Ajker Patrika

আম ও লিচুর মুকুলের ম-ম ঘ্রাণে মাতোয়ারা

পাবনা ও বিরামপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৪, ১৩: ০০
Thumbnail image

গাছে গাছে মুকুলের সমারোহ। ম-ম গন্ধে মাতোয়ারা চারপাশ। সেই মুকুলে মৌমাছির আনাগোনায় সৃষ্টি হয়েছে আলাদা সৌন্দর্য। রঙিন বন ফুলের সমারোহে প্রকৃতি যেমন সেজেছে বর্ণিল সাজে, তেমনি আম ও লিচুর মুকুলে সেজেছে দিনাজপুরের বিরামপুর ও পাবনার সদর এবং ঈশ্বরদী উপজেলার বেশ কিছু এলাকা। তাই চাষিদের ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি। এখন বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁরা।

পাবনা: জেলার সদর উপজেলা ছাড়াও ঈশ্বরদীর সিলিমপুর, সাহাপুর, রূপপুর, আওতাপাড়া, জয়নগর, চর রূপপুর, তিনগাছা, বাঁশেরবাদাসহ বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে লিচু আবাদ হয়। এখানকার উৎপাদিত লিচু চলে যায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে। এবার অধিকাংশ বাগানে এসেছে লিচুর মুকুল। বর্তমানে পানি, সার, কীটনাশক স্প্রেসহ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটছে চাষিদের। গত বছরের তুলনায় এবার মুকুল বেশি, তাই ভালো ফলন ও দাম পাওয়ার আশা তাঁদের।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বছর পাবনায় ৪ হাজার ৭২১ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৭৮ টন। টাকার অঙ্কে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।

লিচুরবাগান পরিচর্যা করছিলেন আওতাপাড়া গ্রামের লিচুচাষি জসিম উদ্দিন। তিনি জানান, ‘গত বছর দেড় বিঘা জমির লিচুগাছ থেকে লিচু বিক্রি করেছিলাম ৩ লাখ টাকা। এবার যেমন মুকুল দেখছি, তাতে ফলন বেশি হবে।’ আরেক চাষি ফয়েজ প্রামাণিক বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এ বছর গাছে অনেক বেশি মুকুল দেখতে পাচ্ছি। আমরাও খুব আশাবাদী, এবার ফলন আরও ভালো হবে। গত বছরের শেষের দিকে খরায় কিছুটা ক্ষতি হয়েছিল। এবার লাভবান হব বলে আশা করছি।’

এবার লিচুর ভালো ফলন আশা করছে জেলা কৃষি বিভাগও। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. রোকনুজ্জামান বলেন, ‘লিচুচাষিদের পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতায় কাজ করছেন মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চাষিরা গত বছরের তুলনায় বেশি লাভবান হবেন।’

বিরামপুর (দিনাজপুর): আম ও লিচুর উপজেলা হিসেবে পরিচিত উত্তর জনপদের উপজেলা বিরামপুর। মুকুলের ভারে নুয়ে পড়ার উপক্রম যেন প্রতিটি আম ও লিচুগাছ। এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০ শতাংশ গাছেই এসেছে মুকুল। বাগানমালিক ও চাষিদের আশা, বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার আম ও লিচুর বাম্পার ফলন হবে। এখন বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁরা।

জানা গেছে, উপজেলায় ফজলি, বম্বে, খিরসাপাতি, হাঁড়িভাঙ্গা, হিমসাগর, গোপালভোগসহ অন্যান্য জাতের আম ও চায়না-থ্রি, চায়না-২, বেদানা, বোম্বাই ও মাদ্রাজি লিচু চাষের উপযোগী। চাষিরা আগে বিভিন্ন স্থান থেকে চারা সংগ্রহ করে বাগান তৈরি করলেও বর্তমানে নিজেরাই চারা উৎপাদন করেন। এতে সুফলও পেয়েছেন অনেকে।

আম ও লিচু চাষে সফল কৃষক উপজেলার একইর গ্রামের সাহিন বলেন, ‘আমার দুই হেক্টর জমিতে আম ও লিচুর বাগান রয়েছে। সব গাছে মুকুল এসেছে। গত বছর আম ও লিচু থেকে অনেক টাকা আয় করেছি।’ সাহিনের মতো উপজেলার নটকুমারী গ্রামের রাজিবুল আলম, দিওড় বড়খুর গ্রামের আমচাষি এনামুল হকসহ অনেকেই আম ও লিচুর বাগান তৈরি করেছেন। তাঁরা জানান, ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ কম থাকায় এবার কাঙ্ক্ষিত ফলনের আশা করছেন।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় লিচুগাছ রয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার এবং আমগাছ আছে ৮৪ হাজার। গুটি হওয়ার পর থেকে নিয়মিত ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা কৃষিবিদ ও কৃষি কর্মকর্তা ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, বিরামপুর উপজেলার বিরাজমান আবহাওয়া ও মাটি আম ও লিচু চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। এ উপজেলায় ১০৫ হেক্টর আম ও ১১৪ হেক্টর লিচু চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় আম ও লিচুর উৎপাদন গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি পাওয়ার আশা করা যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত