Ajker Patrika

বগুড়ায় বাঙালি নদীর ওপর সেতুর অভাবে দূর্ভোগে লাখো মানুষ 

আরিফুর রহমান মিঠু, শাজাহানপুর (বগুড়া)
আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২১, ১৬: ২৮
বগুড়ায় বাঙালি নদীর ওপর সেতুর অভাবে দূর্ভোগে লাখো মানুষ 

বগুড়া শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সামনে বাঙালি নদীর ওপর সেতুর অভাবে লক্ষাধিক মানুষকে নদী পারাপারে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেতু না থাকায় শেরপুর উপজেলার সুঘাট, ফুলজোড়, চোমরপাথালিয়া, দড়ি হাসড়া, খিদির হাসড়া, চকনশি, সূত্রাপুর, মেচকান্দিসহ অন্তত ১৫টি গ্রামের বাসিন্দাদের নদী পারাপারের একমাত্র ভরসা ডিঙি নৌকা।

দুই পাশে পাকা সড়ক থাকলেও নদীতে সেতু না থাকায় শেরপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ধুনট উপজেলা এবং সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার লাখো মানুষ অন্তত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ ঘুরে বিকল্প সড়কে শেরপুর, বগুড়া ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করছেন। এতে সময় ও যাতায়াত খরচ দুটোই বেশি গুনতে হচ্ছে। কৃষি পণ্য পরিবহনেও গুনতে হচ্ছে বাড়তি খরচ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাঙালি নদীর উভয় পাশে পাকা সড়ক। একটি বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কের শেরপুর উপজেলার মীর্জাপুর বাজার থেকে শুরু হয়ে সুঘাট হয়ে ধুনট উপজেলার মথুরাপুর গিয়ে যুক্ত হয়েছে। অপর পাকা সড়কটি বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কের ছোনকা বাজার থেকে শুরু হয়ে বাঙালি নদীর অপর পাশে দিয়ে সুঘাট হয়ে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলায় গিয়ে শেষ হয়েছে। এই সড়কের ওপারে সুঘাট ইউনিয়ন পরিষদ ছাড়াও সুঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুঘাট উচ্চবিদ্যালয়, সুঘাট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, পোস্ট অফিস, সুঘাট বাজার, মাদ্রাসা, ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত কিন্ডার গার্টেন স্কুলসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নদীর এ পারের মানুষকে নদী পারাপার হয়ে সুঘাট বাজারে যেতে হয়। স্বাধীনতার পর থেকেই এলাকাবাসী নদী পারাপারে একটি সেতু নির্মাণের জন্য দাবি করে আসছেন।

সেতুর দাবির কথা উঠে আসে সুঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাইদের কথাতেও। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, 'নদী পারাপারে একটি সেতু নির্মাণ জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি। সেতুটি হলে এই এলাকার লাখো মানুষের নদী পারাপারের দীর্ঘ দিনের ভোগান্তির অবসান হবে। এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হবে। কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। জাতীয় অর্থনীতিতে বেশি অবদান রাখতে পারবেন স্থানীয় কৃষক। মানুষের সময় সাশ্রয় হবে, পরিবহন খরচও বাঁচবে।

আবু সাঈদ আরও বলেন, বগুড়ার শেরপুর ও ধুনট উপজেলা ছাড়াও সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার অসংখ্য মানুষের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে শেরপুর এবং বগুড়া জেলা শহর ছাড়াও রাজধানীতে যাতায়াত ভোগান্তির অবসান হবে। সেতুটি হলে মাত্র ২০ মিনিটেই মির্জাপুর বা ছনকা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ঢাকা বা বগুড়ার বাসে উঠতে পারবেন। 

সুঘাট ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মনিরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ খেয়া নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হচ্ছেন। বর্ষা এলেই দূর্ভোগ বাড়ে। কৃষি পণ্য হাটে নিতে বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়। খেয়া নৌকা কম, জরুরি কাজে নদী পারাপারে নৌকা পাওয়া যায় না। নৌকা পেলে মাঝি থাকে না। ফলে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয় এলাকার কয়েকটি গ্রামের মানুষকে।

সুঘাট ইউনিয়নের ফুলজোড় গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান (৬৫) বলেন, ২০ গ্রামের লাখো মানুষের দুঃখ এখন এই নদী। নদীর ওপর সেতুর জন্য কত অপেক্ষা, তবুও সেতু নির্মাণের খবর নেই। ফুলজোড় গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন (৫০) বলেন, বাপ দাদা কাল থ্যাক্যা বৈঠা ঠ্যাল্যা নদী পারাপার হচ্চি। দ্যাশত কতশত সেতু হইচ্চে। খালি আমাগারে নদী পারাপারে কষ্ট শ্যাষ হচ্চেনা।'

নদী পারাপারের একমাত্র ভরসা ডিঙি নৌকাচোমর পাথালিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম খান (৪০) আজকের পত্রিকাকে বলেন, সেতুটি না থাকায় কৃষি পণ্য বিক্রি করতে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয় এলাকার কৃষকদের। নদী পারাপারে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে তাদের। তিনি আরও বলেন, নদীর এপারে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। ওপারের রোগী বা গর্ভবতী নারীর রাতে জরুরি সেবা নিতে এপারে আসতে হয়। কিন্তু নদী পারাপার হয়ে অসুস্থ রোগীকে জরুরি প্রয়োজনে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেওয়া যায় না।

এলাকাবাসী জানান, নদীর এপারে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। সারা বছর ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হয়ে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হয়। অনেক সময় নৌকা দুর্ঘটনা হয়। এতে সন্তান কে পড়াশোনা করতে স্কুল কলেজে পাঠিয়ে উৎকণ্ঠায় থাকেন অভিভাবক।

সুঘাট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আব্দুর রহিম মুঠোফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, সুঘাট সেতু নির্মাণ খুবই জরুরি। রাতবিরাতে জরুরি সেবা নিতে মানুষ আসতে পারেন না। উন্নত চিকিৎসার জন্য সময় মতো রোগীদের হাসপাতালে নেওয়া যায় না।

জানতে চাইলে শেরপুর উপজেলা প্রকৌশলী নুর মোহাম্মদ মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, সেতু নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন। কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

শেরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো মজিবর রহমান মজনু আজকের পত্রিকাকে বলেন, সেতু নির্মাণের বিষয়টি এলজিইডির অধীনে। 

বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোবাইলে আজকের পত্রিকাকে বলেন, শেরপুর উপজেলায় তিনটি সেতু নির্মাণের জন্য এরই মধ্যে বরাদ্দ অনুমোদন হয়েছে। এর একটি হবে সুঘাটে। করোনা মহামারির কারণে টেন্ডার আটকে আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই সেতুর টেন্ডার হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বৈপ্লবিক পরিবর্তন করার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে

ব্যাংকের চাকরি যায় জাল সনদে, একই নথি দিয়ে বাগালেন স্কুল সভাপতির পদ

৬৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ: ডেলটা গ্রুপের চেয়ারম্যান ফারুকসহ ১৫ জনের নামে মামলা

১ লাখ ৮২২ শিক্ষক নিয়োগ: যোগ্য প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা চলতি সপ্তাহে

‘মুসলিম ফ্রন্টগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করুন, ইন্টেরিম ভেঙে দিন’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত