Ajker Patrika

হাওরের পানিতে প্লাবিত বড়লেখা, শিশুসহ ২ জনের মৃত্যু

এ জে লাভলু, বড়লেখা (মৌলভীবাজার)
আপডেট : ১৯ জুন ২০২২, ১৬: ২৪
হাওরের পানিতে প্লাবিত বড়লেখা, শিশুসহ ২ জনের মৃত্যু

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাকালুকি হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ২০০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। 

পৌর শহরের বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি উঠেছে। এ ছাড়া উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। এ ছাড়া পানিতে চান্দগ্রাম-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। 

এদিকে গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় ভারী বর্ষণে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউপির আয়েশাবাদ চা-বাগানে টিলা ধসে রাজন ব্যানার্জি (৬০) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় চারজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া বড়লেখা সদর ইউপির কেছরিগুল গ্রামে টিলা ধসে একজন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের আদিত্যের মহাল এলাকায় ঢলের পানিতে গতকাল শনিবার তলিয়ে যাওয়া একবন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট শিশুর মরদেহ আজ রোববার উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ওই শিশুর নাম জানা যায়নি।

এদিকে গতকাল শনিবার বিকেলে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বড়লেখার বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদর্শন করে উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে দুর্যোগ মোকাবিলায় জরুরি সভা করেছেন। এ সময় তিনি জনদুর্ভোগ লাগবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেন।

উত্তর শাহবাজপুর ইউপির চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, আয়েশাবাগ চা-বাগানে শনিবার সকালে টিলা ধসে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় চারজন আহত হয়েছে। টিলার পাদদেশে যারা ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। তাদের নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে। 

বড়লেখা পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী বলেন, পৌরসভার বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে পানি উঠেছে। এতে প্রায় আড়াই হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আজ রোববার শহর থেকে পানি নেমে গেলেও পৌরসভার নিচু এলাকা এখনো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এ ছাড়া পৌর শহরের প্রায় সব কটি দোকানে পানি উঠে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতির পরিমাণ এখনো পরিমাপ করা হয়নি। এ ছাড়া আদিত্যের মহাল এলাকায় শনিবার ঢলের পানিতে পড়ে তলিয়ে যাওয়া এক শিশুর মরদেহ আজ রোববার সকালে উদ্ধার করা হয়েছে।

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বলেন, বড়লেখায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ও টিলা ধস প্রতিরোধে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। পাশাপাশি ২১টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। 

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা উবায়েদ উল্লাহ খান বলেন, ‘বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের জন্য শুকনো খাবার প্রস্তুত করা হয়েছে। আজ আমরা পানিবন্দী এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করেছি।’

প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন এই এলাকার মানুষপল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম এমাজ উদ্দিন সরদার বলেন, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পল্লী বিদ্যুতের সাব-স্টেশন পানিতে নিমজ্জিত ছিল। পানি এখন নেমেছে। তবে ভারী বৃষ্টি হলে তা আবার তলিয়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, ভারী বৃষ্টিতে বিভিন্ন স্থানে ২০টি বড় গাছ পড়ে গেছে, ১৮টি স্থানে তার ছিঁড়েছে। ২২টি স্থানের কোথাও পল্লী বিদ্যুতের পোল ভেঙে গেছে, কোথাও হেলে পড়েছে, আবার কোথাও তা পড়ে গেছে। ২৬টি মিটার ভেঙে গেছে এবং ১৬টি ইন্সুলেটর  ও ৮টি ক্রস আর্ম ভেঙে গেছে। এ ছাড়া ১২টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে, ২১ কিলোমিটার লাইন পানিতে তলিয়ে গেছে এবং কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতের লোকজন লাইন মেরামতে কাজ করছেন। পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। 

বড়লেখা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা শামীম মোল্লা বলেন, ‘চান্দগ্রাম-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান তলিয়ে গিয়েছিল। আমাদের ফায়ার সার্ভিসে পানি উঠেছিল। আজ ভোরে পানি নেমে গেছে। তবে ভারী বৃষ্টি হলে তা আবার তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত