Ajker Patrika

ব্যাংক একীভূতকরণের গতি মন্থর

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৪, ১১: ৪৫
ব্যাংক একীভূতকরণের গতি মন্থর

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের তোয়াক্কা না করেই ব্যাংক একীভূতকরণে তড়িঘড়ি করতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াই এখন লেজেগোবরে অবস্থায়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজের জারি করা নীতিমালাও লঙ্ঘন করেছে। এমনকি কয়েকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিষদের উচ্চপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ডেকে নিয়ে অনেকটা জোরজবরদস্তির মাধ্যমে ব্যাংক একীভূতকরণের চেষ্টা চালায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যার ফলে এখন পর্যন্ত এক্সিম ও পদ্মা ব্যাংক ছাড়া বাকি আট ব্যাংকের মধ্যে একীভূতকরণের সব কার্যক্রম থমকে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সূত্র জানায়, কোনো প্রকার প্রস্তুতি ছাড়াই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অঘোষিত চাপে চলতি বছরের ১৪ মার্চ এক্সিম ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক একীভূতকরণের ঘোষণা দেওয়া হয়। একই ধারাবাহিকতায় গত ৩ এপ্রিল রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক ও বিডিবিএল ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের নাম ঘোষণা করা হয়। আর ৮ এপ্রিল সিটি ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংক এবং ৯ এপ্রিল ইউসিবি এবং ন্যাশনাল ব্যাংকের একীভূতকরণের ঘোষণা করা হয়। এ ক্ষেত্রে এসব ব্যাংকের স্বাস্থ্য যাচাই ছাড়াই একীভূতকরণের বিষয়টি জানানো হয়, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সরাসরি লঙ্ঘন। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা নীতিমালায় বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যাংকের স্বাস্থ্য যাচাই করে ২০২৫ সালের মার্চের পর থেকে ব্যাংকগুলো নিজেদের আগ্রহের মাধ্যমে একীভূত হতে পারবে। এ ক্ষেত্রে নিজস্ব নীতিমালা লঙ্ঘন করে তড়িঘড়ির আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘একটি দুর্বল ব্যাংক ছাড়া কোনো ব্যাংকই নিজ উদ্যোগে একীভূত হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি, আবার এ প্রক্রিয়ায় নাম আসা সবল ব্যাংকগুলো স্বীয় উদ্যোগে স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে এতে যুক্ত হতে সম্মত হয়েছে, সেটিও ঘটেনি। প্রক্রিয়াটি শুরু থেকেই স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।’

গত ৩১ জানুয়ারি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে এক বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার পরামর্শ দেয়। এরপর গত ১৪ মার্চ এক্সিম ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ একে অপরের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপরে অন্যান্য ব্যাংকের একীভূতের ঘোষণা আসে। আর ১৬ এপ্রিল ‘বেসিক ব্যাংক সরকারি নয়’ বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র দাবি করেন। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাগজপত্রে বেসিক ব্যাংক সরকারি। এরপর রাজপথে আন্দোলন করে বেসিক, রাকাব, বিডিবিএলসহ একীভূত ঘোষিত কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ব্যাংক একীভূত করার ঘোষণা ২০২৪ সালের বার্ষিক রিপোর্টের ভিত্তিতে হওয়ার কথা থাকলেও আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই একীভূতকরণের ঘোষণা দেওয়াটা ভুল। এমন তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তে ভেস্তে গেছে ব্যাংক একীভূতকরণ।

বিডিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হাবিবুর রহমান গাজী বলেন, ‘একীভূতকরণ এমওইউ পর্যায়েই রয়েছে। অডিটর এসে ঘুরে গেছেন। এর বেশি অগ্রগতি নেই।’

গত ৪ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণ নীতিমালা প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ২০২৪ সালের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে একীভূত হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘ব্যাংক জোর করে একীভূত করা ঠিক হবে না। ব্যাংক একীভূত করা উচিত নিজস্ব সম্মতির ভিত্তিতে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘যে ব্যাংকগুলোর এমওইউ চুক্তি হয়েছে। ব্যাংকে অডিট নিয়োগ করা হয়েছে। চাইলেই দ্রুত হবে না। একীভূতকরণের দীর্ঘকালীন প্রক্রিয়া।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

কোটি টাকা ‘ভর্তুকি’র জিম্বাবুয়ে সিরিজে বাংলাদেশ যা পেল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত