Ajker Patrika

হাতির পায়ে পিষ্ট কৃষকের স্বপ্ন

মো. জাকিরুল ইসলাম, হালুয়াঘাট
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬: ৩৮
হাতির পায়ে পিষ্ট কৃষকের স্বপ্ন

হালুয়াঘাট উপজেলার ভুবনকুড়া ইউনিয়নের জামগড়া গ্রামের কৃষক মো. ইব্রাহিম (৫০)। ধারদেনা করে বানাইচিরিঙ্গীপাড়া পাহাড়ে ৩০০ শতক জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন তিনি। ফলন ভালোই হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে সোনালি ধান ঘরে তোলার আশায় স্বপ্ন বুনছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ সময়ে ধান ঘরে তোলার স্বপ্ন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে পাহাড়ি বন্য হাতির দল। শুধু ইব্রাহিম নন, সোনালি ধান ঘরে তোলার এমন স্বপ্ন উবে গেছে সীমান্ত এলাকার অর্ধশতাধিক কৃষকের। তাঁদের চোখে এখন শুধুই অন্ধকার।

কৃষক ইব্রাহিম বলছিলেন, ‘৪০ হাজার ট্যাহা ধারদেনা কইরা ৩০০ শতক মাটিত ধান আর পাঁচ শতক মাটিত করলা লাগাইছিলাম। পায়ে পিষ্ট কইরা আর খাইয়া অর্ধেক শেষ কইরা দিছে হাতির দল। পাঁচজনের সংসার চলে খেতের ধানের ওপর। এহন ভাইবা পাই না ভাই। এমন সুন্দর ধান চোখের সামনে নষ্ট করল। শুধু চাইয়া চাইয়া দেখতে অয়। এই হাতির লগে আর কত যুদ্ধ করা লাগব? এহনো কেউ আমাগো খোঁজ নিল না।’

রঙ্গুনপাড়া এলাকার কৃষক চাঁন মিয়া বানাই চিরি পাহাড়ি এলাকায় ১০ শতক জমিতে আমন ধান লাগিয়েছিলেন। গত শুক্রবার রাতে তাঁর জমিতে হানা দেয় বন্য হাতির দল। তিনি বলেন, ‘খেত লাগানোর পর থাইক্কা প্রতিদিন পাহারায় থাকতে অয়। পাহারা দিয়াও কোনো লাভ অইল না। হাতি তাড়ানোর মতো আধুনিক যন্ত্রপাতি আমাগো নাই।’

এ সময় প্রশাসন কোনো সহযোগিতা করেছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৈশাখ মাসে কিছু ডিজেল আর ছোট ছোট লাইট দেওয়া হয়েছিলে। এরপর কখনো প্রশাসনের কেউ দেখতেও আসেনি। 
সরেজমিনে স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিনের বেলা বানাইচিরিঙ্গীপাড়া এলাকার পাহাড়ি জঙ্গলে অবস্থান করছে বন্য হাতির দল। সন্ধ্যা হতেই খাদ্যের সন্ধানে ঢুকে পড়ে লোকালয়ে। হানা দেয় ফসলি জমিতে। পায়ে পিষ্ট করে খেত। এতে ঘুম উবে গেছে আশপাশের বানাইচিরিঙ্গীপাড়া, জখমকুড়া, ধোপাজুড়ি, মহিষলেটি, গোবরাকুড়াসহ দশ গ্রামের বাসিন্দাদের।

কৃষকেরা জানান, সীমান্তে এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। গত কয়েক দিনে ভুবনকুড়া ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক কৃষকের প্রায় ১০০ একর জমির রোপা আমান ধান পায়ে পিষ্ট করে এবং খেয়ে নষ্ট করেছে হাতি। কারও কারও খেত একেবারে বিনষ্ট করেছে। আবার কারও খেত আংশিক নষ্ট হয়েছে।

পাহাড়িদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২৫ বছর ধরে গারো পাহাড়ে বন্য হাতি ও মানুষের লড়াই চলছে। ধান ও কাঁঠাল পাকার মৌসুমে প্রায় প্রতি রাতে বন্য হাতি খাবারের সন্ধানে কৃষিজমিতে ও গ্রামে ঢুকে পড়ে। ১৯৯৫ সালে  ২০-২৫টি হাতির একটি দল ভারতের পিক পাহাড় থেকে দলছুট হয়ে ময়মনসিংহ ও শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে চলে আসে। এরপর হাতির দলটি ফিরে যেতে পারেনি। এরপর বংশবৃদ্ধি হয়ে হাতির সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। প্রতিবছর এই দিনে পাহাড়ের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে চষে বেড়ায় তারা। পাহাড়ের বাসিন্দাদের সমস্যাটি নতুন নয়,  এক যুগের বেশি সময় ধরে হাতির সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে হচ্ছে তাদের।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, এক যুগ ধরে কোনো ফসলই পুরোপুরি ঘরে তুলতে পারেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। ফসল কাটার মৌসুমে সীমান্তে ৩০-৪০ জনের দল নিয়মিত পাহারা দিতে হয়। হাতে মশাল, পটকা ও টর্চলাইট নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটান তাঁরা।

স্থানীয় মিত্র চাম্বুগং (৬২) বলেন, ‘হাতির সঙ্গে যুদ্ধ করার মতো ভালো অস্ত্র নেই। শুধু লাইট ব্যবহার করা হয়। ছোট লাইট দিয়ে হাতি তাড়ানো বড় দায়। সীমান্তে এ হাতি ও মানুষের যুদ্ধ আর কত দিন? আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই।’

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এম সুরুজ আলী বলেন, ‘বর্তমানে এলাকাবাসীর মাধ্যমে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হাতি তাড়ানোর প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত আছে। পরিষদের তহবিল থেকে শিগগিরই বর্ডার বেল্টে বিদ্যুতায়নের ব্যবস্থা করা হবে।’

ফসলি জমির কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে জানতে চাইলে কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসাদুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমরা জেনেছি। সরেজমিনে দেখা হয়নি। কতজন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এ বিষয়ে সরেজমিনে দেখে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা করা হবে।’

এ বিষয়ে হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘সীমান্তে এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। ফসলসহ জানমাল রক্ষায় স্থানীয়ভাবে হাতি তাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি বন বিভাগকে অবহিত করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে জেলা কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।’

প্রায় দুই কিলোমিটার সীমানায় কাঁটাতারের বেড়া না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

পারভেজ হত্যায় অংশ নেয় ছাত্র, অছাত্র ও কিশোর গ্যাং সদস্য

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত