Ajker Patrika

চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ব্যাংকের আয়োজনে সার্কফাইন্যান্স সেমিনার

চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ব্যাংকের আয়োজনে সার্কফাইন্যান্স সেমিনার

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কফাইন্যান্সের (নেটওয়ার্ক অব সার্ক সেন্ট্রাল ব্যাংক গভর্নরস্ অ্যান্ড ফাইন্যান্স সেক্রেটারিস) উদ্যোগে চট্টগ্রামের হোটেল ‘রেডিসন ব্লু’তে গত ১২ জুলাই সার্কভুক্ত দেশগুলোর ‘স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য: সার্কভুক্ত দেশগুলোর সম্ভাবনা ও সমস্যা’ শীর্ষক দিনব্যাপী একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জনাব আব্দুর রউফ তালুকদার। 

সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামন মজুমদার। এ ছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার চিফ জেনারেল ম্যানেজার (ইনচার্জ) ড. আদিত্য গাইহা বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেন। 

সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (গবেষণা) ড. সায়েরা ইউনুস স্বাগত বক্তব্য দেন। সার্কভুক্ত দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধিরা সরাসরি উপস্থিত ছিলেন এবং পাকিস্তান ও মালদ্বীপের প্রতিনিধিরা অনলাইনে যোগ দেন। সেমিনারের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভাগসমূহ, বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা এবং বাংলাদেশে কার্যরত তফসিলি ব্যাংকের কর্মকর্তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। অনিবার্য কারণে সার্কভুক্ত দেশ আফগানিস্তান সশরীরে বা ভার্চ্যুয়ালি অংশ নিতে পারেনি। সেমিনারের সাইডলাইনে ‘সার্কভুক্ত দেশসমূহের ক্ষেত্রে স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেন নিষ্পত্তি’ শীর্ষক কলাবরেটিভ স্টাডি টিমের সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সকাল নয়টায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে সেমিনারের উদ্বোধনী অধিবেশন শুরু হয়। নির্বাহী পরিচালক (গবেষণা) ড. সায়েরা ইউনুস আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতার জন্য সম্ভাব্য সুবিধার ওপর জোর দিয়ে সার্কফাইন্যান্স সেমিনারে দেশীয় এবং বিদেশি অংশগ্রহণকারীদের স্বাগত জানান। তিনি অতিথিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং সার্ক দেশগুলির মধ্যে স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্যের চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনার গুরুত্ব সম্পর্কে তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ও সেমিনারের কী-নোট স্পিকার ড. মো. হাবিবুর রহমান স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেনের সুবিধার ওপর জোর দিয়েছেন, যেমন ফরেক্স রিজার্ভের ওপর চাপ কমানো, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং লেনদেনের খরচ কমানো। তিনি বিনিময় হার ঝুঁকি, মুদ্রা পরিবর্তনযোগ্যতা সমস্যা, শক্তিশালী আর্থিক অবকাঠামো এবং বাজারের আস্থার প্রয়োজনের মতো চ্যালেঞ্জগুলির রূপরেখা দেন। সফলভাবে স্থানীয় মুদ্রা বাণিজ্যের জন্য স্থিতিশীল মুদ্রা, শক্তিশালী আর্থিক ব্যবস্থা, সহায়ক আইনি কাঠামো এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার মতো বিষয়ের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন। 

সার্কফাইন্যান্স সেমিনারে বিশেষ অতিথি ড. আদিত্য গাইহা স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেন শুধুমাত্র নীতিনির্ধারকদের জন্য নয় বরং কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং অর্থনৈতিক স্টেকহোল্ডারদের জন্যও যে গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, বিদেশি দায় এবং কোভিড-পরবর্তী পরিস্থিতি এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে ক্রমবর্ধমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার মতো চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন। এগুলো মোকাবিলায় স্থানীয় মুদ্রা কীভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে তাও যুক্তির মাধ্যমে পরিষ্কার করেন। 

সার্কফাইন্যান্স নেটওয়ার্কের সদস্য ও বাংলাদেশের অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, সার্ক অঞ্চলের জন্য প্রভাবশালী মুদ্রার ওপর নির্ভরতা হ্রাস করার বিষয়ে জোর দিয়েছেন। তিনি স্থানীয় মুদ্রা ব্যবহার করে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তিসহ বাংলাদেশের চলমান প্রচেষ্টা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা, আঞ্চলিক একীভূতকরণ এবং প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে স্থানীয় মুদ্রা বাণিজ্যের সম্ভাব্য সুবিধাসমূহ গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন। তিনি সেমিনার আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেনের পূর্ণ সম্ভাবনা উন্মোচনে সার্কভুক্ত সদস্য দেশগুলোকে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার সার্ক অঞ্চলের জন্য স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেনের কৌশলগত গুরুত্ব তুলে ধরেন, মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক একীভূতকরণের ওপর জোর দেন। তিনি স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্যের সুবিধার্থে নীতি পরিবর্তন এবং আর্থিক খাতে ডিজিটাল প্রযুক্তিসহ বাংলাদেশের সক্রিয় পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেন এবং চ্যালেঞ্জগুলি কাটিয়ে উঠতে সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করেন। 

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা ইত্যাদি সার্কভুক্ত ক্ত দেশসমূহের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাবৃন্দ এতে ‘স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য: সার্কভুক্ত দেশগুলোর সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্যানেলিস্টরা মুদ্রার স্থিতিশীলতা এবং শক্তিশালী আর্থিক অবকাঠামোর প্রয়োজনীয় চ্যালেঞ্জগুলি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং ভবিষ্যতের বিভিন্ন নীতিগত দিকনির্দেশনা দেন। 

সাম্প্রতিক সময়ের দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক উদীয়মান অর্থনীতিসমূহের মধ্যে মার্কিন ডলারের মতো প্রধান বৈশ্বিক মুদ্রার ওপর নির্ভরতা হ্রাস, লেনদেনের খরচ কমানো, বিনিময় হারের অস্থিতিশীলতা কমানো এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংহতি বাড়ানোর মতো বিষয়ে সম্ভাব্য কৌশল ও অনুকূল নীতি অনুসন্ধান সেমিনারের মূল উদ্দেশ্য বলে জানানো হয়েছে। এতে সার্কভুক্ত দেশগুলোর তথ্য ও অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্যের কৌশলের বিভিন্ন দিক উদ্ঘাটন ও কীভাবে এ অঞ্চলে এর উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। 

উল্লেখ্য, দশম সার্ক সামিটের সিদ্ধান্তের সূত্রে সার্কভুক্ত আটটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থ সচিবদের সমন্বয়ে ১৯৯৮ সালে সার্কফাইন্যান্স নেটওয়ার্ক গঠিত হয়। সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের বিষয়ে নীতি নির্ধারণে সার্কভুক্ত দেশগুলোর অভিজ্ঞতা ও মতামত আদান-প্রদান করাই এ নেটওয়ার্কের মূল উদ্দেশ্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত