Ajker Patrika

লোডশেডিংয়ের শিডিউল বিপর্যয়ে সেচ সংকট ও কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
লোডশেডিংয়ের শিডিউল বিপর্যয়ে সেচ সংকট ও কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত

ঠাকুরগাঁওয়ে লোডশেডিংয়ের শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে আউশ ও রোপা আমন খেতে সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় মুরগি খামারি ও মাছের হ্যাচারি মালিকেরা বিপাকে পড়েছেন। শুধু তাই নয়, কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। জেলায় বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ প্রায় অর্ধেক থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) ও পল্লিবিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা। 

বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ৮০ মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে এর অর্ধেক। ফলে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এতে শিডিউলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে সব শ্রেণির গ্রাহকদের ভোগান্তি আরও বাড়ছে। এরই মধ্যে গত এক সপ্তাহে জেলার গ্রাম ও শহরে লোডশেডিংয়ের কারণে জমিতে সেচ দিতে বিড়ম্বনায় পড়েছেন প্রান্তিক চাষিরা। বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় সেচব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। 

সদর উপজেলার নতুনপাড়া গ্রামের কৃষক সাহাবউদ্দিন বলেন, দিন ও রাতের বেশির ভাগ সময় ঠিকমতো বিদ্যুৎ থাকছে না। বিদ্যুৎ চালিত সেচপাম্পের মাধ্যমে জমিতে সময়মতো পানিও দেওয়া যাচ্ছে না। শ্রাবণে খরা ও ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছি। 

নুরুল আমিন নামে স্থানীয় আরেক কৃষক বলেন, এখন আমন মৌসুম চলছে। জমিতে ঠিকমতো পানি দিতে হবে। না হলে ধান রোপণ ব্যাহত হবে। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় ঠিকমতো পানি দেওয়া যাচ্ছে না। তাই কৃষকেরা যাতে ঠিকমতো বিদ্যুৎ পায়, সেদিকে সরকারের বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। 

অপরদিকে, লোডশেডিংয়ের কারণে ঠাকুরগাঁওয়ের বিসিক শিল্পনগরীসহ ছোটবড় কারখানাগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিদিন কারখানাগুলোতে কর্মঘণ্টা অপচয় হচ্ছে। ফলে মালিকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও বিসিক শিল্পনগরীর উপব্যবস্থাপক নুরেল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, শিল্পনগরীতে ৫৩টি কলকারখানা রয়েছে। লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদনমুখী কারখানা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 

রাজ্জাক গ্রুপের গোল্ডেন ফাইবার ইন্ডাস্ট্রিজ নামে জুটমিল; আটা, ময়দা, সুজি, সাবান ও প্লাস্টিকের কারখানা এবং রাইসমিলগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় শ্রমিকেরা অলস সময় পার করছেন। এতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ক্ষতির মুখে পড়ছে কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে, হিমাগারগুলোতে জেনারেটর চালানো হচ্ছে। এতে করে হিমাগারের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এ কারণে মজুতকৃত পণ্যের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আলু বীজের সমস্যা আরও বেশি দেখা দিতে পারে। 

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও পল্লিবিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার আবু আশরাফ মো. ছালেহ্ বলেন, জেলায় পল্লিবিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহকসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ লাখ। এ পরিমাণ গ্রাহকের প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে ৬০ মেগাওয়াট। তবে বর্তমানে দিনে পাওয়া যাচ্ছে ২৭ থেকে ২৮ মেগাওয়াট ও রাতে ৪০ মেগাওয়াট। 

লোডশেডিংয়ের সময়সূচি না মানার বিষয়ে জেনারেল ম্যানেজার বলেন, ঘোষিত শিডিউল মানা যাবে না। কারণ ওই শিডিউলে ১০ শতাংশ লোডশেডিংয়ের কথা উল্লেখ থাকলেও বর্তমানে ঘাটতি রয়েছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত