Ajker Patrika

বদরগঞ্জে ১৮৩ বস্তা সরকারি চাল উদ্ধার, তদন্ত নিয়েই প্রশ্ন

আশরাফুল আলম আপন, বদরগঞ্জ (রংপুর)
আপডেট : ২৪ মে ২০২৫, ০৯: ৩২
বদরগঞ্জ খাদ্য গুদামের সীলমোহরযুক্ত ১৮৩ বস্তা (প্রতি বস্তা ৩০ কেজি) সরকারি চাল একটি গদিঘরের উঠান থেকে উদ্ধার করেন ইউএন মো. মিজানুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
বদরগঞ্জ খাদ্য গুদামের সীলমোহরযুক্ত ১৮৩ বস্তা (প্রতি বস্তা ৩০ কেজি) সরকারি চাল একটি গদিঘরের উঠান থেকে উদ্ধার করেন ইউএন মো. মিজানুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

রংপুরের বদরগঞ্জ খাদ্যগুদামের সিলমোহরযুক্ত ১৮৩ বস্তা (প্রতি বস্তা ৩০ কেজি) সরকারি চাল একটি গদিঘরের উঠান থেকে উদ্ধার করেছেন ইউএনও মো. মিজানুর রহমান। পরে চালগুলো সরকারি খাদ্যগুদামে রাখা হয়। ঘটনার চার দিন অতিবাহিত হলেও রহস্যজনক কারণে আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। ঘটনাটির তদন্ত করতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিপ্লব কুমার সিংকে। তবে চাল পাচারের সঙ্গে খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জড়িত আছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার তাঁদের দিয়েই তদন্ত করায় জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে বদরগঞ্জ সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে সরকারি চাল ট্রলিতে নিয়ে মধুপুর ইউনিয়নের বোর্ডঘরা এলাকায় বাপ্পি সাহা তাঁর ব্যক্তিগত গদিঘরে রাখছিলেন। এ সময় এলাকার মানুষ ট্রলিসহ চালের বস্তা আটক করে ইউএনওকে খবর দেন। ইউএনও ওই দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে গদিঘরের উঠানে ট্রলিতে রাখা সরকারি খাদ্যগুদামের সীলমোহরযুক্ত ১৫৬ বস্তা চাল উদ্ধার করে তাঁর কার্যালয়ে নেন। পরদিন বুধবার বিকেলে আবারও ইউএনও ওই গদিঘরে অভিযান চালিয়ে ২৭ বস্তা চাল উদ্ধার করেন। পরের দুই দিনের উদ্ধার করা ১৮৩ বস্তা চাল সরকারি খাদ্যগুদামে রাখেন। তবে ওই চাল নিয়ে অভিযোগ উঠেছে দুই ধরনের।

কেউ অভিযোগ করে বলছেন, সরকারি গুদাম কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে বাপ্পী সাহা সরকারি গুদামে নিম্নমানের চাল দিয়ে (রদবদল করে) গুদামের ভালো চাল নিয়ে যান। এ ধরনের ব্যবসা তিনি দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন। আবার কেউ বলছেন, উপজেলায় ভিডব্লিউবি কর্মসূচির পাঁচ মাসের চাল ১০ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা বিতরণের জন্য সরকারি গুদাম থেকে তুলছেন। সেখান থেকে কোনো এক চেয়ারম্যান চাল তুলে অসৎ উদ্দেশ্যে পরিষদে না নিয়ে বাপ্পী সাহার কাছে বিক্রি করেছেন।

তবে চাল উদ্ধারের পর ইউএনও মো. মিজানুর রহমান ঘটনাটি তদন্তের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিপ্লব কুমার সিংকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘খাদ্যনিয়ন্ত্রক চাইবেন না তদন্তে সঠিকটা বেরিয়ে আসুক। কারণ সঠিক বিষয়টি বেরিয়ে এলে ওই ব্যবসায়ীর আগে তিনি (খাদ্যনিয়ন্ত্রক) ও সরকারি গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ধরা খাবেন। এ কারণে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নয়-ছয়ভাবে তদন্ত করে বলবেন ওই চাল সরকারি নয়।’

আরেক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রশাসন সরকারি চাল উদ্ধার করেছেন, বিধি মোতাবেক মামলা করবেন, আদালতে প্রমাণিত হবে ওই চাল কোথাকার ।’

তবে চাল ব্যবসায়ী বাপ্পী সাহার সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) রায়হান কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সম্প্রতি এখানে যোগদান করেছি। আমি ওই ব্যবসায়ীকে কোনো গুদাম থেকে চাল দিইনি। এখানে ওই দিন গুদাম থেকে বেশ কিছু ইউপি চেয়ারম্যান চাল তুলে নিয়ে গেছেন। যদি কেউ বাইরে গিয়ে ওই ব্যবসায়ীকে চাল দেন, তাহলে এর দায় তাঁকেই নিতে হবে।’

উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক বিপ্লব কুমার সিং বলেন, ‘আমি কিছুটা তদন্ত করেছি, ওই চাল সরকারি মনে হচ্ছে না। বাপ্পী সাহা মিল পার্টনার, তাঁর কাছে সরকারি সিলমোহরযুক্ত বস্তায় চাল থাকতেই পারে। তবে ওই ব্যবসায়ী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকায় এখনো তাঁর বক্তব্য নিতে পারিনি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইউএনও জনগণের কথায় চাল আটক করেছেন। তবে আমি সঠিক তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেব।’ মামলা না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চাল তো আমি আটক করিনি।’

তবে ইউএনও মো. মিজানুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই ঘটনায় মামলা করার নির্দেশ দিয়েছি খাদ্যনিয়ন্ত্রককে। তিনি এখনো কেন মামলা করেননি তা দেখছি।’

গত শুক্রবার বিকেলে বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আতিকুর রহমান বলেন, ‘ওই ঘটনায় থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি।

উল্লেখ্য, এর আগেও ২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর খাদ্যগুদামের সিলমোহরযুক্ত বদরগঞ্জ সরকারি গুদাম থেকে ১৬ মেট্রিকটন সরকারি চাল পাচার করে বাপ্পী সাহার ওই গদিঘরে রাখা হয়েছিল। ওই সময়ে স্থানীয় সাংবাদিকেরা বিষয়টি জানতে পারলে তৎকালীন সরকারি গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম ঘটনাটি ধামাচাপা দেন। এ নিয়ে ওই বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর আজকের পত্রিকায় ‘১৬ মেট্রিকটন চাল পাচার’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে আশরাফুল ইসলামকে ওসিএলএসডি কার্যালয় থেকে প্রত্যাহার করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত