Ajker Patrika

বৃষ্টিতে ধসে গেছে বিকল্প সড়ক, জনদুর্ভোগ চরমে

মিজানুর রহমান নয়ন, কুমারখালী (কুষ্টিয়া)
বৃষ্টিতে ধসে গেছে বিকল্প সড়ক, জনদুর্ভোগ চরমে

ব্যস্ততম পাকা সড়কের জরাজীর্ণ সেতু ভেঙে করা হচ্ছে নতুন পিএসসি গার্ডার সেতু নির্মাণের কাজ। সড়ক কেটে বড় পুকুর করে লাপাত্তা ঠিকাদার। সেই পুকুরের মাটি দিয়ে নির্মিত বিকল্প রাস্তার নেই কোনো সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধক ব্যবস্থা। এদিকে বৃষ্টিতে ধসে গেছে সড়কটি। তবুও প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে গিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে লম্বা যানজট। যানবাহন উল্টে ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে চরম বিপাকে পড়ছে জনগণ।

আজ বুধবার দুপুরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার লালন বাজার-পান্টি বাজার সড়কে এমন অবস্থা দেখা যায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতু নির্মাণের খোঁজ নেই। অথচ সেতু থেকে সড়ক বিচ্ছিন্ন করে পুকুর কেটেছে। পুকুরের মাটি দিয়ে কোনোমতে বিকল্প কাঁচা সড়ক নির্মাণ করে পালিয়েছে ঠিকাদার। হঠাৎ বৃষ্টিতে সড়কের কয়েকটি স্থান ধসে গেছে। এতে জরাজীর্ণ সড়কটি সংকীর্ণ হয়ে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে পারাপার হচ্ছে জনগণ। অনেক সময় ঘটছে দুর্ঘটনা।

সরেজমিনে গিয়ে নির্মাণাধীন সেতু এলাকায় দেখা যায়, দুইপাড়ে প্রায় কয়েক কিলোমিটার যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছে মানুষ। বিকল্প সড়কের কয়েকটা স্থান ধসে গেছে। সেতুর দুইপাড়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে রড, পাথর ও যন্ত্রপাতি রেখেছে। চরম ভোগান্তিতে চলাচল করছে মানুষ।

প্রতিদিনই এই রাস্তায় সৃষ্টি হচ্ছে ব্যাপক জ্যাম। অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারীরাএলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ডাকুয়া নদীর দুইপাড় ঘেঁষে ঐতিহ্যবাহী পান্টি বাজার। উপজেলার দ্বিতীয় শহর বলা হয় পান্টিকে। উপজেলার চাদপুর, বাগুলাট, পান্টি ও যদুবয়রা ইউনিয়নের প্রায় লাখো মানুষ চলাচল করে এই সড়ক দিয়ে। এ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার একাংশ কুষ্টিয়া শহরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে এই সড়ক।

উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পান্টি বাজার এলাকায় ডাকুয়া নদীর ওপর প্রায় ৮১ মিটার পিএসসি গার্ডার ব্রিজের অনুমোদন দেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর। যার চুক্তিমূল্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬ কোটি ৭২ লাখ ৬১ হাজার টাকা। ই-টেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি করার অনুমোদন পায় কুষ্টিয়ার ত্রিমোহনীর ডন-রুমানা-জেভি। চুক্তি অনুয়ায়ী ২০২১ সালের ১৭ আগস্ট কাজ শুরু করে চলতি বছরের ৩০ ডিসেম্বর শেষ করা কথা রয়েছে।

স্থানীয় ভ্যানচালক সিরাজ হোসেন বলেন, বৃষ্টিতে রাস্তা ভেঙে গেছে। গাড়িঘোড়া চলতে পারছে না। তাই জ্যাম বেঁধে গেছে। মানুষের খুব ভোগান্তি হচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসনের দেখা উচিত।

সেতুর সঙ্গে থাকা চা বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে এই পথ দিয়ে। আর ঈদের জন্য আরও বেশি মানুষ চলছে। কিন্তু ঈদের দিনের বৃষ্টিতে সড়ক ভেঙে গেছে। এ ছাড়াও সড়কে সৃষ্টি হয়েছে কাঁদা। এখন আর সড়ক দিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে না। জনগণের চরম ভোগান্তি হচ্ছে। কিন্তু মানুষের দুর্ভোগ দেখার লোক নেই।

নির্মিত বিকল্প রাস্তার নেই কোনো সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধক ব্যবস্থা

পান্টি গোলাবাড়ি বাজারের সভাপতি মো. আব্দুর রশিদ বলেন, ৩/৪ মাস পার হলো সড়ক কাটা হয়েছে। কিন্তু কাজের কোনো খোঁজ নেই। কয়টা মালামাল ফেলে পালিয়েছে ঠিকাদার। ড্রাইভেশন রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। চলাচলের অযোগ্য। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান না হলে ঐতিহ্য হারাবে পান্টি বাজার। ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

পান্টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামিউর রহমান সুমন বলেন, ঈদের দিন থেকে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। ঠিকাদারের অবহেলায় সরকারের উন্নয়ন অম্লান হচ্ছে। জনগণের কাছে বদনাম হচ্ছে সরকারের। সংশ্লিষ্টদের কাছে বিনীত অনুরোধ দ্রুত দুর্ভোগ নিরসন করা হোক।

এ বিষয়ে সেতু নির্মাণকাজের ঠিকাদার ফারুক আহমেদ মোবাইলে বলেন, বৃষ্টিতে বিকল্প সড়ক ধসে গেছে। জনবল সংকটে মেরামতে বিলম্ব হচ্ছে। দ্রুতই মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি আরও বলেন, নির্মাণ এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি রয়েছে। যার কারণে সেতু নির্মাণে দেরি হচ্ছে। আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করা হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহিম বলেন, বিকল্প সড়ক মেরামতের জন্য ঠিকাদারকে বলা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিতান কুমার মন্ডল বলেন, দুর্ভোগ নিরসনের জন্য উপজেলা প্রকৌশলীকে বলা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত