Ajker Patrika

আতঙ্ক ছড়ালেও ঘূর্ণিঝড় রিমালে বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি সাতক্ষীরা উপকূলে

সাতক্ষীরা ও শ্যামনগর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ মে ২০২৪, ২২: ১০
Thumbnail image

মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ালেও ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সাতক্ষীরার শ্যামনগরসহ উপকূলীয় এলাকায় বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব। নদীতে ভাটার সময় ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানায় আশঙ্কা অনুযায়ী ক্ষতি হয়নি এলাকাটির। 

মধ্যরাতে তিন-চারটি পয়েন্ট দিয়ে জোয়ারের পানি উপকূল রক্ষা বাঁধ ছাপিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করলেও কোথাও বাঁধে ভাঙন বা ধসের ঘটনা ঘটেনি। তবে, উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর ও আশাশুনিতে বেড়িবাঁধ উপচে অর্ধশতাধিক মৎস্যঘের প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।  ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় এলাকায় বেশ কিছু কাঁচা ঘর-বাড়িও ধসে গেছে। 

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সাতক্ষীরার শ্যামনগরসহ উপকূলীয় এলাকায় বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ছবি: আজকের পত্রিকাসাতক্ষীরা-মুন্সিগঞ্জ সড়কে একাধিক পয়েন্টে গাছগাছালি ভেঙে পড়ায় সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ ও স্থানীয় জনতা ভেঙে পড়া গাছগাছালি সরিয়ে ফেলায় ভোররাতে যোগাযোগব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকাসহ সাতক্ষীরা জেলা শহরে বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এদিকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় জনপদজুড়ে মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।    

জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করলেও কোথাও বাঁধে ভাঙন বা ধসের ঘটনা ঘটেনি। ছবি: আজকের পত্রিকাশ্যামনগরের গাবুরার লক্ষ্মীখালী, নেবুবুনিয়া ও বুড়িগোয়ালিনীর মাদিয়া এবং পূর্ব দুর্গাবাটি এলাকার বাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছেছে। এ ছাড়া বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছ উপড়ে পড়ার পাশাপাশি কৈখালী ইউনিয়নের ৩০টিরও বেশি কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

এর আগে রোববার রাত ৯টার দিকে ঘূর্ণিঝড় রিমাল উপকূলীয় অঞ্চলের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানে। এ সময় সুন্দরবনসংলগ্ন নদ-নদীতে ছিল ভাটার প্রবাহ, যার কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাত ১১টার পর থেকে রিমালের প্রভাবে প্রবল ঝোড়ো বাতাস শুরু হয়। এ সময় কয়েক দফা দমকা বাতাসে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের উপকূলবর্তী কৈখালী ও গাবুরার হরিশখালী ও ৯ নম্বর সোরা এলাকার কিছু ঘরের চাল উড়ে যায়।
 
স্থানীয়রা জানান, রাত ১২টার দিকে নদীতে প্রবল জোয়ারের সৃষ্টি হলে শ্যামনগরের গাবুরার নেবুবুনিয়া, নাপিতখালীম, হরিশখালী এলাকার বাঁধ ছাপিয়ে নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। এর আগে ঝড় তীব্র আকার ধারণের আতঙ্কে বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরবর্তী সাইক্লোন শেল্টারে যাওয়ার সময় নাপিতখালী গ্রামের শওকত আলী মৃত্যুবরণ করেন। 

এদিকে রোববার রাতে পোচণ্ড ঝড়ের মধ্যে আটকে পড়া  সুন্দরবনের গোলাখালী গ্রামের ৬০টি পরিবারকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যান রায়নগর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা। এর আগে বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও এসব গ্রামবাসী বাড়ি ছেড়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। তবে রাত ৮টার দিকে ঝড় তীব্র আকার নেওয়ার পাশাপাশি জোয়ারের পানি বাড়ায় আতঙ্কে তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করলে তাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। 

শ্যামনগরের গাবুরার ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম বলেন, রাতে সোরা এলাকার বাঁধ ছাপিয়ে খোলপেটুয়া নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করতে থাকে। এ সময় স্থানীয় গ্রামবাসী নিজ উদ্যোগে বাঁধের ওপর মাটি ফেলে পানির প্রবেশ ঠেকিয়ে দেয়। ইউনিয়নের কিছু কাঁচা ঘর ও মৎস্যঘের ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তাৎক্ষণিকভাবে পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়নি।

ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করা হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকাবুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, উপকূল রক্ষা বাঁধের কোথাও ভাঙন বা ধসের ঘটনা ঘটেনি। তবে মধ্যরাতে তীব্র ঢেউয়ের আঘাতে মাদিয়া এবং পূর্ব দুর্গাবাটি এলাকার বাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছেছে।

এদিকে সুন্দরবনের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বন বিভাগের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

শ্যামনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজিবুল আলম বলেন, রিমালের  আঘাতের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে প্রায় ১৭ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে জড়ো হওয়া লোকজনকে সোমবার সকালেও শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। রাতের জোয়ারের কিছু চিংড়িঘের তলিয়ে গেলেও এখনো ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা যায়নি।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাহ উদ্দীন জানান, বেড়িবাঁধের দুর্বল পয়েন্টে দিনরাত কাজ করা হয়েছে। যে কারণে এখনো পর্যন্ত বেড়িবাঁধে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত