Ajker Patrika

নদী-খাল পানিশূন্য, বিপাকে চাষি

  • বছরের বেশির ভাগ সময় পানি থাকে না জেলার ৬ নদী ও ৫৪ খালে
  • নদীনালা, খাল-বিলে পানি না থাকায় সেচের পানি নিয়ে চাষিরা বিপাকে
  • অনেক এলাকার নলকূপে পানি না ওঠায় বিপাকে পড়েছে বাসিন্দারা
  • পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করতে নদী-খাল গভীর করে খননের দাবি স্থানীয়দের
শামিম রেজা, রাজবাড়ী 
আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০১: ৪৪
রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন নদ-নদী ও খালে পানি থাকে না বছরের বেশির ভাগ সময়। এতে খেতে সেচ দিতে বাড়তি অর্থ খরচ করে শ্যালো মেশিনের ওপর নির্ভর করতে হয় চাষিদের। শুকিয়ে যাওয়া চত্রা নদীর ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন নদ-নদী ও খালে পানি থাকে না বছরের বেশির ভাগ সময়। এতে খেতে সেচ দিতে বাড়তি অর্থ খরচ করে শ্যালো মেশিনের ওপর নির্ভর করতে হয় চাষিদের। শুকিয়ে যাওয়া চত্রা নদীর ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজবাড়ীর ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ৯টি নদী ও ৫৪টি খাল। একসময় গ্রীষ্মকালে নদী-খালের পানি ব্যবহার করেই কৃষক ফসল ফলাতেন। আবার বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি জমা হতো এসব জলাধারে। এতে সারা বছর পানির চাহিদা মিটত। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে শুধু গড়াই, পদ্মা ও যমুনায় পানি মিলছে।

জেলার চন্দনা, চত্রা, হড়াই, মরাকুমার, হাজরাখালী, সিরাজপুর নদী ও ৫৪টি খাল বছরের অর্ধেক সময় পানিশূন্য থাকে। এর প্রভাব পড়ছে চাষাবাদে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক এলাকার নলকূপে পানিও উঠছে না। এতে বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাসহ পুরো জেলার কৃষক।

সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মা, যমুনা ও গড়াই ছাড়া বাকি ৬টি নদ-নদী ও ৫৪টি খাল পানিশূন্য অবস্থায় রয়েছে; যার প্রভাব পড়েছে কৃষিতে। নদীনালা, খাল-বিলে পানি না থাকায় সেচকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানি। এতে একদিকে যেমন ফসল উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে, তেমনি ভূগর্ভস্থ পানির স্তরেও চাপ পড়ছে।

কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের দোয়ারিয়া গ্রামের চাষি নিরঞ্জন কুমার দাস বলেন, ‘নদীতে ৪ মাস পানি থাকে। মেশিনেও পানি ওঠে না, জমিতে যে পানি দেব, সেই ব্যবস্থাও নেই। নদীতে পানি থাকলে ধান, পাট ও পেঁয়াজখেতে সেচ দেওয়া যাবে। নদীতে আষাঢ় থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত পানি থাকে। নদী যদি গভীর করে খনন করা হয়, তাহলে পানি থাকবে।’

হাতেম আলী নামের আরেক চাষি বলেন, নদীতে পানি নেই, মেশিন থেকেও পানি উঠছে না। এতে কৃষকেরা জমিতে পানি দিতে পারছেন না। এমনকি নলকূপেও পানি উঠছে না। যে জমিতে ৫০ মণ পেঁয়াজ হবে, পানির অভাবে সেই জমিতে ২০ মণও পেঁয়াজ হচ্ছে না। ফসল উৎপাদন করা কৃষকের খুবই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মেশিন দিয়ে পানি ওঠাতে গেলে খরচ বেশি হয়ে যাচ্ছে।’

চন্দনি ইউনিয়নের চাষি ফিরোজ শেখ বলেন, ‘আমাদের এখান দিয়ে চত্রা নদী গেছে। এই নদীতে এখন পানি নেই। আষাঢ় মাসে নদীতে পানি আসে। চার-পাঁচ মাস পানি থাকে। এখন শুষ্ক মৌসুমে ফসলের খেতে সেচ দিতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। সেচের মেশিন দিয়ে পানি খুবই কম উঠছে স্তর নিচে নেমে যাওয়ায়। নদী-খালে পানি থাকলে কৃষকের উপকার হতো। সারা বছর পানি থাকার জন্য খনন দরকার।’

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. গোলাম রাসুল বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে পদ্মা নদীতে যখন পানি থাকে না, তখন ছোট নদী ও খালগুলো পানিশূন্য থাকে। এতে করে কৃষিতে সমস্যা হচ্ছে; বিশেষ করে পাংশা, বালিয়াকান্দি ও জেলা সদরের কৃষকেরা সেচপাম্পেও পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছেন না।’

রাজবাড়ী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু জাকারিয়া বলেন, ‘নদীতে নাব্যতা একদমই নেই। একসময় পানির আধার ছিল নদী, খাল, বিলগুলো। বর্ষাকালে বৃষ্টি থেকে আমরা যে পানি পেতাম, সেই পানি তো ধরে রাখা যাচ্ছে না। ওই পানি ধরে না রাখার কারণে যে পানি ভূগর্ভে যাওয়ার কথা, সেটা যাচ্ছে না। এ জন্য আমরা প্রতিবছর ভূগর্ভ থেকে যে পানি তুলছি, সে পরিমাণ পানি রিচার্জ হচ্ছে না; যে কারণে সংকট দেখা দিচ্ছে। যদি নদীগুলো খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে পারি, খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি রাখতে পারি, তাহলে অনেকাংশে এই সংকট কেটে যাবে।’

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এম এ শামীম আজকের পত্রিকাকে বলেন, পদ্মা, যমুনা ও গড়াই ছাড়া জেলায় মোট ৯টি নদী রয়েছে। বড় তিনটি নদীতেও শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর কম থাকে। এ সময় অন্য ছোট নদীগুলোর পানির স্তর আরও অনেক নিচে থাকে; যে কারণে শুষ্ক মৌসুমে ছোট নদীগুলোয় পানিপ্রবাহ পাওয়া যায় না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত