Ajker Patrika

শেয়ার কারসাজি খুঁজে পায় না বিএসইসি

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
শেয়ার কারসাজি খুঁজে পায় না বিএসইসি

ধারাবাহিকভাবে লোকসান দিচ্ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। লভ্যাংশের ইতিহাসও ভালো নয়। অথচ পাঁচ মাসের মধ্যে শেয়ারটির দর বেড়েছে ১ হাজার শতাংশের বেশি। খান ব্রাদার্সের মতো এ রকম অনেক লোকসানি, উৎপাদন বন্ধ, আর্থিকভাবে দুর্বল কোম্পানিই রয়েছে, যেগুলোর শেয়ারদর অজানা জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় হু হু করে বাড়ে। এমন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিকে শেয়ার কারসাজি হিসেবে চিহ্নিত করেন বিনিয়োগকারী, বিশ্লেষক ও পুঁজিবাজারের বিভিন্ন অংশীজন।

চাইলেও বন্ধ করা যায় না এসব কারসাজি। প্রমাণের অভাবে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না নিয়ন্ত্রক সংস্থাও। এসব অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে দুর্বল কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি বন্ধ ও শেয়ারের ম্যাচিউরিটি পিরিয়ড বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, কয়েক হাজার মানুষ একসঙ্গে কোনো শেয়ার কিনতে থাকলে আইন ভঙ্গ তো হয় না। তাহলে কাকে ধরবে? বাস্তবতা হচ্ছে, সিন্ডিকেট রয়েছে, গ্রুপ রয়েছে। তাঁরা গুজব ছড়ায়। কারসাজির শেয়ারকে ওপরে তোলে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য বলছে, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বরে খান ব্রাদার্সের শেয়ারদর ছিল ১৯ টাকা ৯০ পয়সা। ১৫ ফেব্রুয়ারি শেয়ারটির দর সর্বোচ্চ ২৩১ টাকা ৬০ পয়সা হয়। অর্থাৎ পাঁচ মাসের ব্যবধানে দর বেড়েছে ২১১ টাকা ৭০ পয়সা বা ১ হাজার ৬৪ শতাংশ।

আজিজ পাইপসের শেয়ারদর গত বছরের ২৯ অক্টোবর ছিল ৯১ টাকা ৬০ পয়সা, যা ১৯ ডিসেম্বরে ১৪৩ টাকা ৫০ পয়সায় উন্নীত হয়। অর্থাৎ দুই মাসের কম সময়ে দর বাড়ে ৫১ টাকা ৯০ পয়সা। তিন মাসে আড়াই গুণ হয়েছে আফতাব অটোর শেয়ারদর। একইভাবে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, বিচ হ্যাচারি, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডসহ অনেক কোম্পানির শেয়ারদর অল্প সময়ের মধ্যেই কয়েক গুণ বাড়তে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, শেয়ারের দাম বাড়লেই যে কারসাজি হচ্ছে, তা বলার সুযোগ নেই। বিনিয়োগ করতে হলে শেয়ার কিনতে হবে। এতে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে দামও বাড়বে। তবে সেই চাহিদা তৈরির ক্ষেত্রে কোনো কারসাজি হয়েছে কি না, সেটা অবশ্যই খতিয়ে দেখা হয়।

পর্যাপ্ত নথি ও প্রমাণের অভাবে এবং অভিযুক্তদের শুনানির পর সবাইকে সাজা দেওয়া যায় না জানিয়ে তিনি বলেন, দেখা যায়, যতটুকু গেইন করেছিল তার চেয়েও বেশি আনরিয়েলাইজড লস হয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাঁদের বিরুদ্ধে ওয়ার্নিং লেটার ইস্যু করা হয়। প্রমাণ পেলে সাজা দেওয়া হয়। সাজা হচ্ছে না—এটা বলা যাবে না। আইন মেনেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

এদিকে কারসাজি নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, জেড ক্যাটাগরির বা লোকসানি কোম্পানিগুলোর শেয়ার কেনার পাঁচ দিন পর বিক্রির সুযোগ দিতে হবে। এসব পচা কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার বিক্রিও বন্ধ রাখতে হবে। তাহলে কারসাজি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

শেয়ারের দাম বাড়লেই যে কারসাজি হচ্ছে, তা বলার সুযোগ নেই। বিনিয়োগ করতে হলে শেয়ার কিনতে হবে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে দামও বাড়বে। তবে চাহিদা তৈরির ক্ষেত্রে কোনো কারসাজি হয়েছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হয়।

মোহাম্মদ রেজাউল করিম, মুখপাত্র, বিএসইসি

কয়েক হাজার মানুষ একসঙ্গে কোনো শেয়ার কিনতে থাকলে আইন ভঙ্গ তো হয় না। তাহলে কাকে ধরবে? বাস্তবতা হচ্ছে, সিন্ডিকেট রয়েছে, গ্রুপ রয়েছে। তারা গুজব ছড়ায়। কারসাজির শেয়ারকে ওপরে তোলে।

অধ্যাপক আবু আহমেদ, পুঁজিবাজার বিশ্লেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত