Ajker Patrika

কাজের সন্ধানে ছুটছেন উত্তরের কৃষিশ্রমিকেরা

­­ জসিম উদ্দিন, নীলফামারী
কাজের সন্ধানে কৃষিশ্রমিকেরা দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার জন্য প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছেন। সম্প্রতি নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে। ছবি: আজকের পত্রিকা
কাজের সন্ধানে কৃষিশ্রমিকেরা দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার জন্য প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছেন। সম্প্রতি নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসের এ সময়ে উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের কয়েকটি জেলায় কর্মহীন হয়ে পড়েন কৃষিশ্রমিকেরা। এসব জেলায় খেতের ইরি-বোরো ধান পাকতে এখনো এক মাসের অনেক সময় বাকি। তাই তাঁরা কাজের সন্ধানে পরিজন ছেড়ে বের হয়ে পড়েছেন রাজশাহী ও খুলনার বিভিন্ন জেলা-উপজেলার উদ্দেশে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বোরো মৌসুমে প্রতিবারের মতো এবারেও বোরোচাষিরা কৃষিশ্রমিকের সংকটে রয়েছেন। বিশেষ করে জয়পুরহাট, পাঁচবিবি, আক্কেলপুর, সান্তাহার, আদমদীঘি, আত্রাই, নওগাঁ, নাটোর, যশোর, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় এ সংকট। তাই উত্তরের হাজার হাজার কৃষিশ্রমিক কাজের সন্ধানে ট্রেনে, বাসে ও খোলা পিকআপে চড়ে ওই সব এলাকায় ছুটছেন। প্রতিদিন সকালে নীলফামারীসহ পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ, দিনাজপুরের পার্বতীপুর, খানসামা ও চিরিরবন্দর, রংপুরের তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলার দিনমজুরেরা ভিড় করছেন উত্তরের রেলস্টেশনগুলোতে। বিশেষ করে চিলাহাটি, ডোমার, নীলফামারী ও সৈয়দপুরে রেলস্টেশনে কৃষিশ্রমিকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।

সৈয়দপুর রেলস্টেশনে খুলনাগামী রকেট মেইল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন নীলফামারী সদর উপজেলার চড়াইখোলা ইউনিয়নের বটতলী এলাকার কৃষিশ্রমিকের সর্দার আশরাফুল হক। তিনি জানান, গ্রামের ১০ জনের একটি দল নিয়ে ধান কাটতে যাচ্ছেন বগুড়া জেলার সান্তাহারে। ওই এলাকায় প্রতিবছর ধান কাটতে যান তাঁরা। ওখানকার গৃহস্থদের সঙ্গে এই কৃষিশ্রমিক সর্দারের যোগাযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘মাঠে ধান পাকলে মোবাইল ফোনে আমাদের ডেকে নেয় সান্তাহারের গৃহস্থরা।’

কথা হয় কৃষিশ্রমিক জগদীশ চন্দ্র রায়ের সঙ্গে। তাঁর বাড়ি নীলফামারীসংলগ্ন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার রামকলা গ্রামে। ওই কৃষিশ্রমিক বলেন, ‘কাজ না থাকায় প্রায় এক মাস থেকে বসে আছি। অল্প পুঁজি ছিল, তা শেষ হয়ে গেছে। এবারে আমার মেয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে মেয়ের জন্য নতুন জামা-কাপড়, জুতা কেনা ও পরীক্ষাকেন্দ্রে যাতায়াতের খরচ চালাতে হয়েছে। তাই পরিবারে সদস্যদের মুখের দিকে তাকিয়ে আর দাদন ব্যবসায়ীর টাকা পরিশোধ করার জন্য গ্রামের অন্য কৃষিশ্রমিকদের সাথে নাটোর জেলায় ধান কাটতে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘গত বছর নওগাঁর আত্রাইয়ে ধান কাটতে গিয়েছিলাম। চুক্তিভিত্তিক ধান কাটতে গিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা মজুরি পাওয়া যায়। রাতে থাকা ও তিনবেলা খাবার গৃহস্থরা বহন করায় ভালো উপার্জন হয়।’

কাজের সন্ধানে কৃষিশ্রমিকেরা দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার জন্য প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছেন। সম্প্রতি নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে। ছবি: আজকের পত্রিকা
কাজের সন্ধানে কৃষিশ্রমিকেরা দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার জন্য প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছেন। সম্প্রতি নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে। ছবি: আজকের পত্রিকা

এদিকে অনেকে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করার পরেও যাত্রীদের ভিড়ে ট্রেনে উঠতে পারছেন না। তাই বিকল্প পথে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে গন্তব্যে যাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন।

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার আলমপুরের কৃষিশ্রমিক মেহের আলী ও আবু তালেব জানান, টিকিট কাটতে আইডি কার্ড লাগে, তা জানতেন না। তবে আসন ছাড়া টিকিট সংগ্রহ করতে পেরেছেন খুলনাগামী ‘রূপসা এক্সপ্রেস’ ট্রেনের। কিন্তু যাত্রীদের ভিড়ের চাপে ওই ট্রেনে উঠতে পারেননি তাঁরা। স্টেশন কর্তৃপক্ষ মানবিক দিক বিবেচনা করে এসব কৃষিশ্রমিককে পরবর্তী ট্রেনে গন্তব্যে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছেন এমনটি জানালেন তাঁরা।

সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার ওবাইদুল ইসলাম রতন আজকের পত্রিকাকে জানান, তিন-চার দিন ধরে খুলনা ও রাজশাহীগামী ট্রেনগুলোতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। এর মূল কারণ হলো উত্তরের জেলা থেকে কৃষিশ্রমিকেরা ছুটছেন দক্ষিণাঞ্চলে। তিনি বলেন, আসনের কয়েক গুণ বেশি আসন ছাড়া টিকিট বিক্রি হচ্ছে। কৃষিশ্রমিকদের সংকট লাঘবে এবং গৃহস্থরা দ্রুত মাঠের ধান যেন ঘরে তুলতে পারেন—এ কথা মাথায় রেখে আসনবিহীন টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। তবে কেউ যাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করতে না পারে, সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি রেলওয়ে পুলিশ সজাগ রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত