Ajker Patrika

মাইলস্টোন স্কুল

পোড়া বই, ছেঁড়া খাতায় সোনামণিদের স্মৃতি

আমানুর রহমান রনি, ঢাকা 
পোড়া বই, ছেঁড়া খাতায় সোনামণিদের স্মৃতি

হায়দার আলী ভবনের সামনে হাজারো মানুষ, তিন পাশে শিক্ষার্থীদের মানবদেয়াল। দূর থেকে হাজার চোখ উঁকি দিচ্ছে ভবনের দিকে। প্রশিক্ষণ বিমানের আঘাতে এফোঁড়-ওফোঁড় হওয়া ভবনের বিশাল জায়গাজুড়ে দেয়ালে ক্ষত। মেঝের নিচে বিশাল গর্ত। সেই গর্তে জমে রয়েছে পানি। ভবনটির সামনে ছড়ানো-ছিটানো শিক্ষার্থীদের পোড়া বই, লেখা খাতার টুকরা। কেউ কেউ সেসব মাটি থেকে তুলে এনে স্মৃতি হাতড়াচ্ছেন। চলছে আফসোস ও হা-হুতাশ।

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের হায়দার আলী ভবনের কাছে গতকাল মঙ্গলবার দিনভর ছিল এমন চিত্র। আগের দিন বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান আছড়ে পড়ে ভবনটির ওপর। এতে গতকাল পর্যন্ত ৩২ জনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে। আহত ও দগ্ধ হয়েছে দেড় শতাধিক। হতাহতদের বড় অংশ শিশু শিক্ষার্থী। বিধ্বস্ত বিমানটির বিখণ্ডিত অংশগুলো সোমবার রাতেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

গতকাল সকালে হায়দার আলী ভবনের সামনে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন নার্গিস পারভিন ও তাঁর চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে মোহাম্মদ আবরার জাহিন। দুর্ঘটনায় জাহিনের এক বন্ধু নিহত হয়েছে।

আগের দিনের ঘটনা মনে করে ছোট্ট জাহিন বলে, ‘মাঠের মধ্যে আম্মুর কাছ থেকে টিফিন খাওয়া শেষ করে আমি ক্লাসের দিকে যাচ্ছিলাম। দু-এক পা এগোতেই দেখলাম, বিমানটা আমার ক্লাসের ভেতরে ঢুকে গেল। আমার বন্ধু মাহীন মারা গেছে।’

জাহিনের মা নারগিস পারভীন বলেন, ‘আমার ছেলেটা বেঁচে গেছে ওই ২ মিনিটের জন্য খেতে বের হওয়ার কারণে। অনেকে বের হতে পারেনি, অনেকে আহত হয়েছে। এটা হৃদয়বিদারক ঘটনা।’

মাঠে কথা হয় মাইলস্টোন কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী মো. রাতুল চোধুরীর সঙ্গে। ঘটনার সময় তিনি হোস্টেলে ছিলেন। রাতুল বলেন, ‘বড় আওয়াজ শুনে আমরা পাঁচ-ছয়জন দৌড়ে এখানে আসি। এসে দেখি, আগুন জ্বলছে দাউ দাউ করে। গ্রিল ভেঙে দগ্ধ শিক্ষার্থীদের বের করা হচ্ছিল। এরপর সেনাবাহিনী আসে, সবাইকে বের করা হয়। একটা প্লেন এসে পড়বে কলেজে এবং এমন হবে, এটা আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি।’

নিহতদের স্মরণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে গতকাল বিশেষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। শুধু প্রধান ফটকের সামনে একটি ব্যানার, ৫ নম্বর ভবনে একটি লম্বা ব্যানার ও হায়দার আলী ভবনের সামনে একটি ছোট ব্যানার দেখা যায়। সেখানে নিহতদের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে।

খোলা হয়নি কোনো শোকবই। নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কোনো বিশেষ জায়গা স্থাপন করা হয়নি। এ নিয়ে অভিভাবকদের অনেককে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়।

রাজধানী ও এর আশপাশ এলাকার বহু মানুষ গতকাল নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে আসে। এতে সকাল থেকে সেখানে ছিল উপচে পড়া ভিড়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সেখানে আসেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত