Ajker Patrika

প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের বিশ্বসেরা গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র

আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২২, ১৭: ০৩
প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের বিশ্বসেরা গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র

প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবাহের ক্ষেত্রে রেকর্ড গড়ে গত বছর বিশ্বসেরার অবস্থানে উঠে এসেছে। চীনও একধাপ এগিয়ে তৃতীয় অবস্থানে চলে এসেছে। এফডিআই আকর্ষণকারী সেরা ১০ অর্থনীতির দেশের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে তুলনামূলক ছোট অর্থনীতিগুলো।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সর্বশেষ সমীক্ষায় দেখা যায়, গতবছর যুক্তরাষ্ট্রে বাড়তি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৫০ হাজার ৬০০ কোটি ডলার, ২০২০ সালের চেয়ে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।

১১২টি দেশ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) জাতীয় মুদ্রার হিসাবে গড়ে ৭ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। তবে ডলারের হিসাবে ধরলে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ততোটা হয়নি। কারণ, অন্য মুদ্রার চেয়ে জোরালো হওয়ায় ডলারের হিসেবে বৈশ্বিক গড় প্রবৃদ্ধি হয় ২ দশমিক ৩ শতাংশ।

আইএমএফের হিসাবে, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এখন তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। আর ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠা বড় অর্থনীতির দেশ চীন রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। এ ছাড়া ছোট অর্থনীতির মধ্যে নেদারল্যান্ডস, লুক্সেমবার্গ, হংকং, সিঙ্গাপুর, আয়ারল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ড রয়েছে শীর্ষ দশে।

প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ও বাস্তব অর্থনীতির মধ্যে দৃশ্যত যে অসলংগ্নতা আছে, তার কারণ হলো- এসব সংখ্যা মূলত একগুচ্ছ অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান। এগুলোতে আন্তঃদেশীয় আর্থিক প্রবাহ এবং অন্তত ১০ শতাংশ শেয়ারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মালিকানার মাধ্যমে পরস্পর সংযুক্ত প্রতিষ্ঠানের অবস্থান দেখানো হয়েছে। এই আর্থিক প্রবাহ কোনো দেশে নতুন কারখানা বা যন্ত্রপাতিতে ব্যয়ের মতো উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগে পরিণত হতে পারে। অন্যদিকে সেগুলো প্রকৃত অর্থনীতির সঙ্গে সামান্য বা কোনো যোগসূত্র ছাড়াই সম্পূর্ণরূপে আর্থিক বিনিয়োগ হতে পারে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অনেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বিদেশের আর্থিক কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে, যেক্ষেত্রে চূড়ান্ত গন্তব্যে যাওয়ার পথে মধ্যবর্তী পর্যায় হিসেবে ওই দেশ দিয়ে তাদের অর্থ প্রবাহিত হয়। কর ছাড়সহ নানা নিয়ন্ত্রকমূলক সুবিধা নিতে এসব অফশোর কোম্পানি স্থাপন করা হয় এবং স্বাগতিক দেশে খুব সামান্য প্রভাব ফেললেও এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এফডিআইয়ের ডেটা ‍ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানোর একটি চেষ্টা থাকে।  

 বিদেশি আর্থিক কেন্দ্রগুলো কীভাবে বৈশ্বিক এফডিআই পরিসংখ্যানে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি অবদান রাখে তা ড্যামগার্ড, এলকজার, জোহানেসেন অ্যান্ড লেন ও মাইলসি-ফেরেত্তির গবেষকেরা দেখিয়েছেন। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক মন্দার পরের বছরগুলোতে এই ধরনের প্রবণতা আরও বেড়েছে। 

আইএমএফের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ সমীক্ষার (সিডিআইএস) সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা গেছে, বৈশ্বিক এফডিআইয়ে অফশোর ফাইন্যান্সিয়াল সেন্টারগুলোর অস্বাভাবিক বেশি অবদান রয়েছে। তবে ২০১৭ সাল থেকে তা কমতে শুরু করে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মতো বড় অর্থনীতির দেশগুলোর প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বাড়তে শুরু করে। 

আইএমএফ বলছে, উন্নয়নের এই চালকগুলোকে আলাদা করে দেখানো কঠিন। তবে উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে করছাড় ও চাকরি আইন কার্যকর করার পর থেকে বৈশ্বিক এফডিআইয়ে ‘অফশোর ফাইন্যান্সিয়াল সেন্টারগুলোর’ অবদান কমছে।

অর্থনীতির প্রকৃত তথ্য সংগ্রহের জন্য সিডিআইএসের পাশাপাশি আইএমএফ নিজেও উদ্যোগ নিয়েছে এবং এ বছরের শুরুতে এসপিই পরিসংখ্যানের প্রথম সেট প্রকাশ করেছে। জি-২০ ডেটা গ্যাপ ইনিশিয়েটিভের দ্বিতীয় পর্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল বিভিন্ন দেশের এফডিআই পরিসংখ্যানের তথ্য। আইএমএফের সদস্যভুক্ত ২০টি দেশের মধ্যে ১৯টি দেশ অর্থনৈতিক ডেটা রিপোর্ট বা তথ্য প্রতিবেদন পেশ করেছে। আরও অনেক ডেটা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পাশাপাশি আইএমএফ তার সদস্য দেশগুলোর প্রতি নজরদারি বাড়িয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত