Ajker Patrika

বৃষ্টিতে তলিয়েছে খেত: ‘আমরা কৃষকেরা ধান করে বিপদ ঘরে ডেকে এনেছি’

আব্দুল বাশির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়া খেতের ধান তুলছেন কৃষক। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের কাকমারির বিলে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়া খেতের ধান তুলছেন কৃষক। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের কাকমারির বিলে। ছবি: আজকের পত্রিকা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে বেশ কিছু এলাকার পাকা ধান এখন পানিতে ভাসছে। কাঁচা ধান মাটিতে নুইয়ে পড়েছে। মিলছে না শ্রমিক। মাঠেই পচে যাচ্ছে কৃষকের সোনালি ফসল। ধান থেকে গজাচ্ছে চারা। বাধ্য হয়ে হাঁটুপানিতে নেমে অনেকে ধান কেটে ঘরে তুলছেন। অনেকে আবার নৌকা ও ভেলাতে করে ডুবা ধান উঁচু স্থানে নিয়ে শুকাচ্ছেন। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন বহু কৃষক। জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে, যাতে তাঁরা প্রণোদনা পান।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলাজুড়ে ২৫৮ মিলি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বশেষ ২৬ মে পাঁচ উপজেলায় গড়ে ১৯ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হেয়ছে। টানা বৃষ্টিতে ১৯৪ হেক্টর জমির ধান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ১৩ হেক্টর জমির ধান পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে ৪৭ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এবার ফলন ভালো হয়েছিল। কিন্তু ভারী বৃষ্টিপাতে কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষক।

জেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের কাকমারির বিল, গোমস্তাপুর উপজেলার শিমলতলা মাঠ, বিল দামুস, গোঙ্গলপুর, রাঙামাটিসহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কিছু কিছু কেটে রাখা ধান জমির আইলে রাখা হয়েছে। আবার কিছু ধান হাঙা (স্তূপ) করে রাখা আছে। অনেকে রাস্তার পাশে উঁচু স্থানে ধান স্তূপ করে রেখেছেন মাড়াইয়ের জন্য। স্তূপ করা ধানে চারা গজিয়ে গেছে।

গোমস্তাপুর এলাকার কৃষক ইব্রাহিম আলীর স্ত্রী রহিমা খাতুন বলেন, ‘পাঁচ বিঘা জমির কেটে রাখা ধান মাঠে পড়ে আছে। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সব ধান ভিজে গেছে। নিচু এলাকা হওয়ায় কিছু কিছু ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। খরাতে ধান পাইঠ (শ্রমিক) কাটলেও এখন তাঁরা আসতে চাচ্ছেন না। আবার এলেও ডাবল জিন (পারিশ্রমিক) চাচ্ছেন। আমরা কৃষকেরা ধান করে বিপদ ঘরে ডেকে এনেছি।’ একই এলাকার বিল দামুস মাঠের কৃষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘খেতের পাশে স্তূপ করে রাখা অনেক ধান ভেসে গেছে। সব ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। শ্রমিক না পেয়ে নিজেই ধান কাটা শুরু করেছি।’

ছয় বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছিলেন রহমত আলী। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘ধান করে এবার খরচ বেশি হয়েছে। আবার কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে আমার সব ধান পানিতে ভাসছে। নামলা (লেট ভ্যারাইটি) ধান হওয়ায় কাটতে পারিনি। এখন শ্রমিক পাচ্ছি না কাটার জন্য। এবার মারা গেলাম। ধান ঘরে তুলতে পারব কি না, তা নিয়ে খুব চিন্তায় আছি।’

শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষক আমজাদ আলী জানান, এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছিল। তিন বিঘার জমির ধান সব জলে ভেসে গেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. ইয়াছিন আলী আজকের পত্রিকাকে জানান, ইতিমধ্যে ৮৪ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। তাই কৃষকের তেমন একটা ক্ষতি হবে না। কৃষি কর্মকতার্রা আরও জানান, টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ধানের কিছুটা ক্ষতি হলেও স্তূপ করা ধান যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খোলা জায়গায় রেখে শুকিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আর এসব ধানের চারা না করারও তিনি পরামর্শ দেন। কারণ এসব ধানের চারা গজাবে না। আর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা উপজেলা কৃষি বিভাগের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। পরে সহায়তা এলে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত