Ajker Patrika

বিএমডিএর প্রকল্প

১৮ হাজারের কাজ, ১২ হাজারেই শেষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১৫ মে ২০২৫, ০৮: ২৩
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে সংস্কার করা খাল। ছবি: সংগৃহীত
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে সংস্কার করা খাল। ছবি: সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) খাল খননের প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, কার্যাদেশ অনুযায়ী মাটি না কেটে কাজ শেষ করেছেন ঠিকাদার। এ ব্যাপারে সংস্থার চেয়ারম্যান ড. এম আসাদুজ্জামানের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

বিএমডিএর বরেন্দ্র এলাকায় খালে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্প—দ্বিতীয় পর্যায়ের অধীনে এই কাজটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার বড়িয়া খাস খালে। ২৭৯ দশমিক ৬০ মিটার খাল সংস্কারের এই কাজটি দেওয়া হয় আইকন ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। আইকন ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কাছ থেকে কাজটি কিনে নিয়ে করছেন রাজশাহীর হেতেমখাঁ এলাকার ঠিকাদার মো. শাকিব।

নথিপত্রে দেখা গেছে, ২০ লাখ ৫৩ হাজার ৫৯৯ টাকার এ কাজের মধ্যে মাটি খননের জন্য বরাদ্দ ১৯ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬৫ টাকা। খাল থেকে মোট ১৭ হাজার ৯৯৬ ঘনমিটার মাটি খননযন্ত্রের মাধ্যমে তুলে পাড়ে দেওয়ার কথা। প্রতি ঘনমিটার মাটি কাটার জন্য বরাদ্দ ১১০ টাকা। গত ১০ এপ্রিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেন প্রকল্প পরিচালক নাজিরুল ইসলাম।

এরপর কাজ শুরু করেন ঠিকাদার শাকিব। ইতিমধ্যে খননযন্ত্র তুলে নেওয়া হয়েছে খাল থেকে। এখন অভিযোগ উঠেছে যে ঠিকাদার ১৭ হাজার ৯৯৬ ঘনমিটারের বদলে তুলেছেন ১২ হাজার ঘনমিটার মাটি। অর্থাৎ, প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকার কম মাটি কাটা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার খাইরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি ডাকযোগে বিএমডিএ চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগটি পাঠান। এর একটি কপি পাওয়া গেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, নাচোলের বুড়িয়া খাস খাল নামে পরিচিত এই খালটি সেন্দুর মুচিব্রিজ-সংলগ্ন। ঠিকাদার শাকিব আইউব আলী নামের এক ব্যক্তিকে দিয়ে খালটি খনন করিয়েছেন। ৮ মে খননের কাজ শেষ করেছেন আইউব। খাড়িতে ১৭ হাজার ৯৯৬ ঘনমিটার মাটি খননের কথা থাকলেও বিএমডিএর নাচোল উপজেলা জোন অফিসের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ১২ হাজার ঘনমিটার মাটি খনন করা হয়েছে। এখন বিল করার জন্য ঠিকাদার শাকিব সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ফেলেছেন। তাঁদের কাছে আইউব আলী প্রিয় ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন। কারণ, আইউব আলী বরাদ্দের চেয়ে কম মাটি খনন করে কর্মকর্তাদের টাকার বান্ডেল দিয়ে মিষ্টিমুখ করতে পঞ্চমুখ।’

অভিযোগে আরও বলা হয়, যেসব খাল খনন করতে প্রায় ৫০ টাকা (প্রতি ঘনমিটার) খরচ হয়, সেসব খাল আইউব আলী ৩৫-৪০ টাকার মধ্যে খনন করে দেন। এতে ঠিকাদারদের কাছেও তিনি প্রিয় ব্যক্তি। আইউব আলী খাল খনন করলে কোনো কর্মকর্তা তা ভালোভাবে মাপজোখ করেন না। কারণ, কম মাটি খননের জন্য তাঁদের কাছে যথারীতি হিস্যা অনুযায়ী টাকার বান্ডেল পৌঁছে যায়। কিছুদিন আগে মাটি কম খননের জন্য এক্সচেঞ্জ (নির্বাহী প্রকৌশলী) রফিকুল ইসলাম ও শামসুল ইসলাম প্রতিবাদ করলে ঠিকাদার শাকিব ও আইউব আলী তাঁদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার শাকিব বলেন, মাটি কম খনন করা হয়নি। কার্যাদেশে যা ছিল, সে অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে।

খননকাজে নিয়োজিত থাকা আইউব আলী জানান, পাঁচ-ছয় দিন আগে তিনি খনন শেষ করে খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) তুলে নিয়ে এসেছেন।

বিএমডিএর নাচোল জোন কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘আগে ছিল খাল, খননের পর এখন সেটা নদী হয়ে গেছে। আমরা ১০০ ভাগ কাজ বুঝিয়ে দিত পারব।’

প্রকল্পের পরিচালক বিএমডিএর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নাজিরুল ইসলাম মঙ্গলবার দুপুরে বলেন, ‘খাল খননের কাজ প্রায় শেষ। কিছু জায়গায় গাছ আছে, তাই খনন করা যাচ্ছে না।’ মাটি কম খননের ব্যাপারে সংস্থার চেয়ারম্যানের কাছে দাখিল হওয়া অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগামীকাল (বুধবার) আমাদের লোক যাবে, তারা মাপজোখ করবে। যতটুকু মাটি ঠিকাদার কাটবেন, ততটুকুর বিল পাবেন। বেশি টাকা দেওয়া হবে না।’

পরদিন (গতকাল বুধবার) দুপুরেও খালে মাপজোখ করা হয়েছে কিনা, জানতে প্রকল্প পরিচালককে ফোন করা হয়। তখন তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘কম মাটি কেটেছে কিনা, সেটা আমরা বুঝব। সাংবাদিকদের জবাব দিতে পারব না। মোবাইলে কথাও বলব না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কুয়েটে ক্লাস বর্জন নিয়ে শিক্ষক সমিতিতে মতবিরোধ, এক শিক্ষকের পদত্যাগ

এনবিআর বিলুপ্তির জেরে প্রায় অচল দেশের রাজস্ব কর্মকাণ্ড

দুটি নোবেলের গৌরব বোধ করতে পারে চবি: প্রধান উপদেষ্টা

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রশ্নে যে প্রতিক্রিয়া জানাল যুক্তরাষ্ট্র

২ ম্যাচ খেলেই মোস্তাফিজ কীভাবে ৬ কোটি রুপি পাবেন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত