Ajker Patrika

ফুলবাড়ীতে এক বাগানে আম-আঙুর চাষ করে সাড়া ফেলেছেন হাশেম

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ জুন ২০২৩, ২০: ৩৮
Thumbnail image

একই বাগানে আম, আঙুর, মাল্টাসহ বিভিন্ন ফলের চাষ করে সাড়া ফেলেছেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর উদ্যোক্তা হাসেম আলী। তবে তাঁর বাগানের আঙুরই মুখ্য। বাগানের প্রায় আড়াই শ আঙুরগাছের মধ্য ৪০টি গাছে আঙুর ধরেছে। এ ছাড়া তাঁর বাগানে কাটিং পদ্ধতিতে মাল্টা, আঙুর ও আমের চারা গাছ তৈরি করা হচ্ছে। তাঁর এই সাফল্য যেন হাসি-তামাশাকারীদের মুখে কালির ছিটা।

হাশেম আলী প্রথম যখন মিশ্র এ বাগান করার উদ্যোগ নেন তখন এলাকার মানুষজন হাসি-তামাশা করতেন। বলতেন, ‘এটা পাগলামি। এখানে আঙুর নয়, ছাই চাষ হবে। কোনোভাবেই এ মাটিতে আঙুর ফলানো সম্ভব নয়।’ তবে তাদের কথায় তিনি হতাশ হননি হাসেম। স্বপ্ন নিয়ে এগিয়েছেন। হয়েছেন সফল। বাগানে লাগিয়েছেন আড়াই শ আঙুরগাছ। এর মধ্যে গত বছর ২০টি গাছে ফল ধরে। এতে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। 

এ বছর ৪০টি গাছে থোকায় থোকায় ফল ধরেছে। আশাতীত ফলনে স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। ইতিমধ্যে ফলে পাক ধরেছে। পাকা ফল তুলে স্থানীয়ভাবে দোকানদারদের কাছে ৩০০ টাকা কেজি দরে দেড় মণ আঙুর বিক্রি করেছেন। কয়েক দিনের মধ্যে আরও ৪ মণ বিক্রির আশা করছেন। শুধু তাই নয়। তাঁর বাগানে রয়েছে কাটিং পদ্ধতিতে তৈরি করা বিভিন্ন প্রজাতির মাল্টা, আঙুর ও আমের চার হাজার চারা গাছ। বাগান দেখতে আসা দর্শনার্থী ও উৎসাহী উদ্যোক্তারা তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন জাতের আঙুর ও আমের চারা কিনছেন। প্রতিটি চারা গাছ ৫০০-১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছেন তিনি। 

ফুলবাড়ীতে চাষি হাশেম আলীর আঙুরখেতসরেজমিন দেখা গেছে, ফুলবাড়ী উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে কাশিপুর ইউনিয়নের আজোয়াটারী গ্ৰাম। এ গ্ৰামের কৃষি উদ্যোক্তা হাসেম আলী দুই বিঘা জমিতে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এ মিশ্র বাগান করেন। এ অঞ্চলের সমতল মাটি আঙুর চাষাবাদের উপযোগী হওয়ায় দেশি-বিদেশি আঙুর, আম, মাল্টাসহ মিশ্র ফল ও চারা গাছ উৎপাদনের পরিকল্পনা করেন। 

এ কাজে সহযোগিতা করেন স্থানীয় ব্যাংক কর্মকর্তা রুহুল আমিন। তাঁর এ বাগানে শুধু আঙুরগাছ রয়েছে ৩০-৪০ জাতের। তিনি বলেন, তিন বছর আগে তিনি একবার ভারতে যান। সেখানে এটি চাষ করতে দেখেছেন, যা তাঁর মধ্যে আগ্রহ তৈরি করে। এরপর ইউটিউবে আঙুর চাষাবাদের পদ্ধতি রপ্ত করেন। ২০২২ সাল থেকে শুরু করেন চারা গাছ সংগ্রহ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানসম্মত আঙুর চারা বাদে রাশিয়া, ইউক্রেনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বাইকুনর, গ্রিনলং, একেলো, এনজেলিকা, মুনড্রপসহ প্রায় ৩০ প্রজাতির উন্নত জাতের ৪০০ আঙুরের চারা সংগ্রহ করেন। 

এরপর দুই বিঘা জমিতে রিং টবে প্রয়োজনীয় রাসায়নিক ও জৈব সার প্রয়োগ করেন। পাশাপাশি বিদেশে যেভাবে আঙুর চাষ করা হয়, সে কৌশল অবলম্বন করে চারা রোপণ করেন। তাঁর এ কাজে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১২ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত দেড় মণ আঙুর ও বিভিন্ন জাতের আঙুর ও আমের চারা বিক্রি করে পেয়েছেন পাঁচ লাখ টাকা। 

হাসেম আলী বলেন, ‘গত বছর গাছে কিছু আঙুর এসেছিল। এ বছর আরও বেশি ফল এসেছে। আগামী বছর সবগুলো গাছে আঙুর আসলে তা দিয়ে জেলার বাজারের চাহিদা অনেকটাই মেটানো সম্ভব হবে। আঙুর পাকার সময় বৃষ্টি হলে আঙুরের গুণাগুণসহ আকৃতি নষ্ট হয়ে যায়। আবার পাখি খেয়ে ফেলে বলে এ নিয়ে সতর্ক থাকতে হয়।’ 

ফুলবাড়ীতে চাষি হাশেম আলীর বাগানে কাটিং পদ্ধতিতে তৈরি করা হচ্ছে মাল্টা, আঙুর ও আমের চারা গাছআঙুরের বাগান একনজর দেখতে জেলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন তাঁর বাগানে ভিড় করেছেন। আঙুর বাগান দেখতে আসা কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা আবু রায়হান ফারুক জানান, হাসেম আলীর কাছ থেকে আঙুর চারা সংগ্রহ করে তিনি বাগান করেছেন। বাগানে ফল এসেছে। এ ফলের রং ও স্বাদ বাজারে আমদানি করা আঙুরের চেয়েও ভালো।

পাশের নাগেশ্বরী উপজেলার ব্যাপারী হাট থেকে আসা মহির উদ্দিন বলেন, হাসেম আলীর মতো এ জেলায় আঙুর চাষ ছাড়িয়ে দেওয়া গেলে স্থানীয় বাজারে আমদানি-নির্ভরতা কমার পাশাপাশি লাভবান হতে পারবেন চাষিরাও। উপজেলার শিমুলবাড়ি গ্ৰামের রজব আলী বলেন, এসব আঙুরের রং ও স্বাদ বিদেশ থেকে আমদানি করা আঙুরের মতোই। 

হাশেম আলী বলেন, যুবক-যুবতীরা চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেরাই উদ্যোক্তা হলে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, অন্যদিকে আর্থিকভাবেও সচ্ছলতা ফিরে আসবে। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন জানান, উদ্যোক্তা হাসেম আলী আবাদি জমিতে আঙুর ফল ও চারাগাছ উৎপাদন করে ফুলবাড়ীসহ কুড়িগ্রাম জেলাজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। এই প্রথম এই ফুলবাড়ী উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষ করায় অনেকেই একনজর দেখার জন্য ছুটছেন এই উদ্যোক্তার বাগানে। তাঁর আঙুর ফলের চারা গাছ সবল ও পুষ্ট হয়েছে। অনেক গাছে ফলনও ভালো হয়েছে। 

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, আঙুর চাষের উপযোগী বিপুল পরিমাণ জমি, জলবায়ু ও তাপমাত্রা অনুকূলে থাকায় ভবিষ্যতে কুড়িগ্রাম জেলায় এ ফল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। জেলায় আঙুর চাষের উপযুক্ত জমি রয়েছে ৪৭ হাজার ৩০২ হেক্টর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত