অনলাইন ডেস্ক
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার পর দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। ওই হামলায় অন্তত ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়। হামলার পর ভারতে প্রতিশোধের তীব্র দাবি উঠেছে। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে এবং উত্তেজনা বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—পাকিস্তানিদের ভিসা পরিষেবা বন্ধ করা, সম্পর্ক অবনমন এবং সবচেয়ে বড় কথা, ঐতিহাসিক সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি একতরফাভাবে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত।
সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি হলো একটি আন্তসীমান্ত নদীর পানি চুক্তি। এটি ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী ভারত ও পাকিস্তান সিন্ধু অববাহিকার পানি ভাগ করে নেয়। গত ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে অনেক সংঘাত, কূটনৈতিক সংকট এবং প্রায় ধারাবাহিক উত্তেজনার মধ্যেও এই চুক্তি টিকে ছিল।
ভারতের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ভারতীয় বিমানের জন্য নিজ আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে এবং সম্পর্ক অবনমন করেছে। পাকিস্তান দুই দেশের মধ্যকার সব দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্থগিত করার হুমকি দিয়েছে। এর মধ্যে দুই দেশের মধ্যে কাশ্মীর ও লাদাখ অঞ্চলে লাইন অব কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণরেখা নির্ধারণকারী ঐতিহাসিক সিমলা চুক্তি বাতিলের কথাও বলেছে।
ভারতের সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই সিদ্ধান্তের কারণে পাকিস্তানে চরম বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। সিন্ধু পাকিস্তানের লাইফ লাইন। এই পদক্ষেপ দুই পরমাণু শক্তিধর দেশকে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে। পাকিস্তান কোনোভাবেই তার পানির সরবরাহ বন্ধ করা মেনে নিতে পারে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকের আলোচনায় বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। ভারতের পদক্ষেপের আনুষ্ঠানিক জবাব নিয়ে এই বৈঠক হয়। বৈঠকের পর বিবৃতিতে বলা হয়, পানি পাকিস্তানের জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় জাতীয় স্বার্থ। এটি ২৪ কোটি মানুষের লাইফ লাইন। এর প্রাপ্যতা যেকোনো মূল্যে সুরক্ষা করা হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানের পানির প্রবাহ বন্ধ বা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার যেকোনো প্রচেষ্টা এবং নিম্ন অববাহিকার অধিকার হরণ যুদ্ধ হিসেবে গণ্য হবে। এর পূর্ণ শক্তি দিয়ে জাতীয় ক্ষমতার সম্পূর্ণ পরিসরে জবাব দেওয়া হবে।
ভারতের সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত দুই দেশের পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করেছে। তবে ভারতের ঘোষণার মানে এই নয় যে, দিল্লি তাৎক্ষণিকভাবে পাকিস্তানের পানি সরবরাহ এমনভাবে বন্ধ করতে পারবে, যাতে বর্ষা মৌসুমে পানিপ্রবাহে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ে। এই সময়ে পাকিস্তান তার বেশির ভাগ পানি সঞ্চয় করে।
সিন্ধু চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তান সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাব নদীর পানি ব্যবহারের অধিকার রাখে। এই নদীগুলো বিশাল। মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এই নদীগুলোতে অনেক পানি থাকে। এ সময় বরফ গলে এবং সিন্ধু অববাহিকার নদীগুলোতে পানির প্রবাহ বাড়ে।
ভারতে এই নদীগুলোর উজানে কিছু অবকাঠামো রয়েছে। তবে বিদ্যমান কোনো অবকাঠামোরই চুক্তির অংশ হিসেবে পাকিস্তানে প্রবাহিত পানি ধরে রাখার ক্ষমতা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের টাফটস ইউনিভার্সিটির পরিবেশনীতি বিশেষজ্ঞ হাসান খান বলেন, এগুলো চলমান পানিপ্রবাহের ওপর জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। এগুলোর ধারণক্ষমতা খুবই সীমিত। ভারত যদি সব বিদ্যমান বাঁধের গেট একসঙ্গে বন্ধ করে, তাহলেও কেবল পানির প্রবাহের সময় কিছুটা পরিবর্তন করা সম্ভব।
ভারতকে পাকিস্তানের পানির হিস্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বিঘ্নিত করতে হলে বহু বছর বিপুল অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া কাশ্মীরে জলপথ ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য যেকোনো অবকাঠামো নির্মাণ প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে বন্যা ও অন্যান্য ভৌগোলিক চ্যালেঞ্জের ঝুঁকি রয়েছে।
তবে ভারতের ঘোষণার পর আসল হুমকি হলো—ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা এবং আগামী মাস ও বছরগুলোতে পানিপ্রবাহ বন্ধ করার বিতর্ক থেকে সৃষ্ট বিপদ। সিন্ধু চুক্তি বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি বাধ্যতামূলক চুক্তি। চুক্তিতে একতরফাভাবে এটি স্থগিত করার কোনো বিধান নেই। সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে ভারতের যেকোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য, ঘোষণা বা পদক্ষেপ, এমনকি যদি তা কথার কথা হিসেবেও বলা হয়, তাহলেও পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের ঝুঁকি থাকবে।
এ ছাড়া দিল্লির একতরফাভাবে চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত এই অঞ্চলে একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করেছে, যা ভারতের ওপরই চাপ সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, চীন ভারতের বিতর্কিত পদক্ষেপ অনুকরণ করে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি আটকে দিতে পারে। ব্রহ্মপুত্র ভারতের মিঠাপানির প্রায় ৩০ শতাংশ এবং মোট জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনার প্রায় ৪৪ শতাংশ সরবরাহ করে। চীন ব্রহ্মপুত্রের ওপর বড় বড় বাঁধ নির্মাণ করছে। ভারতের বিতর্কিত পদক্ষেপের কারণে চীন আরও বাঁধ নির্মাণের ন্যায্যতা খুঁজে পেতে পারে।
এ ছাড়া ভারতের এই সিদ্ধান্ত পাকিস্তানকে চীনের সহযোগিতায় কাশ্মীরে দ্রুত বাঁধ নির্মাণে উৎসাহিত করতে পারে। পাকিস্তান ও চীন ইতিমধ্যে ডায়ামার-ভাষা, দাসু ও মোহাম্মদের মতো বিশাল বাঁধ প্রকল্পে সহযোগিতা করছে। ভারতের সাম্প্রতিক হুমকি সম্ভবত এই প্রকল্পগুলোতে আরও বেশি মনোযোগ ও জরুরি অবস্থা সৃষ্টি করবে।
ভারতের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, চীন এই প্রকল্পগুলোর একটি বড় অংশীদার। চীন পাকিস্তানের জলবিদ্যুৎ খাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। দীর্ঘ মেয়াদে ভারত যদি সিন্ধুর পানির পাকিস্তানের হিস্যাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে, আটকে দেয় বা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়, তবে পাকিস্তানের সামরিক মতবাদ অনুযায়ী এর জবাব দেওয়ার অনুমতি রয়েছে। ভারতের মনে রাখা উচিত যে পাকিস্তানকে জল-সংকটে ফেলার সিদ্ধান্ত কেবল যুদ্ধের দিকেই নিয়ে যেতে পারে। কারণ, এটি পাকিস্তানের টিকে থাকার শেষ উপায় হবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বব্যাংক সম্ভবত পর্দার অন্তরালে হস্তক্ষেপ করবে। তারা সিন্ধু চুক্তির সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া রোধ করতে চাইবে, যাতে বৃহত্তর সংঘাত এড়ানো যায়। সর্বোত্তম পরিস্থিতিতে ভারত এই নতুন পরিস্থিতি ব্যবহার করে পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তিটি নতুন করে আলোচনা করতে চাইতে পারে। ভারত বছরের পর বছর ধরে এটি চেষ্টা করেছে এবং নতুন করে দৃঢ়তা নিয়ে এই পথে হাঁটতে পারে।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত না করে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা ও ফোরামের অধীনে নতুন করে আলোচনা করাই একমাত্র কার্যকর পথ। অন্যথায় উভয় দেশকেই একটি বৃহত্তর যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, যার কোনো বিজয়ী থাকবে না।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার পর দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। ওই হামলায় অন্তত ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়। হামলার পর ভারতে প্রতিশোধের তীব্র দাবি উঠেছে। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে এবং উত্তেজনা বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—পাকিস্তানিদের ভিসা পরিষেবা বন্ধ করা, সম্পর্ক অবনমন এবং সবচেয়ে বড় কথা, ঐতিহাসিক সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি একতরফাভাবে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত।
সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি হলো একটি আন্তসীমান্ত নদীর পানি চুক্তি। এটি ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী ভারত ও পাকিস্তান সিন্ধু অববাহিকার পানি ভাগ করে নেয়। গত ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে অনেক সংঘাত, কূটনৈতিক সংকট এবং প্রায় ধারাবাহিক উত্তেজনার মধ্যেও এই চুক্তি টিকে ছিল।
ভারতের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ভারতীয় বিমানের জন্য নিজ আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে এবং সম্পর্ক অবনমন করেছে। পাকিস্তান দুই দেশের মধ্যকার সব দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্থগিত করার হুমকি দিয়েছে। এর মধ্যে দুই দেশের মধ্যে কাশ্মীর ও লাদাখ অঞ্চলে লাইন অব কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণরেখা নির্ধারণকারী ঐতিহাসিক সিমলা চুক্তি বাতিলের কথাও বলেছে।
ভারতের সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই সিদ্ধান্তের কারণে পাকিস্তানে চরম বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। সিন্ধু পাকিস্তানের লাইফ লাইন। এই পদক্ষেপ দুই পরমাণু শক্তিধর দেশকে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে। পাকিস্তান কোনোভাবেই তার পানির সরবরাহ বন্ধ করা মেনে নিতে পারে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকের আলোচনায় বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। ভারতের পদক্ষেপের আনুষ্ঠানিক জবাব নিয়ে এই বৈঠক হয়। বৈঠকের পর বিবৃতিতে বলা হয়, পানি পাকিস্তানের জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় জাতীয় স্বার্থ। এটি ২৪ কোটি মানুষের লাইফ লাইন। এর প্রাপ্যতা যেকোনো মূল্যে সুরক্ষা করা হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানের পানির প্রবাহ বন্ধ বা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার যেকোনো প্রচেষ্টা এবং নিম্ন অববাহিকার অধিকার হরণ যুদ্ধ হিসেবে গণ্য হবে। এর পূর্ণ শক্তি দিয়ে জাতীয় ক্ষমতার সম্পূর্ণ পরিসরে জবাব দেওয়া হবে।
ভারতের সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত দুই দেশের পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করেছে। তবে ভারতের ঘোষণার মানে এই নয় যে, দিল্লি তাৎক্ষণিকভাবে পাকিস্তানের পানি সরবরাহ এমনভাবে বন্ধ করতে পারবে, যাতে বর্ষা মৌসুমে পানিপ্রবাহে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ে। এই সময়ে পাকিস্তান তার বেশির ভাগ পানি সঞ্চয় করে।
সিন্ধু চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তান সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাব নদীর পানি ব্যবহারের অধিকার রাখে। এই নদীগুলো বিশাল। মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এই নদীগুলোতে অনেক পানি থাকে। এ সময় বরফ গলে এবং সিন্ধু অববাহিকার নদীগুলোতে পানির প্রবাহ বাড়ে।
ভারতে এই নদীগুলোর উজানে কিছু অবকাঠামো রয়েছে। তবে বিদ্যমান কোনো অবকাঠামোরই চুক্তির অংশ হিসেবে পাকিস্তানে প্রবাহিত পানি ধরে রাখার ক্ষমতা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের টাফটস ইউনিভার্সিটির পরিবেশনীতি বিশেষজ্ঞ হাসান খান বলেন, এগুলো চলমান পানিপ্রবাহের ওপর জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। এগুলোর ধারণক্ষমতা খুবই সীমিত। ভারত যদি সব বিদ্যমান বাঁধের গেট একসঙ্গে বন্ধ করে, তাহলেও কেবল পানির প্রবাহের সময় কিছুটা পরিবর্তন করা সম্ভব।
ভারতকে পাকিস্তানের পানির হিস্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বিঘ্নিত করতে হলে বহু বছর বিপুল অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া কাশ্মীরে জলপথ ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য যেকোনো অবকাঠামো নির্মাণ প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে বন্যা ও অন্যান্য ভৌগোলিক চ্যালেঞ্জের ঝুঁকি রয়েছে।
তবে ভারতের ঘোষণার পর আসল হুমকি হলো—ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা এবং আগামী মাস ও বছরগুলোতে পানিপ্রবাহ বন্ধ করার বিতর্ক থেকে সৃষ্ট বিপদ। সিন্ধু চুক্তি বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি বাধ্যতামূলক চুক্তি। চুক্তিতে একতরফাভাবে এটি স্থগিত করার কোনো বিধান নেই। সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে ভারতের যেকোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য, ঘোষণা বা পদক্ষেপ, এমনকি যদি তা কথার কথা হিসেবেও বলা হয়, তাহলেও পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের ঝুঁকি থাকবে।
এ ছাড়া দিল্লির একতরফাভাবে চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত এই অঞ্চলে একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করেছে, যা ভারতের ওপরই চাপ সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, চীন ভারতের বিতর্কিত পদক্ষেপ অনুকরণ করে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি আটকে দিতে পারে। ব্রহ্মপুত্র ভারতের মিঠাপানির প্রায় ৩০ শতাংশ এবং মোট জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনার প্রায় ৪৪ শতাংশ সরবরাহ করে। চীন ব্রহ্মপুত্রের ওপর বড় বড় বাঁধ নির্মাণ করছে। ভারতের বিতর্কিত পদক্ষেপের কারণে চীন আরও বাঁধ নির্মাণের ন্যায্যতা খুঁজে পেতে পারে।
এ ছাড়া ভারতের এই সিদ্ধান্ত পাকিস্তানকে চীনের সহযোগিতায় কাশ্মীরে দ্রুত বাঁধ নির্মাণে উৎসাহিত করতে পারে। পাকিস্তান ও চীন ইতিমধ্যে ডায়ামার-ভাষা, দাসু ও মোহাম্মদের মতো বিশাল বাঁধ প্রকল্পে সহযোগিতা করছে। ভারতের সাম্প্রতিক হুমকি সম্ভবত এই প্রকল্পগুলোতে আরও বেশি মনোযোগ ও জরুরি অবস্থা সৃষ্টি করবে।
ভারতের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, চীন এই প্রকল্পগুলোর একটি বড় অংশীদার। চীন পাকিস্তানের জলবিদ্যুৎ খাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। দীর্ঘ মেয়াদে ভারত যদি সিন্ধুর পানির পাকিস্তানের হিস্যাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে, আটকে দেয় বা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়, তবে পাকিস্তানের সামরিক মতবাদ অনুযায়ী এর জবাব দেওয়ার অনুমতি রয়েছে। ভারতের মনে রাখা উচিত যে পাকিস্তানকে জল-সংকটে ফেলার সিদ্ধান্ত কেবল যুদ্ধের দিকেই নিয়ে যেতে পারে। কারণ, এটি পাকিস্তানের টিকে থাকার শেষ উপায় হবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বব্যাংক সম্ভবত পর্দার অন্তরালে হস্তক্ষেপ করবে। তারা সিন্ধু চুক্তির সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া রোধ করতে চাইবে, যাতে বৃহত্তর সংঘাত এড়ানো যায়। সর্বোত্তম পরিস্থিতিতে ভারত এই নতুন পরিস্থিতি ব্যবহার করে পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তিটি নতুন করে আলোচনা করতে চাইতে পারে। ভারত বছরের পর বছর ধরে এটি চেষ্টা করেছে এবং নতুন করে দৃঢ়তা নিয়ে এই পথে হাঁটতে পারে।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত না করে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা ও ফোরামের অধীনে নতুন করে আলোচনা করাই একমাত্র কার্যকর পথ। অন্যথায় উভয় দেশকেই একটি বৃহত্তর যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, যার কোনো বিজয়ী থাকবে না।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
যুক্তরাষ্ট্র চলে যাচ্ছে। রাশিয়ার হুমকি বাড়ছে। ইউক্রেন রক্ষণাত্মক অবস্থায়। নতুন করে প্রতিরক্ষা খাতে বিপুল খরচের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও অস্ত্রের উৎপাদন এখনো যথেষ্ট নয়। তবে ইউরোপীয়রা, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান আপনাদের পাশে আছেন।
৯ ঘণ্টা আগেকাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ছয় দশকের পুরোনো সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে ভারত একরকম পাকিস্তানকে ‘পানিতে মারার’ হুমকি দিয়েছে। এই পদক্ষেপ শুধু কূটনৈতিক নয়, বরং পাকিস্তানের কৃষি, বিদ্যুৎ ও জনজীবনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে। চুক্তি বাতিল হলে দক্ষিণ এশিয়ার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকটে নতুন মাত্রা
১ দিন আগেবিশ্বের দুই বৃহৎ অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ এখন একেবারে স্পষ্ট। চীনা পণ্যে ২৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, আর পাল্টা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে বেইজিং। এতে ভোক্তা, ব্যবসা এবং বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। এমনকি বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কাও তীব্র হচ্ছে।
১ দিন আগেবৈশ্বিক কোম্পানিগুলো যখন তাদের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা চীন থেকে সরিয়ে নিতে শুরু করে, ভারত তখন নিজেদের ‘বিশ্বের কারখানা’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। কিন্তু সেই মুহূর্তটি এখনো আসেনি। অর্থাৎ, ভারত ‘বিশ্বের কারখানা’ হয়ে উঠতে পারেনি।
২ দিন আগে