Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

গ্রাহকের আস্থাই মূলমন্ত্র

Thumbnail Image

আজকের পত্রিকা: দেশে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ধারণা সম্পর্কে জানতে চাই 
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: এজেন্ট ব্যাংকিং লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে প্রথম যাত্রা করে। ২০১৪ সালে এই ধারার ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হয় দেশে। মাত্র বছর তিনেক পরেই ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি জনগণকে ব্যয়সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। ঝামেলাহীন এই সেবা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় পৌঁছানোর মাধ্যমে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। পেয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের আওতাবহির্ভূত প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে শামিল করেছে।

আজকের পত্রিকা: ইসলামী ব্যাংকে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তা শুরুর দিকের চ্যালেঞ্জ কেমন ছিল? 
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: ইসলামী ব্যাংক একটি গণমানুষের ব্যাংক। আমানতকারীদের সর্বোচ্চ আস্থা ও বিশ্বের সেরা মানের ব্যাংকের স্বীকৃতির সুবাদে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু থেকেই অনেক সাড়া ফেলেছিল। আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রতি গ্রাহকের আস্থা বেড়েই চলেছে, যা সফলতার মূলমন্ত্র। তবে শুরুতে কিছুটা হলেও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। কিন্তু গ্রাহক যখন লেনদেন শুরু করে তখন তাঁদের ধারণাই পাল্টে ফেলেন। মানুষের আস্থার শক্তি এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের জন্য জাদুর ছোঁয়ায় পরিণত হয়েছে। আমাদের অনন্য সেবাই আমানত সংগ্রহ ও রেমিট্যান্সে ইসলামী ব্যাংক শীর্ষস্থান অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।

আজকের পত্রিকা: এই সেবার অগ্রগতির মূল্যায়ন কীভাবে দেখছেন?
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই ইসলামী ব্যাংক ঢাকা জেলার সাভারের বিরুলিয়ায় প্রথম আউটলেট উদ্বোধনের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যাংকের প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। এই কার্যক্রমে জনগণের ব্যাপক সাড়া পাওয়ার পরেই আউটলেট বৃদ্ধি করা হয়। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের আগ্রহ ও নির্দেশনা, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নিবিড় পর্যবেক্ষণ এবং জোন ও শাখাপ্রধানদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ২০২৩ সালে ব্যাংকের মোট আউটলেটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৭১টি। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধিসহ মোট ৪৩ লাখ ৩৯ হাজার ৪৩৬টি হিসাব খোলা হয়। এ সময় প্রাপ্ত আমানতের পরিমাণ ৩ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ১৪ হাজার ৩০৫ কোটি টাকার স্থিতি দাঁড়িয়েছে।

আজকের পত্রিকা: এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার মান কোন পর্যায়ে? 
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: এজেন্ট ব্যাংকিং নিঃসন্দেহে গ্রাহকবান্ধব। চার্জ বা সেবামাশুলের দিক থেকে সস্তা ও যৌক্তিক। গ্রাহক চার্জ পরিশোধ করে এজেন্ট আউটলেটের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল প্রদান করতে পারছেন। ইউটিলিটিসহ নানা বিল পরিশোধ এখন হাতের মুঠোয়। সামান্য পরিমাণ চার্জ প্রদান করে বিইএফটিএন, আরটিজিএস এবং এসপিএসিবির মাধ্যমে সহজেই ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ স্থানান্তর করতে পারছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সারা দেশে রেমিট্যান্সের অর্থ তোলা যাচ্ছে। এ জন্য গ্রাহককে ব্যাংকের শাখায় যেতে হয় না। এ সেবা সেন্ট মার্টিন, মনপুরা দ্বীপ এবং উড়ির চরেও পৌঁছেছে। শুধু অনলাইন চার্জের ক্ষেত্রে হাজারে ১ টাকা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারও কম নেওয়া হয়। অনলাইন ডিপোজিটের পরিমাণ যত বেশি চার্জ তত কম। বলা যায়, সাশ্রয়ী ব্যাংকিং সেবার নাম এজেন্ট ব্যাংকিং।

প্রবাসী গ্রাহকের জন্য আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিতে বদ্ধপরিকর। প্রতারণামূলক কার্যকলাপ রোধে নির্বাচন কমিশন সার্ভারের সঙ্গে ফিঙ্গার প্রিন্ট যাচাইসহ গ্রাহক শনাক্তকরণকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

আজকের পত্রিকা: ব্যাংকের সাধারণ শাখার মতো এজেন্ট ব্যাংকের সেবা কি সমান? 
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: হিসাব খোলা, টাকা জমা ও উত্তোলন, ক্লিয়ারিং চেক ও ঋণের আবেদন গ্রহণ, বিতরণ ও কিস্তি সংগ্রহ, রেমিট্যান্সের অর্থ প্রদান, বিদ্যুৎ বিল জমা, ভাতা বিতরণ, অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স জানা ও সংক্ষিপ্ত বিবরণী প্রদান, ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা, চেক বই, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড সুবিধাসহ দৈনিক লেনদেনে ব্যাংক ও এজেন্টের সেবায় কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে সেবার মান উন্নত হয়েছে। 

আজকের পত্রিকা: দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ভূমিকা কী? 
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় ৩ হাজারের অধিক উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি এজেন্ট ব্যাংকের আউটলেট প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেশি হওয়ায় কমপক্ষে ১৫ হাজার মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এসব মানুষের আয়ের ওপর নির্ভর করছে তাঁদের পরিবার। বলা যায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে এজেন্ট ব্যাংকিং। 

আজকের পত্রিকা: এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মান ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা কেমন হওয়া উচিত?
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশেই এজেন্ট বাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ব্যাংকগুলো সরাসরি যুক্ত থাকায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মান ভালোর দিকে যাচ্ছে। এজেন্ট ব্যাংকিং প্রসারে সর্বস্তরের জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে সচেতনতা বৃদ্ধি চলমান রয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক সব নাগরিকের ব্যাংক হিসাব খোলার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে প্রায় ৪৪ লাখ হিসাব খোলা হয়েছে। ২০২৪ সালের তা ৫৫ লাখ করার পরিকল্পনা রয়েছে। দেশীয় গ্রাহক সেবার মানকে গতিশীল করার পাশাপাশি প্রবাসী গ্রাহকের জন্য আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিতে বদ্ধপরিকর। প্রতারণামূলক কার্যকলাপ রোধে নির্বাচন কমিশন সার্ভারের সঙ্গে ফিঙ্গার প্রিন্ট যাচাইসহ গ্রাহক শনাক্তকরণকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

আজকের পত্রিকা: এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের চ্যালেঞ্জ রয়েছে কি না? 
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: এজেন্ট ব্যাংকিং মূল ব্যাংকিংয়ের জন্য সহায়ক একটি পদক্ষেপ। ব্যাংকের নিজস্ব কর্মকর্তা এজেন্ট আউটলেটের কার্যক্রম তদারকির জন্য নিয়োজিত থাকেন। এ ছাড়া শাখাপ্রধান সময়ে সময়ে এজেন্ট আউটলেট পরিদর্শন করেন। শাখার মাধ্যমেও প্রধান কার্যালয় প্রতি মাসে এজেন্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকেন। ব্যাংকের পক্ষ থেকে নিবিড় তদারকির পাশাপাশি গ্রাহক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ঝুঁকি কমে আসছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত