Ajker Patrika

অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেনের ব্যবসা বন্ধ, তবুও বড় মুনাফা

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেনের ব্যবসা বন্ধ, তবুও বড় মুনাফা

বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ। তারপরও ২০২২-২৩ অর্থবছরের আর্থিক হিসাবে বড় অঙ্কের মুনাফা দেখিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন লিমিটেড। এই ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে তদন্ত করছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

জানা যায়, পণ্য কেনার কথা বলে অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন লিমিটেডের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কর্মকর্তারা। এ সময় কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, কয়েক মাস ধরে তাদের কারখানা বন্ধ রয়েছে। ডিএসইর পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে জানালে সংস্থাটি তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ আগস্ট কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন এবং অন্যান্য বিষয় পর্যালোচনার জন্য বিএসইসির উপপরিচালক মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান এবং সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল আউয়ালকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি এখনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি। 

৪ জানুয়ারি সভা শেষে ২০২২-২৩ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৫৯ পয়সা করে ১৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা নিট মুনাফা হয়েছে বলে তথ্য দেয় অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ। অথচ এই মুনাফার বিপরীতে শেয়ারপ্রতি মাত্র ১০ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কোম্পানিটি। নামমাত্র লভ্যাংশ ঘোষণা করে এখন শাস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে কোম্পানিটিকে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের আয়কর পরিপত্র অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে মুনাফার কমপক্ষে ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ হিসেবে শেয়ারহোল্ডারদের দিতে হবে। যদি ৩০ শতাংশের কম দেওয়া হয়, তাহলে রিটেইন আর্নিংসে বা কোম্পানিতে রেখে দেওয়া অর্থের ওপরে ১০ শতাংশ হারে অতিরিক্ত করারোপ করা হবে।

অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেনের ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকার নিট মুনাফার বিপরীতে ১ শতাংশ বা ১০ পয়সা হিসেবে ১ কোটি ১০ লাখ টাকার লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, যা মুনাফার ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। বাকি ১৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বা ৯৩ দশমিক ৭০ শতাংশ রিটেইন আর্নিংসে রাখা হবে। মুনাফার ৭০ শতাংশের বেশি রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্তের ফলে ১৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকার ওপরে ১০ শতাংশ হারে ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকার অতিরিক্ত কর দিতে হবে কোম্পানিটিকে।

এ বিষয়ে জানতে অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইসমত জাহানের মোবাইলে ফোনে কল করা হলে অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, এমডি নিজেই এই প্রতিবেদককে ফোন করবেন পরে। তবে এরপর বেশ কয়েকবার কল করলেও আর কেউ রিসিভ করেননি। এরপর কথা বলতে কোম্পানির চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসারকেও একইভাবে কয়েক দফা কল করা হয়। তিনিও রিসিভ করেননি। বন্ধ পাওয়া গেছে কোম্পানি সচিব এবং ওয়েবসাইটে দেওয়া কোম্পানির অফিসের নম্বরও।

প্রকৃতপক্ষে, পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করলেও অনিয়মের কারণে কোম্পানির কার্যক্রম নেই। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এখন বিষয়ে কথা বলতে চান না।
অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন পুঁজিবাজারে আসার আগেও দুর্নীতির আশ্রয় নেয়। ২০০১ সালে কোম্পানি ১১২ শতক বা ৩ দশমিক ৭৩ বিঘা জমি কেনে, যার দাম ছিল ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আর এই জমি উন্নয়নে ৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকার অস্বাভাবিক ব্যয় দেখানো হয়। জমির দলিল প্রদর্শনের নিয়ম থাকায় দাম নিয়ে প্রতারণা করা যায় না। তবে উন্নয়ন বাবদ ব্যয় বেশি দেখিয়ে পরিচালকেরা মালিকানা বাড়ান। 

১২ লাখ টাকার অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন আইপিওতে আসার আগে ৮০ কোটি টাকার কোম্পানি হয়ে যায়। ৮০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের প্রায় পুরোটাই (৯৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ) ২০১৭ ও ২০১৮ সালে ইস্যু করে কোম্পানিটি। এর আগে মাত্র ১২ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন ছিল। এই কোম্পানিই ২০১৮ সালের শেষ দিকে (৬ নভেম্বর) ৭০ কোটি টাকার বেশি শেয়ার ইস্যু করে। ওই দুই বছরে পরিচালকেরা নিজেদের পাশাপাশি অন্যদের মধ্যে অনেক প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যু করে। এরপরও ১৫ কোটি টাকা সংগ্রহের জন্য পুঁজিবাজারে আসে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত