Ajker Patrika

কারামুক্তির পর ফের যৌন হয়রানির অভিযোগ, স্কুলশিক্ষক বরখাস্ত 

চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২: ২০
Thumbnail image

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে যৌন হয়রানির অভিযোগে জিয়াউর রহমান নামের এক শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে ম্যানেজিং কমিটি। এই শিক্ষক থানাহাট পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের গণিত বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদে রয়েছেন। তিনি এর আগেও ওই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে হাজতে ছিলেন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২২ জুন এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে তোলেন বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক। এ সময় তিনি প্রধান শিক্ষক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। 

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমার মেয়ে একটি ব্যাচে সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ডাকবাংলোসংলগ্ন শিক্ষক জিয়াউর রহমানের নিজস্ব জায়গায় নির্মাণ করা একটি ঘরে প্রাইভেট পড়ত। প্রাইভেট পড়ানোর এক ফাঁকে শিক্ষক জিয়াউর রহমান আমার মেয়েকে টিউবওয়েল পাড়ে ডেকে নিয়ে তার স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেওয়ার চেষ্টা করেন ও কুপ্রস্তাব দেন। পরে বাড়িতে ফিরে সে আমাদের জানায়।’ এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক শিক্ষক জিয়াউর রহমান মোবাইল ফোনে আমাদের কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন তিনি।  

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভার সিদ্ধানুযায়ী শিক্ষক জিয়াউর রহমানের কাছে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। দুই দফায় শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলেও তিনি সন্তোষজনক জবাব দেননি। তৃতীয় দফায় আবারও নোটিশ দেওয়া হলে অভিযুক্ত শিক্ষক পুনর্তদন্তের জন্য আবেদন করেন। 

এ ঘটনায় সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিনহাজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি তদন্তপূর্বক ওই শিক্ষককে দোষী সাব্যস্ত করেন। কেন তাঁকে বরখাস্ত করা হবে না, এই মর্মে গত ২৯ আগস্ট কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশের সন্তোষজনক জবাব না পাওয়ায় ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২২ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক তৈয়ব আলী স্বাক্ষরিত পত্রে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। 

এদিকে শিক্ষক জিয়াউর রহমানকে বরখাস্তের খবর প্রকাশ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছে। তারা বলে, দুশ্চরিত্রের একজন শিক্ষকের কারণে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানটির মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা তাকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্তের দাবি করেছে। 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, ‘সাময়িকভাবে বরখাস্ত নয়, আমি ওই শিক্ষকের চূড়ান্ত বহিষ্কারের দাবি করছি।’ 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক জিয়াউর রহমান বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে আমি জানি না। আমাকে কেউ পত্র দিতে আসেনি।’ 

স্কুলের নিরাপত্তাকর্মী জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমি জিয়া স্যারকে চিঠি দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি চিঠি নেননি।’ 

স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. তৈয়ব আলী বলেন, ‘বিধি মোতাবেক তাঁকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অফিসের পিয়নের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানকে সাময়িক বরখাস্তের পত্র দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি পত্রটি গ্রহণ করেননি। পরে পত্রটি ২৫ সেপ্টেম্বর তাঁর ঠিকানায় ডাক যোগে পাঠানো হয়েছে।’  

ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নঈম উদ্দিন জানান, বিধি মোতাবেক ওই শিক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির মামলায় ২০১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি শিক্ষক জিয়াউর রহমান পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে হাজতবাস করেন। এর তিন মাস পর জামিনে বেরিয়ে ফের ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত