Ajker Patrika

খুলনা মহানগর

টেন্ডারবাজির টাকা দিয়ে বিএনপি অফিস সংস্কার

  • ৪১০ জন দরপত্র কিনলেও মাত্র ১৪ জন জমা দেন।
  • বিএনপি নেতা সোহাগ টেন্ডার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন।
কাজী শামিম আহমেদ, খুলনা
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের খুলনার শিরোমনি এলাকার কেন্দ্রীয় পণ্যাগারের পুরোনো পণ্য নিলামে টেন্ডারবাজি এবং এর টাকার একাংশ দিয়ে খানজাহান আলী থানা বিএনপির কার্যালয় সংস্কার ও আসবাবপত্র কেনার অভিযোগ উঠেছে। খানজাহান আলী থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ মোল্লা টেন্ডার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ এবং সংস্কারকাজ তদারকি করছেন বলে বিএনপির একাংশের অভিযোগ। সোহাগ গত মার্চে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই কর্মকর্তাকে ঠিকাদারি কাজের দর বৃদ্ধির জন্য হুমকি দিয়ে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার হয়েছিলেন।

কেন্দ্রীয় পণ্যাগার সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সেখান থেকে ৫৫ ধরনের পুরোনো জিনিস বিক্রির নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। যার মধ্যে ছিল জিনিসপত্র থাকা শিপিং কনটেইনার ১০টি, খালি কনটেইনার ১৩৩টি, ‘ডি-১২’ তার ১২ কিলোমিটার, ‘ডি-১৪’ তার ১২৫ কিলোমিটার, লোহার ড্রাম ৩৪০টি, মিটার ৩২টিসহ অন্য মালপত্র। দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল ২৩ জুন দুপুর ১২টা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিলামে অংশ নিতে প্রায় ৪১০ জন ব্যবসায়ী দরপত্র কিনলেও আশ্চর্যজনকভাবে মাত্র ১৪ জন জমা দেন। পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেন বিএনপির নেতা সোহাগ। তিনি সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ী সুভাষ দত্তকে কাজটি পাইয়ে দেন। বিনিময়ে চক্রটি ৪০ লাখ টাকা আদায় করে। এর অংশ রাজনৈতিক দলের নেতা, পুলিশ, সাংবাদিক, পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা পেয়েছেন। সেই টাকার একটি অংশ দিয়ে বিএনপির কার্যালয় সংস্কার করা হয়েছে। টাকা পাওয়ার সত্যতা কয়েকজন সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী স্বীকারও করেছেন।

এ ব্যাপারে কথা হলে ব্যবসায়ী সুভাষ বলেন, ‘কাজটি আমি পেয়েছি। প্রায় ৮০ লাখ টাকা এবং সঙ্গে ভ্যাট ও ট্যাক্স ইতিমধ্যে অফিসে জমা দিয়েছি।’ সিন্ডিকেটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্বে) মো. আবু সাঈদ জানান, নিলাম নিয়ে অফিসের ভেতরে কোনো বিপত্তি হয়নি। বাইরে কিছু হয়েছে কি না এ বিষয়ে তাঁর ধারণা নেই। এটা তাঁর দেখার বিষয় নয়।

এদিকে স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগে এই অঞ্চলে সরকারি দপ্তরের সব টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এখন নিয়ন্ত্রণ করেন বিএনপির নেতা সোহাগ। তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলের নাম ভাঙিয়ে সব অপকর্ম করে যাচ্ছেন। তিনি ৩ মার্চ খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) শেখ আবু হায়াত ও মো. গোলাম কিবরিয়াকে মোবাইল ফোনে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও হুমকি দেন। একই দিন আবু হায়াতকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। কুয়েটের একটি ঠিকাদারি কাজে ১০ শতাংশের বেশি মুনাফা যুক্ত করে দর কেন নির্ধারণ করা হলো না—এ কারণে ওই দুজনকে হুমকি দেন সোহাগ। এ ঘটনায় ৫ মার্চ মহানগর বিএনপি তাঁকে বহিষ্কার করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরে তাঁর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে সোহাগ বলেন, ‘আমার নাম এলেও আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। এ বিষয়ে আগেও অনেক সাংবাদিক আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হলে মহানগর বিএনপির দপ্তর সেলে যোগাযোগ করলে জানতে পারবেন।’ সেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে কিছুই জানে না বলে জানায়।

টেন্ডারবাজি এবং অর্থ ভাগ-বাঁটোয়ারার একটি অংশ দিয়ে বিএনপির কার্যালয় সংস্কার করা প্রসঙ্গে সোহাগ বলেন, ‘পেট্রোবাংলার গ্যাসলাইন করার সময় অফিসের একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মূলত তারাই সংস্কার করে দিচ্ছে। এখানে আমার কোনো ভূমিকা নেই।’

টেন্ডার সিন্ডিকেট ও বিএনপির কার্যালয় সংস্কার নিয়ে জানতে চাইলে খানজাহান আলী থানা বিএনপির সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান বলেন, ‘সিন্ডিকেট সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই। আমার স্ত্রী অসুস্থ, গতকাল ঢাকা থেকে এসেছি, কাল আবার যাব। যত দূর জানি, পেট্রোবাংলা কাজটি (সংস্কার) করে দিচ্ছে। আসবাবপত্র বা অন্য কিছু সোহাগ দিচ্ছে কি না, আমার জানা নেই।’

যোগাযোগ করা হলে খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা বলেন, ‘টেন্ডার সিন্ডিকেট বা বিএনপি অফিস সংস্কার সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। কোনো অভিযোগও মহানগর বিএনপি পায়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাচার করা ৭৮১ কোটি টাকা ফেরত দিতে চেয়েও জামিন পেলেন না নাসার চেয়ারম্যান নজরুল

জীবন বিলিয়ে দিয়ে উত্তরার মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীদের বাঁচালেন, কে এই মাহরীন চৌধুরী

পাইলটের শেষ বার্তা: বিমান ভাসছে না, নিচে পড়ছে

মেয়ের কফিনে বাবার চুমু

মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীরাই ছিল ৩৭ বছরের মাসুকার ‘সংসার’, যুদ্ধবিমান তছনছ করে দিল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত