Ajker Patrika

তিস্তার ভাঙনে বিলীনের পথে কমিউনিটি ক্লিনিক

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
তিস্তার ভাঙনে বিলীনের পথে কমিউনিটি ক্লিনিক

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও ধরলার পানি দ্রুত হ্রাস পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সব কটি নদনদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় দুর্গত এলাকার বেশির ভাগ বাড়িঘর থেকে পানি নেমে গেছে। উঁচু স্থান ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেওয়া বানভাসিরা বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। এদিকে আবারও তিস্তায় নদীতে শুরু হয়েছে ভাঙন। এই নদীর ভাঙনে বিলীন হতে বসেছে রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নের একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, জেলার সব কটি নদনদীর পানি বর্তমানে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সব নদীর পানি প্রবাহ হ্রাস পেতে শুরু করলেও তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। আজ রোববার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে। তবে এখনো এর পানি প্রবাহ বিপৎসীমার নিচে রয়েছে বলে জানায় পাউবো।

রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নের দুইটি ওয়ার্ডে তিস্তার তীব্র ভাঙনে গত দুই সপ্তাহে অন্তত ২৫টি পরিবার বাস্তুভিটা হারিয়েছে। আগ্রাসী তিস্তার ভাঙনে বিলীন হওয়ায় অপেক্ষায় ওই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গতিয়াশাম কমিউনিটি ক্লিনিক। ক্লিনিকের একেবারে কিনারে প্রবহমান তিস্তার ভাঙন ঠেকাতে পাউবোর পক্ষ থেকে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হলেও তাতে শান্ত হচ্ছে না তিস্তা। বাধ্য হয়ে ক্লিনিকের আসবাবসহ দরজা জানালা খুলে নিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের প্রাথমিক চিকিৎসার প্রথম আশ্রয়স্থল ক্লিনিকটি যে কোনো সময় নদীগর্ভে বিলীনের আশঙ্কায় ক্লিনিক ভবন নিলামের উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

গতিয়াশাম গ্রামের মোতাহার, নাছির ও আমেনাসহ স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত বছর থেকে কমিউনিটি ক্লিনিকটি ভাঙনের হুমকিতে থাকলেও শুধু বালুর বস্তা ফেলে দেওয়া ছাড়া ক্লিনিক ভবন রক্ষায় আর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ক্লিনিকটির এই পরিণতির জন্য তাঁরা কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করেন।

কমিউনিটি ক্লিনিকটির দায়িত্বে থাকা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার আলতাফ বলেন, ক্লিনিক ভবনের কিছু অংশের নিচ দিয়ে নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। যে কোনো সময় ভবনটি নদী গর্ভে চলে যেতে পারে। উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে ভবনটি নিলামের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস প্রামাণিক বলেন, ইউনিয়নের ৫ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে তিস্তার ভাঙন চলছে। কয়েক দিনে তিস্তার ভাঙনে ২৫ / ৩০ পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কমিউনিটি ক্লিনিকটির আর শেষ রক্ষা হচ্ছে না। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হলেও তাঁদের পুনর্বাসনে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানান এই ইউপি চেয়ারম্যান।

খুলে নেওয়া হয়েছে ক্লিনিকের দরজাএ নিয়ে রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ভাঙনের শিকার কমিউনিটি ক্লিনিক ভবনটি নিলামের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

গত দেড় দুই বছর থেকে ভাঙনের হুমকিতে থাকলেও ক্লিনিক ভবনটি রক্ষায় কেন স্থায়ী উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, এমন প্রশ্নে ডা. মিজানুর বলেন, ‘এটা বলতে গেলে অনেক কথা বলতে হবে। আমি ঢাকায় একটি মিটিংয়ে আছি। তাই এই প্রশ্নের উত্তর এই মুহূর্তে দিতে পারছি না।’

ভাঙনের কবলে থাকা ক্লিনিক ভবন নিলামের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরে তাসনিম বলেন, ‘নদী ভবনটির একেবারে কাছে চলে এসেছে। আমরা নিলামের প্রক্রিয়া করে রাখছি। শেষ রক্ষা না হলে কার্যাদেশ দেওয়া হবে।’

ক্লিনিকটি রক্ষায় আগে থেকে স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ কেন নেওয়া হয়নি, জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, ‘স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা কোনো প্রকল্প পাইনি। শুধু জিও ব্যাগ ফেলা ছাড়া আর কোনো কাজের অনুমতি পাইনি। গত বছর জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে এ বছরও ফেলা হয়েছে। তারপরও নদী একেবারে কাছে চলে এসেছে।’

ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের চিকিৎসা সেবার জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা, এমন প্রশ্নে ইউএনও বলেন, ‘আপাতত বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। তাঁদেরকে পার্শ্ববর্তী কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে সেবা নিতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

বসুন্ধরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে ২ বিদেশি নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ: ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা, নিষিদ্ধের দাবি শিক্ষার্থীদের

ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে পন্টিংয়ের আরেকটি রেকর্ড ভাঙলেন কোহলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত