে দেওয়ার ফলে আমদানির খরচ কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। পণ্যের মূল্য চাপও আগের মতো নেই। এ প্রেক্ষাপটে সংকোচনমূলক নীতিকে খানিকটা ঢিল দেওয়া যেত। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক যে এখনো কড়াকড়িতে থাকছে, তার মানে তারা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।’

তবে সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, ‘মুদ্রানীতি একা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। এখানে রাজস্ব নীতি, সরবরাহ ব্যবস্থাপনা এবং বাজার নিয়ন্ত্রণ—সবকিছুকে একযোগে দেখতে হবে। সংকোচনমূলক নীতির কারণে বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে, কর্মসংস্থান থমকে আছে। তবে একটি ভালো দিক হলো—রিজার্ভ বেড়েছে, ডলারের বাজার স্থিতিশীল হয়েছে।’

অর্থনীতির গতি শ্লথ থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, এই কড়াকড়ির নীতিই মধ্যমেয়াদে সুফল আনবে। মূল্যস্ফীতি যদি ধীরে ধীরে কমে ৭-৮ শতাংশের মধ্যে নেমে আসে, তাহলে উৎপাদন ও সরবরাহে স্বস্তি ফিরবে, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি সহজ হবে, আর কর্মসংস্থানেও গতি আসবে।

তবে এর জন্য এখনো অপেক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো স্পষ্ট করছে না—কবে থেকে নীতি সুদ কমানো যেতে পারে। গভর্নর জানিয়েছেন, ‘সেই অবস্থায় পৌঁছাতে পারলেই আমরা হার পুনর্বিবেচনা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দরপত্র ছাড়াই জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের কাজ পেল দুই প্রতিষ্ঠান, এরা কারা

ট্রাকে করে ৪৩ হাজার পৃষ্ঠার নথি ইসিতে জমা দিয়েও নিবন্ধন পেল না এনসিপি

বিধি লঙ্ঘন করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হলেন এনসিপি নেতা

চাঁদা না দেওয়ায় মারধরের অভিযোগ বিএনপি কর্মীর বিরুদ্ধে

এনবিআর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কুৎসা, বরখাস্ত নিরাপত্তাপ্রহরী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত