Ajker Patrika

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ

রপ্তানি আয়-রেমিট্যান্সে আঘাত আসতে পারে

ড. জাহিদ হোসেন
ড. জাহিদ হোসেন
ড. জাহিদ হোসেন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিশ্ববাজারে উদারীকরণ করে আসছে আমেরিকা। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির ঘোষণায় এক কলমের খোঁচায় তা শেষ হয়ে গেল। এটা শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, সারা বিশ্বের জন্য দুর্যোগের বার্তা নিয়ে আসছে।

আশা করা হচ্ছিল, ‘করোনা ও মূল্যস্ফীতির পর ইউরোপের বড় অর্থনীতিগুলো পুনরুদ্ধারের পথে হাঁটছে, একটু স্বস্তির সময় আসবে। সেখানে এখন নতুন করে শুল্ক আরোপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি কমে যেতে পারে, আর এতে বাড়বে মূল্যস্ফীতি। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি একদিকে মন্দা, অন্যদিকে মূল্যস্ফীতিতে পড়লে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যেতে পারে। ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংকুচিত হবে। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ যারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর খুবই নির্ভরশীল—আমদানি ও রপ্তানি দুটোতেই তাদের অর্থনীতিতে বড় ধরনের চাপ আসবে। আমরা এমনিতেই দুর্বল অবস্থা থেকে উত্তরণের পথে যাচ্ছিলাম। আমাদের অর্থনৈতিক সূচকগুলো কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দিচ্ছিল। এর মধ্যে বড় দুটি সূচক রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের কারণে দুটো সূচকেই আঘাত আসতে পারে। কারণ বিশ্বমন্দা দেখা দিলে বেকারত্ব বাড়বে, মজুরি কমবে, মূল্যস্ফীতি বাড়বে। কাজেই সেখানে রেমিট্যান্সও কম পাবেন।’

এক অশুভ নীতির শুল্কযুদ্ধের সূত্রপাত শুরু হলো। এই যুদ্ধে বাংলাদেশের বাজার দখলের ঝুঁকি নেই। কারণ ভারত ও পাকিস্তান ছাড়া ভিয়েতনাম, লাওস, ইন্দোনেশিয়াসহ বেশির ভাগ দেশের ওপর শুল্ক আরও বেশি আরোপ করা হয়েছে। সুতরাং প্রতিযোগিতার সক্ষমতায় তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশের বাজার পরিবর্তিত হবে না। তারাও কোনো বাড়তি সুবিধা পাবে না; কিন্তু চাহিদা সংকুচিত হবে। চাহিদা সংকুচিত হলে আমাদের বিক্রি কমে যেতে পারে। প্রশ্ন হলো, এখন আমাদের করণীয় কী? দ্বিতীয়টা হলো মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি করণীয়টা।

এ ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক করণীয় হলো নতুন করে যে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, ‘তা কে দেবে? এটা কী আমাদের যাঁরা সাপ্লাইয়ার রয়েছেন তাঁরা মূল্য কমিয়ে বহন করবেন? না যাঁদের মাধ্যমে আমেরিকার বাজারে পণ্য প্রবেশ করে (যেমন ওয়ালমার্ট) তাঁরা দেবেন।’

বায়ারদের কাছ থেকে একটা চাপ থাকবে। আমরা দাম যদি বেশি বাড়িয়ে দেই, তাহলে বিক্রি কমে যাবে। এ ধরনের যুক্তি দেখিয়ে বলবে, তোমরা একটা অংশ শেয়ার করো। সে ক্ষেত্রে আমাদের এককভাবে বায়ারদের সঙ্গে নেগোসিয়েট (সমঝোতা) না করে সংগঠিত হয়ে যৌথভাবে নেগোসিয়েশন করতে হবে।

বিজিএমইএর পক্ষে বায়ারদের বলতে হবে, ‘এ মুহূর্তে জাহাজে যে মাল তুলেছি, তার জন্যও শুল্ক দিতে হবে। যে অর্ডারগুলোর চুক্তি করেছি, উৎপাদন পর্যায়ে রয়েছে তার জন্য শুল্ক আরোপিত হবে। ব্যবসায়ীরা সবাই একমত হন যে, পারলে শতভাগ আরোপিত শুল্কের বোঝাটা বায়ারদের ওপর চাপিয়ে দিতে হবে। কারণ আমাদের প্রফিট মার্জিন বেশি নয়। শুল্ক অ্যাবজর্ভ করার মতো অবস্থা নেই, বিশেষ করে ওভেন খাতে। ৩৭ শতাংশ শুল্ক আমাদের দেওয়া সম্ভব নয়।

দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, আমেরিকান পণ্য বাংলাদেশে এলে ৭৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। ট্রাম্প তো বলেছেন, ‘তোমরা যদি তোমাদের ডিউটি কমাও তাহলে আমরা তো সংস্কারের কার্যক্রম শুরু করেছি। এ সময়ের মধ্যে সংস্কারকাজ করে ডিউটি কমিয়ে আনতে পারি। সে চেষ্টা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয়ভাবে দর-কষাকষি করতে হবে। কারণ ট্রাম্প দ্বিপক্ষীয় দর-কষাকষিতে বিশ্বাস করেন।

ড. জাহিদ হোসেন, সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ , বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ৪ বিচারকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাষ্ট্র

প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণার পর যা বলল ইইউ

আপনাদের সঙ্গে হাত মেলাব না, বিস্ফোরক তামিম

কাগজে-কলমে মেয়র হওয়ায় দায়িত্ব পালন করলাম: জাতীয় ঈদগাহ পরিদর্শন শেষে ইশরাক

এপ্রিলে নির্বাচন ঘোষণায় বিএনপি ও জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত