Ajker Patrika

পাবনার চাটমোহর

ভুয়া প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে চাল লুট

  • ভুয়া কমিটি দাখিল করে চাল উত্তোলন।
  • চাল উত্তোলনের বিষয়ে জানেন না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
  • ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী, অভিযোগ ইউএনওর কাছে।
শাহীন রহমান, পাবনা ও শুভাশীষ ভট্টাচার্য, চাটমোহর
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

পাবনার চাটমোহরে ভুয়া বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে জিআর চাল লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে চাল উত্তোলন করা হলেও জানেন না প্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ভুয়া কমিটি দাখিল করে চাল উত্তোলনের পর কালোবাজারে বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

আবার এক ব্যক্তি একাধিক প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে চাল উত্তোলন করেছেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন এলাকাবাসী। তাঁরা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগে জানা গেছে, চাটমোহর উপজেলায় ১১৮টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে উন্নয়নকাজে জিআর প্রকল্পে প্রায় ১৪১ টন চাল বরাদ্দ দেয় জেলা প্রশাসন। তার মধ্যে ফৈলজানা ইউনিয়নের কেশ কিছু মসজিদ-মাদ্রাসা ও এতিমখানার তালিকা অনুযায়ী খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পবাখালী দক্ষিণপাড়া মহিলা হাফিজিয়া মাদ্রাসা, পবাখালী রোকেয়া নুরুল মাদ্রাসা, দেলোয়ারা সামাদ নুরানি কিন্ডারগার্টেন (মক্তব) এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি আব্দুস সামাদ এবং তাঁর ছেলে তৌফিক ইমাম পবাখালী নুরানি কিন্ডারগার্টেনের সভাপতি।

এই চারটি প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সাড়ে ১০ টন। তাঁদের বাবা-ছেলের চারটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শুধু পবাখালী রোকেয়া নুরুল মাদ্রাসার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। বাকি তিনটি প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব নেই। ভুয়া কমিটি তৈরি করে চাল উত্তোলনপূর্বক অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

এদিকে দিঘুলিয়া হাসান হোসেন (রহ.) জামে মসজিদ এবং দিঘুলিয়া পুরোনো বড় জামে মসজিদের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম। এই দুটি মসজিদে বরাদ্দ পাওয়া গেছে সাড়ে ৪ টন। এর মধ্যে দিঘুলিয়া পুরোনো বড় জামে মসজিদের অস্তিত্ব নেই।

ভুয়া কমিটি দাখিল করে চাল আত্মসাৎ করা হয়েছে।

এ ছাড়া মিনহাজ মোড় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও পবাখালী দক্ষিণপাড়া বাইতুল আমান জামে মসজিদের সভাপতি সাইফুল ইসলাম। এর মধ্যে মিনহাজ মোড় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের অস্তিত্ব নেই। এই দুটি প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ পেয়েছে সাড়ে ৫ টন চাল।

পবাখালী নতুন জামে মসজিদ ও পবাখালী দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদের সভাপতি সাইফুল ইসলামের ভাতিজা মনিরুল ইসলাম। এর মধ্যে পবাখালী দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদের নামে ভুয়া কমিটি দাখিল করে চাল উত্তোলন করা হয়েছে। ফরিদা শামসুল মহিলা হাফিজিয়া মাদ্রাসার সভাপতি সাইফুল ইসলামের ভাগনে আজিবর রহমান দেড় টন চাল বরাদ্দ পেয়েছেন। অথচ এই নামে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। পবাখালী লালন একাডেমির নামে দেড় টন চাল উত্তোলন করেছেন সভাপতি হিসেবে সরোয়ার হোসেন। অথচ এই নামে কোনো একাডেমি নেই। তবে এলাকায় একটি মাজার রয়েছে, যার সঙ্গে এটির সংশ্লিষ্টতা নেই। মাজার কমিটির লোকজন জানেন না এই নামে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে পবাখালী মাজারের সভাপতি নায়েব আলী বলেন, ‘আমাদের মাজারের নামে কোনো বরাদ্দ পাইনি। পবাখালী লালন একাডেমির নামে চাল তুলে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে মনে করছি।’ কুঠিপাড়া জামে মসজিদের কোষাধ্যক্ষ ও মুয়াজ্জিন মো. আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘আমার কাছ থেকে উপজেলার একজন ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে বলেছিল মসজিদের নামে অনুদান আসবে, তাই দিছিলাম। পরে একদিন গিয়ে আমার হাতে ৬ হাজার টাকা দিয়ে আসছে। কত কী বরাদ্দ আসছে, তার কিছুই জানি না। পরে ওই টাকা মসজিদের ফান্ডে জমা রেখেছি।’

এই রকমভাবে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে ভুয়া কমিটি তৈরি করে চাল বরাদ্দ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে প্রায় উপজেলাজুড়ে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে নিজেরা কমিটি তৈরি করে চাল উত্তোলন করেছেন। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের আসল কমিটির লোকজন জানেনই না। কিছু প্রতিষ্ঠানের কমিটির লোকজনকে ম্যানেজ করতে কিছু টাকা হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আব্দুস সামাদ বলেন, ‘যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এখন কী করব বলেন, যারা ওটা করেছে তারা তো করেই ফেলছে। ওসব তো বলে তো আর লাভ নেই। আপনার সঙ্গে সাক্ষাতে কথা বলব।’ আরেক অভিযুক্ত মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘মসজিদ একটাই, নাম দুইটা। একবার জালসার জন্য আরেকবার ইফতার পার্টির জন্য আবেদন করা হয়েছিল। প্রথমবার যে নাম দিছিলাম দ্বিতীয়বার আর মনে ছিল না।

ওইভাবে নামটা দেওয়া হইছিল। তবে টাকাটা মসজিদ কমিটির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।’

অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দুইটা মসজিদের নাম নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় আমরা শুধু একটি মসজিদের চাল তুলেছি। আরেকটি মসজিদের চাল তোলা হয়নি।’ এ ছাড়া বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বানানো কমিটির সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মূসা নাসের চৌধুরী বলেন, ‘ফৈলজানা ইউনিয়নের চাল বরাদ্দের অনিয়মের বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তার আগেই আমরা তদন্ত করতে গিয়ে বিষয়গুলো প্রকাশ পেয়েছে। আর অভিযোগের বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছি। তাঁদের জবাব সন্তোষজনক না হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত