Ajker Patrika

ঈশ্বরদীতে ডায়রিয়ার প্রকোপ পানিদূষণে

  • উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর সংখ্যা সাড়ে ছয় শ ছাড়িয়েছে।
  • আক্রান্তদের ৯৫ শতাংশই ঈশ্বরদী ইপিজেডের, মৃত্যু দুই নারী শ্রমিকের।
খোন্দকার মাহাবুবুল হক, ঈশ্বরদী (পাবনা) 
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ছবি: সংগৃহীত
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ছবি: সংগৃহীত

পাবনার ঈশ্বরদীসহ আশপাশের উপজেলায় ডায়রিয়ার কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবের কারণ জানতে তিন দিন ধরে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ৬ সদস্যের একটি দল ঈশ্বরদীতে অবস্থান করছে।

ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, স্মরণকালের উল্লেখযোগ্য ডায়রিয়া রোগীর ৯৫ শতাংশই রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা ঈশ্বরদী ইপিজেড কারখানার। সর্বশেষ গতকাল বুধবার বেলা ২টা পর্যন্ত ঈশ্বরদীতে নতুন করে ৭২ জন ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। ভর্তি হয়েছে নতুন ২২ জন রোগী। এ ছাড়া ২৯ মে থেকে গতকাল বেলা ২টা পর্যন্ত মোট আক্রান্ত রোগী সংখ্যা ৬৬৬ জন। ডায়রিয়ায় মারা গেছেন দুই নারী শ্রমিক।

ঈশ্বরদী ইপিজেড মেডিকেল সেন্টারে গতকাল সকাল পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন ৫৯২ জন। গতকাল সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছে ২১ জন ডায়রিয়া রোগী। এ হিসাব নিশ্চিত করেছেন ইপিজেড মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক মো. ফয়সাল হোসেন।

হঠাৎ ডায়রিয়া রোগীর হার বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে স্থানীয় চিকিৎসকসহ অনেকেই এটি পানিবাহিত সংক্রমণ বা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার কারণে হতে পারে বলে ধারণা করছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক শাহেদুল ইসলাম শিশির বলেন, পানিদূষণের কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিতে পারে। কারণ, হাসপাতালে যেসব ডায়রিয়া রোগী এসেছে, তারা কারখানার সাপ্লাই পানি পানের কথা বলেছে। ফলে কোনো একটা সমস্যার কারণে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

ডায়রিয়ার চিকিৎসা দেওয়া আরেক চিকিৎসক বলেন, ‘আমি যতগুলো ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা দিয়েছি, তাতে মনে হয়েছে, শ্রমিকদের কারখানার ক্যানটিনে খাওয়ার সুযোগ কম। কারণ, তাঁরা প্রত্যেকেই বাড়ি থেকে খাবার আনেন। তবে খাওয়ার পরে তাঁরা ইপিজেডের সাপ্লাই পানি খেয়ে থাকেন। এখানে ইপিজেডের কেন্দ্রীয় শোধনাগারের মাধ্যমে প্রতিটি কারখানায় পানি সাপ্লাই করা হয়। ফলে শ্রমিকদের দুপুরের খাবার থেকে নয়; বরং পানির কোনো সমস্যার কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে।’ এ ছাড়া তিনি বৃষ্টির কারণে পানির প্ল্যান্টে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার দূষণ প্রভাব ফেলতে পারে বলে তিনি ধারণা করেন।

ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আলী এহসান বলেনন, ‘পানিদূষণের কারণেই ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে বলে ধারণা করছি। কারণ, ডায়রিয়া হচ্ছে পানিবাহিত রোগ। ফলে এখন পর্যন্ত সন্দেহের তির পানিদূষণের দিকে।’

ঈশ্বরদীতে ঢাকা থেকে আসা তদন্ত কমিটির টিম লিডার ডাক্তার এ এইচ এম মোস্তফা কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরেজমিন তদন্ত ও অনুসন্ধানে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। কেন ডায়রিয়ার সংক্রমণ বেশি, বিষয়টি খোঁজার চেষ্টা করছি।’ তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায় আমরা ঈশ্বরদী ইপিজেডের কেন্দ্রীয় পানি শোধনাগার, পানির উৎস, সিস্টেম, স্যানিটারি অবস্থা, কারখানার পানি সংরক্ষণ, ফিল্টার-ট্যাব ব্যবস্থাপনাসহ সবগুলো বিষয় গভীরভাবে অনুসন্ধানে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তা আজকেই (বুধবার) রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য ঢাকা পাঠানো হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ঢাকায় জমা দেওয়ার পরপরই বিষয়টি স্পষ্ট হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত