Ajker Patrika

আধুনিক মেশিন আছে, নেই চিকিৎসক, হাসপাতালে সেবা বন্ধ দেড় মাস

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও
ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে চিকিৎসক না থাকায় বন্ধ আলট্রাসনোগ্রাম। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে চিকিৎসক না থাকায় বন্ধ আলট্রাসনোগ্রাম। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে এখন তালা ঝুলছে কার্যত। আধুনিক মেশিন আছে, চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ঘরও আছে, নেই শুধু আলট্রাসনোগ্রাম করার চিকিৎসক। ফলে গত দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ এই সেবা। বাধ্য হয়ে রোগীদের যেতে হচ্ছে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে—বহুগুণ বেশি খরচে।

আজ রোববার সকালে হাসপাতালে ভর্তি হন ঠাকুরগাঁও সদরের পীরগঞ্জ উপজেলার মনির হোসেন (৪৫)। পেটের ব্যথা নিয়ে ভর্তি হওয়া এই দিনমজুরের পিত্তথলিতে পাথর ধরা পড়ে। চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁকে আলট্রাসনোগ্রাম করাতে বলা হয়। কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারেন, মেশিন আছে, চিকিৎসক নেই।

মনির হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালে এসে শুনলাম আলট্রাসনোগ্রাম হচ্ছে না। পরে বাধ্য হয়ে বাইরে করালাম, ১২০০ টাকা লাগল। অথচ সরকারি ফিতে হতো ২২০ টাকা। গরিবের জন্য হাসপাতাল যদি এভাবে বন্ধ হয়ে থাকে, তাহলে কোথায় যাব আমরা?’

এই হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে আলট্রাসনোগ্রাম সেবার জন্য প্রতিদিন গড়ে ৪০-৫০ জন রোগী আসেন। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় সবাইকেই ফিরতে হচ্ছে। হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, পুরো পেটের আলট্রাসনোগ্রামের সরকারি ফি ২২০ টাকা এবং আংশিক পেটের জন্য ১১০ টাকা। অথচ বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এই সেবার জন্য দিতে হচ্ছে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা।

হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে দেখা যায়, মেশিন চালু অবস্থায় আছে। সাজানো রয়েছে চিকিৎসকের চেয়ার, ডেস্ক, কম্পিউটার, ফটোকপিয়ার। কিন্তু কক্ষের দরজায় একটি কাগজ টাঙানো—‘চিকিৎসক না থাকায় আলট্রাসনোগ্রাম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ।’

রাণীশংকৈল থেকে আসা সোহাগা বেগম (৩২) বলেন, ‘আমার মেয়েটা তিন দিন ধরে পেটে ব্যথা নিয়ে কাতরাচ্ছে। এখানে এসে দেখি সেবা বন্ধ। এক শ টাকা নিয়ে এসেছিলাম, এখন বাইরে গেলে আরও এক হাজার লাগবে। এত টাকা কোথায় পাব?’

সদর উপজেলার ধর্মগড় এলাকার কৃষক আব্দুল কাদের (৬০) বলেন, ‘আমি চোখে ভালো দেখি না। মেয়েকে নিয়ে আসছি, আলট্রাসনোগ্রামের জন্য। এসে দেখি সবই আছে, শুধু চিকিৎসক নেই। তাহলে সরকার এত বড় হাসপাতাল বানিয়ে কী লাভ করল?’

জানতে চাইলে হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইনচার্জ আব্দুর রব চৌধুরী বলেন, ‘গত দেড় মাস ধরে এখানে সনোলজিস্ট নেই। এর আগে একজন মেডিকেল অফিসার প্রেষণে এসে সপ্তাহে তিন দিন আলট্রাসনোগ্রাম করতেন। তাঁর প্রেষণ প্রত্যাহার হওয়ায় সেবাটি পুরোপুরি বন্ধ।’ আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘২০২২ সালে এই হাসপাতালে আলট্রাসনোগ্রাম চালু হয়। এখন সনোলজিস্ট না থাকায় সেবাটি ব্যাহত হচ্ছে।’

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন আবুল বাশার মো. সায়েদুজ্জামান বলেন, ‘আগে যিনি এখানে সেবা দিতেন, সেই বালিয়াডাঙ্গীর মেডিকেল অফিসার ডা. শাহ আজমির রাসেলকে আবারও প্রেষণে আনার চেষ্টা চলছে। তবে সারা দেশে সনোলজিস্টের সংকট রয়েছে, তাই স্থায়ীভাবে কাউকে এখানে পাওয়া যাচ্ছে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিশ্বে ১৮৬ দেশের মধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ মাত্র একটি: গবেষণা

একচেটিয়া ভাতা লেনদেনের সুবিধা হারাচ্ছে ‘নগদ’

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করলেন প্রধান বিচারপতি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পদত্যাগের নাটক সাজানো হয়: গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

আপনার ছেলেমানুষি মানায় না: প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে দুদু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত