Ajker Patrika

অবৈধ বাহনে দুর্ঘটনা, দেড় মাসে নিহত ১২

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি  
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮: ৪৯
সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল এলাকায় মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ যানবাহন। ছবি: আজকের পত্রিকা
সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল এলাকায় মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ যানবাহন। ছবি: আজকের পত্রিকা

সিরাজগঞ্জে মহাসড়কে অবৈধ যানবাহনের দৌরাত্ম্যে বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য ভারী যানবাহন চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। যমুনা সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে দেখা গেছে, রীতিমতো সিএনজিচালিত অটোরিকশা, নছিমন, করিমন ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দখলদারত্ব। চালকেরা মানছেন না সড়ক আইন। যে যার মতো করে মহাসড়কে উঠে পড়ছেন। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনা।

জানা গেছে, গত দেড় মাসে হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা এলাকায় অন্তত ১৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ১২ জন। এরমধ্যে অধিকাংশ দুর্ঘটনা-ই অবৈধ এসব যানবাহনে।

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা ও যমুনা সেতু সূত্রে জানা গেছে, যমুনা সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা সিরাজগঞ্জের আওতাধীন মহাসড়ক রয়েছে ১০৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে হাটিকুমরুল-যমুনা সেতু টোল প্লাজা ২২ কিলোমিটার, হাটিকুমরুল-নাটোর টোল প্লাজা ২৮ কিলোমিটার, হাটিকুমরুল-চান্দাইকোনা ২১ কিলোমিটার, হাটিকুমরুল-বাঘাবাড়ী ঘাট ৩৪ কিলোমিটার মহাসড়ক। যমুনা সেতু টোল প্লাজা থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত এই সংযোগ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৭-১৮ হাজার যানবাহন চলাচল করে। ঈদের আগে এ সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এই মহাসড়কে বিনা বাধায় চলছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, নছিমন, করিমন ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এসব বাহনের অনেকটিতেই নেই ঠিকঠাক ব্রেক, সিগন্যাল লাইট, লুকিং গ্লাস। এ কারণে বিপাকে পড়েন বাস-ট্রাকের চালকেরা। এসব যানবাহন একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে কখনো মাঝসড়ক দিয়ে, আবার কখনো উল্টোপথে চলাচল করছে। ফলে সড়কের শৃঙ্খলা ব্যাহত হচ্ছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশকেও।

ঢাকাগামী আরবি ট্রাভেলসের চালক আব্দুল মালেক বলেন, মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ। অবৈধ নছিমন-করিমন, অটোরিকশা এমনভাবে চলে, একটি গাড়ি ওভারটেক করতে গেলে তারা পেছনে খেয়াল করে না। এত বেশি অবৈধ তিন চাকার যানবাহন চলে করে, যে কারণে প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। তিন চাকার যানবাহনের কারণে ভারী যানবাহন চলাচল কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

ফরহাদ এক্সপ্রেসের চালক হৃদয় বলেন, নছিমন-করিমনের সিগন্যাল লাইট ও হর্ন নেই। যে কারণে বোঝা যায় না পেছনে গাড়ি আছে কি না। তাদের কোনো ট্রেনিং নেই। যে যার মতো গাড়ি তৈরি করে মহাসড়কে নামছে। প্রকাশ্যে অবৈধ নছিমন-করিমন-অটোরিকশা চলছে, কেউ বাধা দিচ্ছে না। তাদের দখলে পুরো মহাসড়ক। যেমন খুশি তেমনভাবে চালাচ্ছে। তাদের রোধ করতে হবে। তা না হলে দুর্ঘটনা বেড়েই চলবে। মানুষের মৃত্যুর মিছিল লম্বা হবে।

ঢাকাগামী অভি ট্রাভেলসের চালক আসলাম হোসেন বলেন, সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, নছিমন, করিমন ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দৌরাত্ম্য বেড়েছে। এসব অবৈধ যানবাহনের কারণে ব্যাহত হচ্ছে যানবাহন চলাচল। চালকেরা দক্ষ নন, তাঁদের প্রশিক্ষণও নেই। তাঁদের কারণে ভারী যানবাহনকে সড়কে ব্রেক দিতে হয়। গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।

নছিমন চালক মানিক বলেন, ‘জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংসার চালাতে মহাসড়কে আসতে হয়। যাত্রীরা আসতে চায়। আমরা কী করব। স্ত্রী-সস্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে বাধ্য হয়ে মহাসড়কে আসতে হচ্ছে।’

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ বলেন, ‘সড়কে যেন অবৈধ যানবাহন চলাচল না করে, এজন্য হাইওয়ে পুলিশ তৎপর রয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছি। জরিমানাও করছি। বেপরোয়া গতির কারণেই মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটে। আমরা গতি নিয়ন্ত্রণেও কাজ করছি। চালক-মালিকসহ সব মানুষ সচেতন হলেই দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত