Ajker Patrika

কোনো দিন ঢাকায়ই আসেননি, আন্দোলনে হত্যা মামলার আসামি কৃষক

নাটোর প্রতিনিধি 
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮: ৪৭
Thumbnail image
মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন মামলায় অভিযুক্ত আজিজ। ছবি: আজেকর পত্রিকা

নাটোরের সিংড়া উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল আজিজ। জীবনের বেশির ভাগ সময় তাঁর কেটেছে গ্রামে কৃষিকাজ করে। তিনি কখনো ঢাকায় যাননি বলে জানিয়েছেন। অথচ তাঁর নাম ঢাকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি হত্যা মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। একই মামলায় ৫০ নম্বর আসামি করা হয়েছে আব্দুল আজিজের চাচা এনায়েত করিম রাঙ্গাকে। ২৯ ডিসেম্বর সিংড়ার বাঁশবাড়িয়া থেকে রাঙ্গাকে গ্রেপ্তার করে সিংড়া থানা-পুলিশ। এই মামলায় তাঁর ভাতিজা আজিজকে হাতিরপুর আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

আজ সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) নাটোর শহরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল আজিজ ও রাঙ্গার স্ত্রী উম্মে ছালমা পাপিয়া এ বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরেন। তাঁরা দাবি করেন, জমিসংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে ফয়সাল তাঁর রাজনৈতিক প্রভাব খাঁটিয়ে তাঁদের নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

পরিবার অভিযোগ করেছে, জমি নিয়ে পারিবারিক বিরোধের জেরে তাঁদের নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত করিয়েছেন রাঙ্গার ভাতিজা ফয়সাল আহমেদ। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা।

কৃষক আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আমি কখনো বঙ্গবন্ধু সেতু পার হইনি, আর ঢাকা তো চিনিই না। অথচ আমাকে ঢাকার হত্যাকাণ্ডের মামলার আসামি করা হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক। ফয়সাল আমার নাম ঢাকায় বসে মামলায় ঢুকিয়েছে। সে ঢাকার ছাত্রনেতা ও সমন্বয়কদের সঙ্গে চলাফেরা করে। আমি এই মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি চাই। তদন্ত করলে সত্য প্রকাশিত হবে যে আমি কখনো ঢাকায় যাইনি।’

রাঙ্গার স্ত্রী উম্মে ছালমা পাপিয়া অভিযোগ করেন, ‘ফয়সালের বাবার বিরুদ্ধে দায়ের মামলা পারিবারিকভাবে আপসের মাধ্যমে প্রত্যাহারের জন্য আমার স্বামী ২৯ ডিসেম্বর সিংড়ার নিজ বাড়িতে এলে ঢাকা থেকে নাটোরের পুলিশ সুপারকে চাপ দিয়ে গ্রেপ্তার করিয়ে নেন। পরে পুলিশ প্রেস রিলিজের মাধ্যমে আমার স্বামীকে ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে প্রচার করে জানায় যে তিনি সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের আন্দোলন চলাকালে নিপীড়ন করেন। অথচ আমার স্বামী আন্দোলন চলাকালে আহত ২০ জন ছাত্রকে নিজ খরচে চিকিৎসা করান। আমরা পুরো ঘটনাকে নাটোরের পুলিশ সুপারকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি।’

তিনি আরও দাবি করেন, ফয়সাল আগেই ছাত্রলীগ করতেন এবং প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের হয়ে নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে অংশ নিয়েছিলেন।

মামলার এজাহার সূত্র জানায়, গত ১৯ জুলাই রাজধানীর সূত্রাপুর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সাগর মিয়া (১৬) নামের এক কিশোরকে মারধর করা হয়। আহত অবস্থায় সাগর ২৪ জুলাই হাসপাতালে মারা যায়। এই ঘটনায় ১১ সেপ্টেম্বর সূত্রাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়, যেখানে প্রধান আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। এই মামলা ঢাকা থেকে করেন বাছিরুল ইসলাম খান নামের এক ব্যক্তি।

মামলায় ৫০ ও ৫১ নম্বর আসামি হিসেবে এনায়েত করিম রাঙ্গা এবং তাঁর ভাতিজা আব্দুল আজিজের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলায় আজিজকে ঢাকা শহরের হাতিরপুল এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা তার পরিবারের দাবি অনুযায়ী সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মামলার বাদী বাছিরুল ইসলাম খানের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

মিথ্যা মামলায় স্বামী রাঙ্গাকে গ্রেপ্তার করার প্রতিবাদে স্ত্রী পাপিয়ার সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
মিথ্যা মামলায় স্বামী রাঙ্গাকে গ্রেপ্তার করার প্রতিবাদে স্ত্রী পাপিয়ার সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসমাউল হক বলেন, ‘আমরা একটি হত্যা মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের পারিবারিক বিরোধ আছে কি না, তা জানি না।’

অভিযুক্ত ফয়সাল আহমেদ ফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি ঢাবি ছাত্র থাকার সময় প্রতিমন্ত্রী ফোন করে তাঁর ক্যাম্পেইনে অংশ নিতে বলেন। আমার পক্ষে তাঁর মতো ব্যক্তির নির্দেশনা অমান্য করা সম্ভব ছিল না। তাই তাঁর পক্ষে ক্যাম্পেইন করেছি। আমি প্রভাব খাটিয়ে ঢাকার কোনো মামলায় চাচা-ভাইদের নাম ঢুকিয়ে দিইনি। তারা দুজন খারাপ মানুষ, যা সবাই জানে। চাচার সঙ্গে বাবার বিরোধ থাকলেও আমার নেই। আমি দেশের জন্য কাজ করতেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়েছি, ক্ষমতার অপব্যবহার করিনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত