Ajker Patrika

মাছে ভাইরাস সংক্রমণ আর বৃষ্টি-জোয়ারে ডুবেছে ঘের, দুশ্চিন্তায় মাছচাষিরা

ফকিরহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি 
ফকিরহাটে ডুবে যাওয়া সড়কে জাল দিয়ে মাছ ধরছে দুই শিশু। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফকিরহাটে ডুবে যাওয়া সড়কে জাল দিয়ে মাছ ধরছে দুই শিশু। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার মাছে ভাইরাস সংক্রমণ আর জলাবদ্ধতার কারণে মাছচাষিরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তাঁরা বলছেন, ভাইরাসের কারণে মাছ মরছে। সেই সঙ্গে টানা বৃষ্টিপাত ও অস্বাভাবিক জোয়ারে উপজেলার অনেক ঘের, পুকুর, খালের মাছ ভেসে যাচ্ছে। মাছচাষিরা দাবি করছেন, তাঁদের অন্তত কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে জানা গেছে, ফকিরহাটের ভৈরব নদ, মূলঘর ইউনিয়নে চিত্রা নদী ও কালীগঙ্গা নদীর তীরবর্তী নিচু এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অতি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তাঘাট, পুকুর, খাল, মাছের ঘের ও বসতবাড়ি ডুবে গেছে। অনেক জায়গায় পুকুর ও ঘেরে চাষের মাছ ভেসে গেছে। কেউ কেউ ঘরের সামনে পানিতে ডুবে যাওয়া উঠানে ভেসে আসা চাষের মাছ ধরছে। ঘেরের মাছ যাতে বের হয়ে যেতে না পারে, অনেক চাষি ডুবে যাওয়া ঘেরের আইল মেরামতের চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ নেট দিয়ে মাছ আটকানোর চেষ্টা করছেন। এসব চাষি বলছেন, ইতিমধ্যে তাঁদের বেশ ক্ষতি হয়ে গেছে। ঘেরে এখনো যত মাছ রয়েছে, সেটুকু রক্ষার চেষ্টা করছেন তাঁরা।

সাগরে লঘুচাপের ফলে নদী ও খালে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে উচ্চতা বৃদ্ধি, নদীর নাব্যতা হ্রাস, টানা ভারী বৃষ্টি, উপজেলার ১৩টি স্লুইসগেটের ১০টি অকেজো এবং পানি নিষ্কাশনে সুব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

ফকিরহাট মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা ৪৩০টি বাগদা চিংড়ি ঘেরে ভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে। ৬২৫টি চিংড়ি ও সাদা মাছের ঘের ডুবে গেছে ও ডুবে যাওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। প্রায় ৩০০ একর গলদা ও বাগদা চিংড়ির ঘেরের জমি ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মাছচাষিরা বলছেন, ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি। উপজেলার দুই শতাধিক পুকুর, দিঘিসহ ৯ ইউনিয়নের অনেক ঘের তলিয়ে গেছে।

মাছচাষি শেখ মনি, বাবু ফকির, শওকত আলীসহ অনেক ঘেরমালিক জানান, ভাইরাসে মরে যাওয়া বাগদা চিংড়ি খেয়ে উচ্চমূল্যের গলদা চিংড়ি মাছ ‘পঞ্চ’ হয়ে যাচ্ছে। ফলে সেগুলো আর বাজারে বিক্রি করা যায় না। আবার সাদা মাছ ওই চিংড়ি খেলে তাদের বৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তার ওপর জোয়ারের পানি ও বৃষ্টির পানিতে এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ায় ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। চাষিরা জানান, মাছ চাষের জন্য তাঁরা অনেকই ঋণ নিয়েছেন। ভাইরাস ও বন্যার কারণে মাছ চাষ ব্যাহত হওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাঁরা।

এদিকে ফকিরহাট উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা শেখ আছাদুল্লাহ বলেন, ‘মাছ ঘের ও পুকুর থেকে ভেসে গেলেও মৎস্য বিভাগের দৃষ্টিতে ক্ষতি হয়নি। কারণ, মাছগুলো মারা যায়নি। তবে ভাইরাস সংক্রমনের সংকট মোকাবিলায় মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, ব্যানার টানানো ও মাঠপর্যায়ে পরামর্শ সভা চলমান রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত